৬টি ক্ষুদে অভ্যাস যা আপনাকে করবে আরো বুদ্ধিমান, কার্যক্ষম ও আত্নবিশ্বাসী
উদ্যোক্তা জেফ বেজোস ও ফেসবুকের সিওও শেরিল স্যান্ডবার্গের মতো ব্যক্তিত্বরা তাদের জীবনে ঘুমকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েই মানসিকভাবে এতো চনমনে থাকেন। অন্যদিকে ইংরেজ ব্যবসায়ী এবং বিনিয়োগকারী রিচার্ড ব্রানসন নিজের সাফল্যের জন্য ব্যায়ামকে সবচেয়ে বেশি কৃতিত্ব দেন।
চনমনে প্রফুল্ল মন শুধু আপনাকে দ্রুত বেড়ে উঠতে ও জীবনের সাথে মানিয়ে নিতেই সাহায্য করে না, বরং তা আপনাকে করে তোলে আত্নবিশ্বাসীও। তাই বলা যায়, আরো চটপটে, আত্নবিশ্বাসী ও কর্মক্ষম হতে নিচের ৬টি ক্ষুদে অভ্যাস মেনে চলতে পারেন আপনিও।
১) ব্যায়াম
যখন আপনি শরীরকে সময় নিয়ে নড়াচড়া করান তখন মানসিক আবেগ তৈরি হয়। সবচেয়ে বড় কথা- ব্যায়ামের ফলে আপনার কর্মশক্তি বাড়ে, যেটা যে কারো জন্য একটা অন্যতম মূল্যবান সম্পদ।
প্রথম প্রথম যখন ব্যায়াম শুরু করি, আমাদের প্রধান লক্ষ্য থাকে পেশি বাড়ানো। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে আমরা বুঝতে পারি এটা শুধু পেশির সাথেই সম্পর্কিত না। বরং ব্যায়াম একপ্রকারের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা যা আমাদের শরীর ও মনের যত্ন নেয়।
বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের মস্তিষ্কের হিপোক্যাম্পাস নামক প্রকোষ্ঠ সংকুচিত হয়ে পড়ে, যা স্মৃতিভ্রমের পথে নেয়, এমন কি ডিমেনশিয়া হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। আশার কথা- এক গবেষণায় বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন যে, বায়ুজীবী ব্যায়াম করলে মস্তিষ্কের সামনের হিপোক্যাম্পাস প্রকোষ্ঠের আকার বৃদ্ধি পায়। এটা স্মৃতি ও চেতনাকে উজ্জীবিত করে।
এই ব্যস্ত জীবনে ব্যায়াম করার কথা শুনলে অনেকেই আঁতকে ওঠে। অথচ তা দৈনিক ৩০ থেকে ৪০ মিনিট হাঁটার প্রতিজ্ঞা করার মতোই সহজ।
২) নতুন কিছু শেখা
মানসিকভাবে চনমনে থাকার অনেকটাই নিজের স্বস্তির জায়গা থেকে বেরিয়ে আসার উপর নির্ভরশীল। আপনি যদি নিজের সেই আরামদায়ক জায়গায় আটকে পড়েন, তাহলে আপনার মস্তিস্ক ধীরগতির ও ভোঁতা হতে থাকে।
নতুন কিছু শেখাটা একটি উচ্চমাত্রার কর্মক্ষম অভ্যাস। কারণ এটা মস্তিষ্ককে সতেজ ও সচেতন করে তোলে। সাইকোলজিকাল সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখা যায়- এরকম সচেতন ও চমৎকার কাজে জড়িত হলে স্মৃতির কর্মদক্ষতা বেড়ে যায়।
তাই আমি ইউরোপিয়ান পর্তুগিজ ভাষা ও সালসা নাচসহ আরো কয়েকটি নাচ শেখার ব্যাপারে নিজেকে চ্যালেঞ্জ করি।
এমন একটা শখ বেছে নিতে পারেন যেটাতে আপনি খুব বেশি পারদর্শী না। একটা ভাষা শিখতে পারেন। এমনকি করতে পারেন ফটোগ্রাফি বা পেইন্টিং, বা এরকম যা কিছুর নাম করা যায়।
৩) নতুন ধারণা-পরিবেশের সাথে পরিচয়
মানুষ হিসেবে আমরা নিশ্চয়তা ও পরিচিত পরিবেশ পছন্দ করি। কিন্তু দুঃখের ব্যাপার- যখনই আপনি এই দুটো ব্যাপারে অভ্যস্ত হয়ে যাবেন, নিজের অজান্তেই জীবন ও কাজের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ হয়ে যাবেন।
‘আপনার মানসিক স্বস্তির জায়গার বাইরেই উন্নতি’- কথাটা পুরনো কিন্তু সত্য। বড় বড় শিল্পী কিংবা উদ্ভাবকদের দিকে তাকালে দেখবেন তাদের সকলেই নিজেদের গণ্ডির বাইরে এসেই অসাধারণ সব কাজ করেছেন।
নিজেকে নতুন ধারণা বা পরিবেশে উন্মুক্ত করাটা খুবই শক্তিশালী একটা ব্যাপার। কারণ এটা আপনার মস্তিষ্কের রসায়নে প্রভাব রাখে ও পৃথিবীর দিকে নতুনভাবে তাকাতে শেখায়, যা সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে খুবই কাজে দেয়। এবং এসবই আমাদের কৌতূহলের সাথে সম্পর্কযুক্ত, যা নতুন উদ্ভাবনের জন্য সহায়ক ও আমাদের স্মৃতিকে আরো উন্নত করে।
একবার যখন আমি একটা বই লিখেছিলাম, আমার বিষয়বস্তু ছিলো- স্বাস্থ্য ও ফিটনেস। কিন্তু আমি সুপারহিরো, শিল্পী ও সঙ্গীত দিয়ে পরিচিত বিষয়টাকে একটু অন্যভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা করলাম। নতুন ধরণের কাজ করতে চাইলে আপনাকে নিজের কাজের পরিবেশের বাইরে তাকাতে হবে, এবং তারপর সেই নতুন ধারণাকে নিজের কাজের ধাঁচের সাথে ধীরে ধীরে মেশাতে হবে।
৪) আপোষহীন ঘুম
একজন উচ্চ-কর্মদক্ষ মানুষ হিসেবে আপনার সাফল্যের একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো- এটা অন্যদের থেকে অনেক বেশি আপনার নিজের উপর নির্ভর করে।
নেতৃত্ব দেয়ার ব্যাপারটা যুক্তি, পরিকল্পনা, সাজানো ও সিদ্ধান্ত নিতে পারার মতো মস্তিষ্কের বেশ কিছু কাজের উপর নির্ভরশীল, এবং এরা সবাই অনিদ্রা দ্বারা ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। স্নায়ুবিজ্ঞানীরা বলেন, ১৬ ঘন্টার বেশি সজাগ থাকলে আপনার মনোযোগ ও মস্তিষ্কের কাজগুলোর সক্ষমতা কমে যায়।
ঘুমকে মস্তিষ্কের পুষ্টি হিসেবে দেখুন এবং যাই হোক না কেন সাত থেকে নয় ঘন্টা ঘুমানোর প্রতিজ্ঞা করুন।
৫) পুষ্টিকর খাদ্য
শুধু দেহের পুষ্টির দিকে খেয়াল রাখাটা একটি অদূরদর্শী ব্যাপার।
পুষ্টিহীনতা আপনার মানসিক শক্তির ওপর বিরূপ ভূমিকা রাখে, একই সাথে আপনার কর্মচারীদের কাজও ক্ষতিগ্রস্ত করে যা কিনা আপনার প্রতিষ্ঠান মাস শেষে কতটুকু লাভজনক হচ্ছে তা প্রভাবিত করে।
পুষ্টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটা আপনার প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান- নানা রকমের খনিজ ও ভিটামিনের চাহিদা মেটায়, যা ফল ও সবজী থেকে পাওয়া যায়।
দৈনন্দিত খাবার তালিকায় ফল ও সবজীর পরিমাণ বাড়িয়ে নিজের স্বাস্থ্যকর অভ্যাসকে আরো উন্নত করুন।
৬) প্রতিদিন পড়ুন
বইপড়া একটি চমৎকার অভ্যাস। এটা আপনার কল্পনা ও অভিজ্ঞতাকে আরো সমৃদ্ধ করে।
এমন কি পড়া বা এ ধরণের যেসব অভ্যাস আপনার মনকে উস্কে দেয়, আপনাকে রক্ষা করতে পারে আলঝেইমার রোগের হাত থেকে। ন্যাশনাল একাডেমি অফ সায়েন্সের একটি প্রতিবেদন এমনটাই জানাচ্ছে। পড়া আপনার মনকে ব্যস্ত রাখে, সাথে এটা আপনার মধ্যে সহমর্মিতাও জাগিয়ে তুলতে পারে যা আপনার নেতৃত্ব ও দীর্ঘস্থায়ী সাফল্যের জন্য প্রয়োজন।
কর্মক্ষম একজন হওয়া ও সেই চমৎকার ব্যাপারটা একটা দীর্ঘ সময় ধরে টেনে নেয়ার জন্য আসলে খুব বেশি জটিল কিছু লাগে না। শুধু দরকার- ছোট ছোট এসব ক্ষুদে অভ্যাসের প্রতি কিছুটা মনোযোগী হওয়া।
লিখেছেন জুলিয়ান হায়েস II।
www.inc.com সাইটে পূর্বপ্রকাশিত।
মন্তব্য করুন