৭ উপায়ে চরম দুরাবস্থাতেও নিজের ওপর বিশ্বাস রাখুন

Share

কখনো কি আপনার এমন মনে হয়েছে যে ফুসফুস ফেটে যাচ্ছে?

অথচ মাচু পিচু’তে ওঠার সময় ঠিক এটাই মনে হচ্ছিলো আমার।

প্রাচীন এই নগরীটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২৪০০ মিটারেরও বেশি উঁচুতে অবস্থিত এবং আমাদের দলটি ভোর পাঁচটা থেকেই উপরে ওঠা শুরু করে। অচিরেই আমি আমার দলের পেছনে পড়ে যাই; একা। তখনো আমার ১১০০ মিটারের মতো উঁচুতে ওঠা বাকী।

আমি কখনো ভাবিনি এই যাত্রাটা এতো কঠিন হবে। আমি নিয়মিত শরীরচর্চা করেছি, কিন্তু সেটা এতো উঁচুতে ওঠার জন্য যথেষ্ট ছিলো না। আমি ঠিকঠাক নিঃশ্বাস নিতে পারছিলাম না।

আমার মনে হচ্ছিলো- হাল ছেড়ে দিই। শরীর আর নিতে পারছিলো না। আর ক্লান্ত মন এসব কিছু থেকে রেহাই চাচ্ছিলো।

কিন্তু আমি নিজের ওপর বিশ্বাস রেখেছিলাম। এবং শেষপর্যন্ত ফুসফুস আর হৃদয়কে অক্ষত রেখে ঠিকই চূড়ায় উঠেছিলাম।

সেদিন যখন সামনে এগিয়ে যাবার জন্য ভেতর থেকে সায় পাচ্ছিলাম না, এই সাতটি বিষয় আমাকে সাহায্য করেছিলো। আপনি যদি এমন পরিস্থিতিতে পড়েন, যখন আপনি হাল ছেড়ে দিতে যাচ্ছেন, এগুলো হয়ত আপনাকেও সাহায্য করতে পারে।

) অন্য সবাইকে উপেক্ষা করুন

যাত্রার শুরুতেই মানুষজন আমাকে পার হয়ে যেতে লাগলো। যতবার আমি কাউকে আমাকে ছাড়িয়ে উপরে উঠতে দেখলাম, নিজের উপর বিরক্ত হয়ে উঠছিলাম। কিন্তু যখনই আমি অন্য সবার সাথে আমার যাত্রাকে তুলনা করা বন্ধ করলাম, আমি নিজের উদ্দেশ্য ও কিভাবে সেটা অর্জন করা যায় তা নিয়ে ভালোভাবে ভাবার সুযোগ পেলাম।

নিজের স্বপ্নের পথে হাঁটার সময় অন্যরা কিভাবে সহজে নিজ নিজ লক্ষ্য পূরণ করে ফেলছে এটা সহজেই আপনাকে বিভ্রান্ত করতে পারে। খুব সহজেই নিজের উন্নতি নিয়ে বিরক্ত ও অসন্তুষ্ট হতে পারেন আপনি। কিন্তু লক্ষ্য পূরণের ব্যাপারে অন্যদের বেলায় কি ঘটছে সেটা আপনার জন্য সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক, বিশেষ করে যদি তা আপনার এগিয়ে যাওয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করে তোলে।

কঠিন সময়ে আপনাকে নিজের সবটুকু শক্তি একসাথে করতে হবে। এবং নিশ্চিত করুন যে সেগুলো আপনাকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে পারছে।

) নিজের সবচেয়ে বড় সমর্থক হন

যখন আমি মাচু পিচু’র পথে যাত্রা শুরু করলাম, আমি একা ছিলাম না। কিন্তু ১০ মিনিটের মাথায় আমি একাকী পেছনে পড়ে গেলাম। প্রথমদিকে আমাকে একা ফেলে যাবার জন্য সঙ্গীদের উপর কিছুটা মন খারাপ হলো। কিন্তু তারপরই আমি উপলব্ধি করতে পারলাম যে- আমার বোঝা একান্তই আমার, সেটা অন্য কারো নেয়ার কথা না।

সাহস ও প্রেরণা দেয়- আশেপাশে এমন মানুষজন থাকাটা বেশ সৌভাগ্যের ব্যাপার। কিন্তু মনে রাখতে হবে- এমন সাহচর্য পাওয়াটা ভালো, কিন্তু খুব জরুরি কিছু না। এই শিক্ষাটি আমাকে নিজের ভেতরে স্থির হতে ও সামনে এগিয়ে যাবার শক্তি-সাহস জড়ো করতে কাজে দিয়েছিলো। তারপর থেকে আমি প্রতি পদক্ষেপে নিজেকে সাহস ও বাহবা দিয়ে যেতে লাগলাম।

কখনো সাফল্যের পথে আপনাকে একা হাঁটতে হবে। আপনি যদি ঐ অবস্থায় নিজেকে আবিষ্কার করেন, তবে সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য আপনাকেই পথ খুঁজে বের করতে হবে।

) থামুন ও ছোট ছোট সৌন্দর্যগুলো উপভোগ করুন

সূর্য ওঠার আগেই আমি উঁচুতে ওঠা শুরু করেছিলাম। কিন্তু আমি যতই উঠতে লাগলাম, সূর্যটা পাহাড়ের আশেপাশে উঁকি দিতে শুরু করলো। আমার আশেপাশের সবকিছু যেন ঝলমল করতে শুরু করলো। এটা ছিলো অসম্ভব সুন্দর একটা ব্যাপার। জিরিয়ে নেয়ার ফাঁকে ফাঁকে প্রকৃতির এই রূপ দেখে চমৎকৃত হচ্ছিলাম। আর সেই মুহূর্তে নিজের কষ্ট নিয়ে ভাবার চেয়ে বরং প্রকৃতির এতো কাছাকাছি থাকতে পারার কৃতজ্ঞতা নিয়েই বেশি ব্যস্ত ছিলাম আমি।

হ্যাঁ, নিজের সব মনোযোগ আর শক্তি একত্র করলে লক্ষ্যে পৌছানোটা সহজ হয়। কিন্তু শুধু নিজের গন্তব্যের দিকেই তাকিয়ে থাকলে আপনি নিজের যাত্রাপথের সৌন্দর্য থেকে বঞ্চিত হবেন। পথের নতুন অভিজ্ঞতা ও চমকগুলো আপনার সামনে এগিয়ে যাবার জ্বালানি হিসেবে কাজ করে।

) পরবর্তী পদক্ষেপে মনোযোগ দিন

উঁচু থেকে আমি কতটা দূরে- এই চিন্তাটা আমাকে হতাশ করে তুলছিলো। তাই আমি আমার লক্ষ্যকে ছোট ছোট ভাগে ভাগ করলাম যেন আমার পরের পদক্ষেপগুলো আরো সহজ হয়। ‘আর শুধু একটা পদক্ষেপ’, আমি ভাবলাম। হ্যাঁ, এখন ঐ পাথরগুলোর উপর উঠে পড়ো। ঠিক আছে, এখন যদি তুমি ঐ বেঞ্চিটার কাছে যেতে পারো, তুমি থেমে কিছুটা বিশ্রাম নিতে পারবে।

আপনার লক্ষ্য যদি খুব বড় হয়, আপনার কাছে এটাকে অসম্ভব বলে মনে হবে। আর এটা আপনার চলার গতিকে ধীর করে দিতে পারে। তাই লক্ষ্যকে ছোট ছোট অংশে ভাগ করার মাধ্যমে আপনি গতি ও সাহস দুইই বাড়িয়ে নিতে পারেন।

) সময় নিয়ে অহেতুক চিন্তা বাদ দিন

যাত্রা শুরুর আগে আমি পড়েছিলাম যে, অধিকাংশ মানুষের মাচু পিচু’র উপরে উঠতে ৪৫ থেকে ৬০ মিনিট লাগে। কিন্তু আমার বেলায় এটা লম্বা হচ্ছিলো। আর উপরে ওঠার ঐ অনুমিত সময়ের কথা মনে হতেই আমি বারবার নিজের ওপর বিরক্ত হয়ে উঠছিলাম। কিন্তু কেউই আমার কতক্ষণ লেগেছিলো সেটা নিয়ে মাথা ঘামায়নি। এবং আমি বুঝলাম আমারও সেটা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলার দরকার ছিলো। কারণ আমার উপরে উঠতে পারাটাই ছিলো একমাত্র ব্যাপার।

নিজের লক্ষ্যের দিকে যাওয়ার সময় ঘড়ির দিকে তাকাবেন না। নিজেকে অন্য কিছু বা কারো সাথে মাপতে যাবেন না। এটা আপনাকে সেই মুহূর্তের করণীয় কাজ থেকে দূরে ঠেলে দেবে।

) পালানোর পথ খুঁজবেন না

নিজের পায়ে পাহাড়ে না চড়েও মাচু পিচু যাওয়া যায়। নিজের শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রম কমাতে আপনি খুব সহজেই বাসে করে চূড়ায় উঠতে পারেন। যাত্রাপথের শুরুতে আমিও উপরে ওঠা কোনো একটা বাসকে হাত দেখিয়ে থামিয়ে সেটায় চড়ে বসার কথা ভেবেছিলাম।

আপনার যন্ত্রণা যখন তীব্র, হাল ছেড়ে দিয়ে পালিয়ে যাবার চিন্তা করাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কিভাবে সরে পড়া যায়- এটা নিয়ে ভাবতে গিয়ে আপনি নিজের যে মূল্যবান সময় নষ্ট করবেন, সেটা হয়ত খুব সহজেই নিজের গন্তব্যে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে আপনাকে সাহায্য করতে পারতো।

) নিজের সীমাবদ্ধতাগুলো সম্পর্কে জানুন

আমাকে নিজের সম্পর্কে সৎ হতে হয়েছিলো। আমি ঠিকঠাক নিঃশ্বাস নিতে পারছিলাম না। দলের থেকেও পিছিয়ে পড়েছিলাম। তাই দলের সাথে থাকার জন্য নিজের শরীরকে কষ্ট দিয়ে আরো দ্রুত এগুনোটা আমার জন্য মোটেও ভালো কিছু হচ্ছিলো না। আমার পথ ভিন্ন হওয়ার দরকার ছিলো। এই কৌশল বাস্তবায়নের পর আমার যাত্রাটা কিছুটা স্বস্তিদায়ক হয়েছিল।

আপনার সাফল্যের রাস্তাটা আর কারো মতো না। এবং এটাই সঠিক। সবার পরিস্থিতিই ভিন্ন ভিন্ন। তারচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে নিজের সম্বন্ধে জানা, যাতে সফল হওয়ার জন্য আপনি নিজের করণীয়গুলো ঠিক করে নিতে পারেন।

লক্ষ্য পূরণের পথে এগুনোর সময় বাধা-বিপত্তি আসবেই। যখন যাত্রা আপনার ভাবনার চেয়েও দুরূহ হবে তখন সব ছেড়েছুড়ে চলে যাওয়াটাই সহজ।

কিন্তু যদি এই ব্যাপারগুলো মেনে চলেন, বন্ধুর পথেও আপনি সামনে এগিয়ে যাবার শক্তি খুঁজে পাবেন। এবং সেসময় আপনি নিজের ওপর বিশ্বাস রাখতে পারলে দেখবেন যে- কষ্টের তুলনায় অর্জনটা মোটেও ফেলনা নয়।

হাল ছাড়বেন না।

লিখেছেন সোনিয়া থমসন।
www.success.com-এ পূর্ব প্রকাশিত।

আপনি উদ্যমী!
আপনার জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে চান?  

তাড়াতাড়ি সাবস্ক্রাইব করুন।

আমাদের সেরা কনটেন্ট আপনার ইমেইলে পৌছে যাবে প্রতি সপ্তাহে।  

Invalid email address
আপনি যেকোনো সময় আনসাবস্ক্রাইব করতে পারবেন।  

মন্তব্য করুন