প্রতিদিনের জীবনে আনন্দ খুঁজে পাওয়ার ১১টি সহজ উপায়

Share

১। সুখী হওয়ার জন্য অপেক্ষা করা বন্ধ করুন

জীবন সবসময়ই আপনাকে সুখী হবার জন্য নতুন নতুন সুযোগ দেয়। জীবনকে একটি সেন্ট্রাল স্টেশন মনে করুন,যেখানে ঘড়ির কাটার মত সুখের আবর্তন হয়। হয়ত সুখী হওয়ার সুযোগ ইতিমধ্যে চলে এসেছে।কখনো কখনো সেটা একদম আপনার সামনে। কিন্তু হয়ত কোন কারণে আপনি আপনার দৃষ্টি এর দিকে নিতে পারছেন না এবং খেয়ালও করছেন না।

আপনার চারপাশে যা ঘটছে এগুলো অগ্রাহ্য করে আপনি সুখ অনুভব করতে পারেন,কর্ম উদ্যমী হতে পারেন,এবং এই প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে নিজেকে উপভোগ করতে পারেন। যখন আপনি আপনার চিন্তা ফোকাস পরিবর্তন করে ফেলেন, এর সাথে আপনার দৃষ্টিভঙ্গিরও পরিবর্তন হয়। এর পরিবর্তন ঘটার সাথে আপনার জীবনেও পরিবর্তন আসে। তাই একইসাথে সবকিছুর পরিবর্তন আনুন।

২। এখনই আপনার জীবনে আনন্দ যোগ করুন

আপনি কি দেখতে পাচ্ছেন যে আপনি একটি উষ্ণপ্রধান দ্বীপে বসবাস করছেন। আপনি যখন খুশি ঘুম থেকে উঠেন এবং যা ইচ্ছে তাই করেন। কেউ একজন আপনার জন্য সকালের নাস্তা নিয়ে আসছে। আপনার বারান্দা থেকে আপনি কেবল বিশাল সমুদ্র ও আপনার চরণ যুগল দেখতে পান। এটিই তরুণ এবং অবসরপ্রাপ্তদের জীবন।

আমরা প্রত্যেকেই একদিন সুখী হবার স্বপ্ন দেখি। সেই সময় আসা পর্যন্ত আমরা অতিরিক্ত কাজের চাপ নেই,মানসিক দুশ্চিন্তায় থাকি এবং কম সুখী থাকি। ব্যাপারটা এমন হয়ে দাড়ায় যে, আমাদের স্বপ্ন কোন লটারি ছাড়া পূরণ হওয়া বা বিত্তশালী কারো অনুগ্রহ ছাড়া সম্ভব নয়। এই জীবনের মূল্য কি যদি আমরা তা নিয়ে সুখী না থাকতে পারি।

ভালো খবর হচ্ছে,আপনি এখনি আপনার জীবনে আনন্দ যুক্ত করতে পারেন। কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপের মাধ্যমে আপনি আপনার দুশ্চিন্তা কমিয়ে আনন্দলোকে চলে যেতে পারেন।

৩। আপনার রুটিনে নিজের জন্য সময় রাখুন

আমাদের প্রত্যেকেরই নিজের জন্য কিছু সময় রাখা প্রয়োজন। আপনি হয়ত নিজেকে আবসাদের জন্য সময় দিচ্ছেন। একইসাথে আবার সর্বশেষ ফেলে রাখা অসম্পূর্ণ কাজটার কথাও ভাবছেন।

মনে রাখবেন,আপনি যখনই নিজের জন্য সময় দিচ্ছেন অন্যান্য দুশ্চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলুন। এই সময়টার সর্বোচ্চ কার্যকরী ব্যবহার করার চেষ্টা করুন।

৪। মনকে প্রফুল্লিত রাখুন

আমরা সবসময়ই একটি আনদদায়ক জীবন আশা করি যা আমাদের জীবনকে আরো অর্থবহ করে তুলবে। এই জীবন ইতিবাচক এবং ভালো লাগার শক্তি তৈরী করে, এবং আমাদেরকে অনুপ্রানিত করে ভবিষৎতের দিকে উচ্চ্ আশা নিয়ে তাকিয়ে থাকতে। খাটি আনন্দ অনেক ক্ষেত্রেই ক্ষণস্থায়ী মনে হয়, কিন্তু যদিও আপনি এটি খুব অল্প সময়ের জন্য অনুভব করেন, আপনি চাইলে তা ধরে রাখতে পারেন। আপনি সেটি নিয়ে পরবর্তীতে চিন্তা করে মজাও পেতে পারেন।

৫। দুশ্চিন্তা করা বন্ধ করুন

সুখ ভালোবাসার মতই রহস্যজনক উপায়ে কাজ করে। বিজ্ঞান এবং মনোবিজ্ঞান আমাদের বলে ব্রেইনের রসায়ন আবেগকে পরিবর্তন করে। কিন্তু এই কেমিকেলগুলোকে   সক্রিয় করে তুলতে হলে,আমাদের প্রথমেই অভ্যাস নিয়ে কথা বলতে হবে।

আমাদের চিন্তার মধ্যেই সুখ নিহিত। আপনার চিন্তার ধরণ,প্রতিদিন আপনি কি করছেন বা ভাবছেন-এটিই নির্ধারণ করে দিবে আপনি কতটা সুখী। আপনার চারপাশে যা ঘটছে তা নিয়ে আপনার কিছু করার না থাকলেও,ব্রেইনকে নিজের মতো করে চালানোয় আপনার ভূমিকা আছে।আপনার উপলব্ধির মধ্যে সুখ নয়,বরং তা আপনার মধ্যেই,আপনার অন্তরে।

৬। ক্ষুদ্র বিষয়ের প্রশংসা করুন

আমাদের সকলের এমন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আনন্দের মূহুর্ত থাকে যেগুলো আমরা খেয়াল করি না। বা এগুলোকে আমরা আবশ্যক ভেবে নেই কারণ আমরা শুধুমাত্র বড় সাফল্যই উদযাপনযোগ্য এই সংস্কৃতিতে বড় হয়েছি। কিন্তু এমন যদি হয় যে আমরা ছোট জিনিসগুলো খেয়াল করা ও উদযাপন করার একটা অভ্যাস তৈরি করে ফেলি? আমরা যখন অনেক বড় সাফল্যের জন্য অপেক্ষা করি এবং ভাবি যে এগুলো আমাদের অনেক বেশী প্রশান্তি এবং আনন্দ এনে দিতে পারে, তখন প্রকৃতপক্ষে আমাদের বড় সাফল্য অর্জনের পথে অনেক ছোট ছোট সাফল্য আছে তা একটু খেয়াল করলেই আমাদের অধিক আনন্দ দিতে পারে।

৭। ইতিবাচক চিন্তাধারার মানুষের আশেপাশে থাকুন

একটি বড় সমস্যা হল মানুষ বুঝতে চায় না যে সুখ হল ব্যক্তিগত পছন্দ। কিন্তু আমাদের পছন্দ আমাদের চারপাশে থাকা মানুষের দ্বারা প্রভাবিত হয়। আপনার কাছের মানুষজন যদি জীবনের প্রতি ইতিবাচক হয় তাহলে খুব স্বাভাবিকভাবেই আপনিও তাদের দ্বারা প্রভাবিত হবেন, এবং আপনার সুখ এবং সাফল্য অর্জনের সম্ভাবনা অনেকখানি বৃদ্ধি পাবে।

আমার গবেষণায় আমি দেখেছি, ইতিবাচক সামাজিক সংযোগ দীর্ঘমেয়াদে সুখী হবার অন্যতম পূর্বশর্ত। আপনার জীবনে নতুন একজন ইতিবাচক প্রভাবককে স্বাগত জানানো, আপনার সুখী হবার ক্ষেত্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি নির্বাচন।

৮। বেশী বেশী হাসুন

ব্রেকিং নিউজ: হাসি আপনাকে ভাল রাখতে পারে। হতে পারে এটা খুব বেশী আশ্চর্যজনক নয়। কিন্তু চিন্তা করে দেখুন তো কখন শেষবার আপনি মন থেকে হেসেছেন – হতে পারে অনেক আগে। দায়িত্বের চাপে,বড় হতে হতে আমরা আর  ছোটবেলার মত খিলখিলিয়ে হাসি না।

কিন্তু আমাদের উচিত।হাসি দুশ্চিতা হ্রাস করে, সংক্রমণ-মুক্ততা বৃদ্ধি করে,রক্ত প্রবাহের উন্নয়ন ঘটায় এবং সম্পর্ককে দৃঢ করে।

৯। বেশী বেশী ভালোবাসুন

খরগোস জিজ্ঞাসা করল,কোনটি বাস্তব?

ঘোড়া উত্তর দিল,তুমি যেভাবে সৃষ্টি হয়েছ সেটি বাস্তব নয়। তোমার সাথে যা কিছু ঘটছে সেটাই বাস্তব। 

১৯৯২ সালে মার্গেরি উইলিয়াম তার শিশুতোষ বই ‘দি ভেলভেটিন রাবিট’ বইয়ে একটি জটিল বিষয় নিয়ে লিখেছেন। একটি খরগোস কোনটি বাস্তব সেটি জানতে চাইলে শেষ পর্যন্ত সে শিখে যে,সত্য হচ্ছে এমন কাউকে পাওয়া যে তোমাকে ভালোবাসে এবং বিনিময়ে সেই ভালোবাসা গ্রহন করার সামর্থ্য। 

এই ক্লাসিক দৃষ্টান্ত এবং হৃদয় ছুয়ে যাওয়া শিক্ষা ঘুমাতে যাওয়ার আগে পড়ার জন্য ভালো হতে পারে। কিন্তু শিশু বয়সে আমরা শিখি আসল বা বাস্তব হচ্ছে,স্কুলের পড়ালেখায় মনযোগ দেয়া ,ভাল চাকরি করা,ভাল উপার্জন করা,পরিবারকে নিয়ে থাকা বা অবসরের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া। প্রাপ্তবয়স্ক বয়সে আমরা বুঝি জীবন কেবল ভালোবাসা পাওয়া বা দেওয়ার চেয়ে অধিক জটিল। ঠিক?  

১০। সকল কিছুতে সুখ খুঁজুন

আমি যখনি আমার লক্ষ্যের কোন কিছু অর্জন করি তখন আমি পরম সুখ অনুভব করি। কখনো কখনো তা এক সেকেন্ডেই শেষ হয়ে যায় আবার কখনো তা মিনিট বা ঘন্টা ব্যাপীও থাকে। এটা হচ্ছে সেই মুহূর্ত যখন আমি পরম সুখ অনুভব করি। আমার হাতের আঙ্গুল থেকে শুরু করে পায়ের পাতা পর্যন্ত সুখের ছটা বিকিরণ করতে থাকে। নিজের প্রতি ভালোবাসা চমৎকার অনুভূতি,গর্বের বিষয়। আপনার সম্পূর্ণ চিন্তার পরিবর্তন ঘটবে যখন আপনি অন্যভাবে দেখবেন কোন বিষয়। আপনি সম্পূর্ণ এবং প্রাণবন্ত অনুভব করবেন।

১১। আপনার সুখের জন্য পরিকল্পনা করুন

আমরা অর্থ সঞ্চয় করি,ক্যালসিয়াম গ্রহন করি,ব্যায়াম করি। আমরা মনে করি বৃদ্ধ বয়সে এগুলো আমাদের সুরক্ষিত রাখবে। আমরা যখন ভবিষ্যতের কথা ভেবে এগুলো সংরক্ষন করি তখন সুখের বিষয়টি ভুলে যাই যা আমাদের জীবনযাপনের পরিবর্তন ঘটাতে পারে।

মনোবিজ্ঞানের গবেষণা হতে জানা যায়,জীবনের সন্তুষ্টি এবং ইতিবাচক অনুভূতি একটি স্বাস্থ্যকর এবং দীর্ঘ জীবনের নিশ্চয়তা দেয়।২০১১ সালের ইন্টারন্যাশনাল এ্যাসোসিয়েশন অব অ্যাপ্লাইড সাইকোলজি এর এক রিপোর্টে লীয়নিস বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর এমেরিটাস এডওয়ার্ড দিয়েনের, পিএইচডি., ১৬০টি প্রাসঙ্গিক স্টাডি হতে দেখেন যে,ক্যান্সারের মত রোগগুলোতে যখন ইতিবাচক অনুভূতি উন্নয়ন সাধন করতে না পারলেও, সুখ বা আনন্দ ভালো স্বাস্থ্য ধরে রাখতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে তা প্রমানিত। 

আপনার ভবিষ্যতের জন্য পরিকল্পনা শুরু করুন।

www.success.com সাইটে পূর্বপ্রকাশিত।

আপনি উদ্যমী!
আপনার জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে চান?  

তাড়াতাড়ি সাবস্ক্রাইব করুন।

আমাদের সেরা কনটেন্ট আপনার ইমেইলে পৌছে যাবে প্রতি সপ্তাহে।  

Invalid email address
আপনি যেকোনো সময় আনসাবস্ক্রাইব করতে পারবেন।  

মন্তব্য করুন