নিজেকে আরো জোরালোভাবে উপস্থাপনের ৫টি উপায়

Share

Image Source: youtube.com/World Economic Forum

“একটা চাকরি পাওয়া আমার জন্য প্রায় অসম্ভব হয়ে পরেছে।“ সদ্য পরিচিত এক ভদ্রমহিলা বলছিলেন ব্রেকফাস্টের টেবিলে। “কিছুই করার মতো নেই যেটা আমি করতে চাই, কিছুই নেই।“

যদিও আমি তার অবস্থা বিচার করার কেউ নই, কিন্তু আমার দৃঢ় বিশ্বাস এটি অসম্ভব নয় এবং অবশ্যই কিছু না কিছু আছে যেটা করা সম্ভব। উনি সঠিক জিনিসটি খুঁজে পাননি এই যা। যদিও আমি চেষ্টা করছিলাম তাকে অনুপ্রাণিত করতে, কিন্তু এটাও ভাবছিলাম যে কিভাবে তার কথাগুলো তার নিজের ভবিষৎবাণী হয়ে যেতে পারে।

আমরা যে কথাগুলো এমনি এমনি বলি তার কিন্তু কিছু প্রভাব রয়েছে। এটি যেমন নতুন সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে, আবার সেটি বন্ধ করে দিতেও পারে। এটি একটি সম্পর্ক তৈরি করতে পারে, আবার সেটি নষ্টও করে দিতে পারে। এটি একজন মানুষকে উপরেও যেমন তুলতে পারে, আবার নিচে টেনে নামাতেও পারে।

খুব কম সময়ই আমরা এটা অনুধাবন করতে পারি যে, আমাদের নিজেদের কথাগুলোই আমাদের নিজের বা অন্যের উপর কতোটুকু প্রভাব ফেলতে পারে। যদি বুঝতে পারতাম তাহলে এতো অভিযোগ না করে, অন্যকে অনুপ্রেরণা দিতাম। “এটা অসম্ভব…” “আমি পুরোপুরি নিরাশ…” বা “আমার আর কোন উপায় ছিল না…” এই কথাগুলো কম শোনা যেত, যে শব্দগুলো কিনা আমাদের নিজের ভিতকে দুর্বল করে দেয় এবং ভবিষ্যতকে করে সীমিত।

মনস্তত্ত্ববিদরা বের করেছেন যে, আমরা যে শব্দগুলো শুনি আমাদের অবচেতন মন তার প্রতিটি আক্ষরিকভাবে ব্যাখ্যা করে। যদিও আমরা যা বলি তা আমরা যেই বাস্তবতায় বাস করি তা থেকেই বলি। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এটি একটি নেতিবাচক বাস্তবতা যা কিনা আমাদের নিজের অজানতেই আমাদের সাফল্যগুলোকে খুব সহজেই নষ্ট করে দেয়, কিছু শব্দ যা কিনা আমাদের নিজের মতামতকে শক্তিহীন করে দেয়, আমাদের সমস্যাগুলোকে আরো বাড়িয়ে তোলে, আমাদের নিজের উপর আস্থা কমিয়ে দেয়।

আপনার নিজের শব্দগুলো আপনাকে যে দিকে নিবে, আপনার মন, দেহ ও পরিবেশ অনিবার্যভাবে তা অনুসরণ করবে।

যদি আপনি নিজে নিজের সম্পর্কে ইতিবাচক শব্দ ব্যবহার করেন, যেমন নতুন কিছু শেখার ব্যাপারে বা নিজের লক্ষ অর্জনে বা চাপ সামলানো দক্ষতার ব্যাপারে, এটি অবশ্যই বাহ্যিকভাবে প্রকাশ পাবে। ঠিক বিপরীতভাবে, যদি আপনি ক্রমাগত নিজের অযোগ্যতা নিয়ে কথা বলেন, যা কিনা আপনার হতাশার প্রতিধ্বনি , যা কিনা আপনার উদ্বিগ্নতা বা দুঃখবোধকে বাড়ায়, তাহলে তা আপনার বাস্তবতাকে একটি ছাঁচে ফেলে দিবে। সময়ের সাথে আপনার নিজের শব্দগুলোই আপনার বাস্তবতায় রূপান্তরিত হবে।

এজন্যই এটি খুবই জরুরী যেন আমরা যে শব্দগুলো ব্যবহার করি তার প্রতি আরো মনযোগী হই এবং আরো সতর্ক হই কথা বলার সময়, যেন তা আমাদের শক্তি জোগায় এবং সামনের দিকে আগাতে সাহায্য করে, তা যেন আমাদের অবমুল্যায়ন না করে, দমিয়ে না দেয়।

সত্য বলতে কি অধিকাংশ মানুষই তার নিজের ইতিবাচক পরিবর্তন আনার ক্ষমতাকে মোটামুটি অবমূল্যায়নই করে। যখন সে নিজেকে এবং নিজের পরিস্থিতি বর্ণনা করতে যায়, তখন সে যে সব শব্দগুলো ব্যবহার করে তাতে এটি প্রতিধ্বনিত হয়। সে নিজেকে অসহায় হিসাবে ফুটিয়ে তুলতে চেষ্টা করে, সবকিছু তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে, তার কোন ক্ষমতা বা প্রতিপত্তি নেই কোন কিছু পরিবর্তনের, এভাবে ফুটিয়ে তুলতে চেষ্টা করে। এটি একটি অসুস্থ চক্র, সে নিজেকে অসহায় প্রমানের জন্য নতুন নতুন বাহানা খুঁজে বের করে।

ব্যক্তিগত ক্ষমতায়ন শুরু হয় নিজের অবস্থান সম্পর্কে আত্ম সচেতনতার মাধ্যমে, মনোবিজ্ঞানীদের ভাষ্যমতে “ক্ষমতার বাইরে” এই কথাটি ব্যবহার না করে। নিচের পাঁচটি উপায় বলে দেয়া হল কিভাবে আপনি নিজেকে পরিবর্তন করতে পারেন, নিজের উপর আস্থা বাড়াতে পারেন, নিজের প্রভাব বৃদ্ধি করতে এবং নিজের চাওয়া পাওয়াকে প্রাধান্য দিতে পারেন।

সম্ভাবনার কথা বলুন।

অরভিল এবং উইলবার রাইট যদি কি করতে পারব না তা নিয়ে মাথা ঘামাতেন তবে কিন্তু তারা কখনই আকাশে বিমান উড়াতে পারতেন না। উলটো তারা ক্রমাগত চেষ্টা করেছেন কিভাবে নিজেদের সীমাবদ্ধতাগুলোকে অতিক্রম করা যায়। এটি আপনার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। আপনি নিজে কি চান তার উপর ফোকাস করুন, এমনও হতে পারে আপনি হয়ত এমন কোন সুযোগ খুঁজে পেতে পারেন, যা আগে মিস করে গেছেন। আপনি যদি আপনার পরিস্থিতির নেতিবাচক দিকগুলির উপর ফোকাস করেন, যে জিনিসগুলো আপনি করতে পারবেন না বা যা করতে চান না, শুধু তা নিয়েই ভাবেন,  তাহলে এটি কেবল আপনার হতাশাকে বাড়িয়ে তুলবে, আরো নেতিবাচক আবেগের সৃষ্টি করবে এবং আপনার সময় এবং শক্তি অপব্যবহার করবে, যা কিনা আপনি  আরো গঠনমূলকভাবে ব্যবহার করাতে পারতেন।

উদাহরণ স্বরূপ:

  • যদি আপনার আরো সময়ের প্রয়োজন হয়, গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো সম্পর্কে কথা বলুন, যা কিনা আপনি একদিনে, সপ্তাহে বা এক বছরের মধ্যে করতে চান (আপনি কতোটা ব্যস্ত তা নয় কিন্তু)।
  • যদি আপনি আরো সাফল্য চান, আপনার আকাঙ্খার কথা বলুন এবং আপনি কি কি করতে পারেন তা বাস্তবতায় রূপান্তর করুন (আপনার সমস্যাগুলি কত বড় তা নয়)।
  • যদি আপনি আরো ক্ষমতা এবং প্রভাবশালী হতে চান, আপনার যে ক্ষমতাগুলো ইতিমধ্যেই আছে, তা দিয়ে কি কি করতে পারেন তা সম্পর্কে আলোচনা করুন (কেউ আপনাকে গুরুত্ব দেয় না তার সম্পর্কে নয়)।

কিছু করতে শুধু  “চেষ্টাকরবেন না।

যদি রাষ্ট্রপতি কেনেডি বলেতেন, “চলুন চেষ্টা করি চাঁদে মানুষ পাঁঠাতে”, তবে সম্ভবত আমরা এখনো চেষ্টাই করে যেতাম। আমরা যে পরিবর্তনগুলো করতে চাই, তা অর্জন করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞার দরকার আছে।

“আমি চেষ্টা করবো” কথাটি আমাদের সিদ্ধান্তহীনতা এবং দ্বিমুখিতা প্রকাশ  করে। বলার অপেক্ষা রাখে না “আমি করবই” কথাটি শুধু নিজের জন্যই নয়, যে কেউ, যে কিনা আপনার কথাটি শুনছে বুঝে যাবে যে আপনি গেম চেঞ্জ করতে চলেছেন, আপনি যা করতে চান তা করেই ছাড়বেন এবং খেলা শেষ করার অপেক্ষায় আছেন।

আত্মবিশ্বাসের সাথে প্রতিজ্ঞা করাতে হবে যে আমি পারবই।

নিজের সব শক্তিকে সঠিক ভাবে কাজে লাগাতে চেষ্টা করুন অথবা নিজের আশেপাশে মানুষগুলোকে  এমনভাবে কাজে লাগান যা কিনা আপনাকে ভালো ফলাফল এনে দিবে। শুধু আশা করে বসে থাকলে বা “ভালো কিছুর জন্য আশা করছি” বললেই হবে না । চেষ্টা করুন!

কখনোই না বলবেন না।

১৯৫৪ সালে রজার ব্যানিস্টার যখন ৪ মিনিটের মধ্যে এক মাইল দৌড়ে শেষ করে ছিলেন, তার আগে সবাই এটি শারীরিকভাবে অসম্ভব বলে মনে করতো। এরপর আরো কয়েকজন এটি চেষ্টা করেছিল এবং ব্যানিস্টারের সেই “অসম্ভব” কাজটির  ছয় সপ্তাহের মধ্যে, জন ল্যান্ডি নামের আরেকজন প্রায় এক সেকেন্ডের ব্যবধানে রেকর্ডটি ভেঙ্গেছিল।

আসলে আমাদের কারোই  কোন ধারণা নেই আমাদের দ্বারা কি করা সম্ভব বা সম্ভব নয় এই ব্যপারে। অনুরূপভাবে, যখন আমরা নিজেকে বর্ননা করি, তখন আমরা নিজেকে আটকে ফেলি নিজের তৈরি করা শব্দের দেওয়ালের মধ্যে, যা কিনা  “ভাষাগত ফাঁদ” নামে পরিচিত।

কখনই কৈফিয়ৎ দিবেন না নিজের মতামতের জন্য।

রুশ দার্শনিক মিখাইল বাখতিন  “ডাবল ভয়েস ডিসকোর্স ” শব্দটি উদ্ভাবন করেছেন, এর ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেছেন, মানুষ মূল ব্যাপারে কথা বলার আগে সব সময় একটা ভুমিকা দেওয়ার চেষ্টা করে অন্যের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার থেকে বাঁচতে।

কিছু উদাহরণ দেয়া যাক, যেমন- “আমি জানি, আমি হয়তো ভুল বুঝতে পারি, কিন্তু …” অথবা “আমি আগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি,আপনারা হয়তো দ্বিমত প্রকাশ করবেন, কিন্তু আমি ভাবছিলাম, হয়তো …” ইত্যাদি।

তবে আশ্চর্য ব্যাপার,  যে  মহিলারা সম্পর্ক তৈরিতে পটু, তারা কিন্তু সম্পর্ক ভাঙ্গার ক্ষেত্রে উদাসীন, এই ক্ষেত্রে তাদের এই উদাসীনতা পুরুষদের তুলনায় প্রায় চার গুণ বেশি । কিন্তু লিঙ্গ নির্বিশেষে, আপনার মতামত দমিয়ে রাখা কারোই কোন কাজে আসবে না এবং আপনার মতামত যে পরিবর্তন আনতে পারে তা আর হবে না।

৫| লেবেল হওয়া থেকে সতর্ক থাকুন। এটি সীমাবদ্ধতা তৈরি করে।

প্যান্ট্রিতে ব্যবহৃত পাত্রগুলোতে লেবেল খুব কাজের হতে পারে। কিন্তু এটি আপনাকে অবচেতনভাবে নির্ভরশীল করে দিতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, আপনি মাঝে মাঝে অলসতা করেন, এর মানে এই না যে আপনি এটি না করে থাকতে পারবেন না। কোন  কিছুতে ব্যর্থ হয়েছেন, তার মানে এই না যে আপনি পুরোপুরি ব্যর্থ। অথবা আপনার ফ্যাশন সেন্স ভালো নয় বলে আপনি পরিবর্তন হবেন না তা নয়।

যদিও আপনি যেভাবে কথা বলেন, সে অভ্যাসগুলো রাতারাতি পরিবর্তন করা সম্ভব না, স্নায়ুবিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন যে, বারবার অনুশীলনের মাধ্যমে আমাদের মস্তিষ্ককে পুনর্বিন্যস্ত করা যেতে পারে।  আমাদের স্নায়ুতন্ত্র সহজাতভবে নেতিবাচক চিন্তাগুলোকে ইতিবাচক চিন্তা  দ্বারা প্রতিস্থাপন করতে পারে।

আপনি কিভাবে কথা বলেন তা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ন, কিন্তু আপনি পূর্বের অভ্যাসে আবার ফিরে আসতে পারেন, যেটা কিনা খুবই স্বাভাবিক একটা ব্যপার।নিজেকে দোষারোপ করবেন না বা ‘কোন কাজের না’ বলে নিজেকে লেবেল করবেন না। বরং নিজের ভূলগুলোকে মেনে নিন এবং যে ইতিবাচক পরিবর্তনগুলি করতে চান তার উপর ফোকাস করুন।

প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে, আপনি আপনার পছন্দের তিনজন ব্যক্তিকে আনুরোধ করতে পারেন, যখনই আপনি “আমার ক্ষমতার বাইরে” এ জাতীয় কথা বলবেন, তারা যেন আপনাকে থামায়। এটি খুবই কার্যকর একটি পদক্ষেপ হতে পারে আপনার জন্যে।

লেখকঃ মার্জি ওয়ারেল

www.success.com সাইটে প্রকাশিত আর্টিকেলের ছায়া অবলম্বনে লেখা।

আপনি উদ্যমী!
আপনার জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে চান?  

তাড়াতাড়ি সাবস্ক্রাইব করুন।

আমাদের সেরা কনটেন্ট আপনার ইমেইলে পৌছে যাবে প্রতি সপ্তাহে।  

Invalid email address
আপনি যেকোনো সময় আনসাবস্ক্রাইব করতে পারবেন।  

মন্তব্য করুন