৬টি কারণে মায়ানরা একটি কৌতূহলোদ্দীপক সভ্যতা ছিল

Share

মহান মায়ান সভ্যতা ; Image Source:www.researchgate.net

গত কয়েক শতাব্দী ধরেই মায়ান সভ্যতা গভীরভাবে আমাদের আগ্রহ ও কল্পনার কেন্দ্রে অবস্থান করছে। বহু উৎসুক অনুসন্ধানীরা কেন্দ্রীয় আমেরিকার ঘন জঙ্গলে ডুব দিয়েছে এবং বিলুপ্ত শহর, উল্লেখযোগ্য পিরামিড, আধ্যাত্মিক রহস্য এবং জ্যোতির্বিদ্যা ও গাণিতিক বিভিন্ন আশ্চর্য খুঁজে বের করেছে, যা এই সভ্যতার প্রতি আমাদের মুগ্ধতা আরো বহুগুণে বাড়িয়ে তুলেছে।

তারা বহু নিখুঁত স্থাপত্য, বৈচিত্র্যময় খাদ্যাভ্যাস (কুইসিন) এবং ভাষা রেখে গেছে, যা আমাদের এই আধুনিক বিশ্বেও প্রবল প্রভাব ফেলেছিল। আজও আমরা মায়ান সভ্যতার যত গভীরে ডুব দিই, ততটাই অস্পষ্ট লাগে এর চেহারা। বছরের পর বছর ধরে গবেষণা এবং খোঁড়াখুঁড়ির পরও ঐতিহাসিকরা আজো আমাদের বলতে পারেননি যে এই লোকগুলো আসলে কে ছিল, কোত্থেকে এসেছিল এবং কীভাবেই বা তাদের এই সভ্যতার পতন ঘটে। যা-ই হোক, আমরা এদের সম্পর্কে যত কমই জানি না কেন, মায়ানরা যে প্রচণ্ড মানসম্মত রুচিসম্পন্ন ও শৈল্পিক সভ্যতা ছিল, তা নিয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই।

তারা প্রথম নিয়মতান্ত্রিক ‘বল খেলা’ প্রচলন করেছিল।

টিকাল ন্যাশনাল পার্ক গুয়াতেমালা ;Image Source: www.ncl.com

যখনই খেলাধুলার কথা ভাবি, তখন প্রথমেই মাথায় আসে বিভিন্ন বল খেলা যেমন ফুটবল ও বাস্কেটবল, চিয়ারলিডার এবং নামিদামি হাফটাইম শোয়ের কথা। খুব কমসময়ই আমরা এই খেলাগুলোর উৎপত্তি নিয়ে ভাবি,যা কিনা হাজার বছর আগের কেন্দ্রীয় আমেরিকার প্রায় গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলগুলোতে শেকড় গেড়ে আছে। আজকের খেলাধুলার ভক্তেরা মায়ানদের সম্পর্কে প্রায় কিছুই জানে না। এই লোকগুলো তাদের খেলাধুলাকে অনেক বেশি গুরুত্ব দিতো। বিভিন্ন ম্যাচ ছিল তাদের কাছে মরা-বাঁচার খেলা, এর সাথে জড়িয়ে ছিল নানা ধরনের জটিল ধর্মীয় রীতিনীতিও।  

মায়ান বল কোর্ট টিকাল গুয়াতেমালা;Image Source: www.stayadventurous.com

গুয়াতেমালার টিকাল জাতীয় উদ্যান, সমগ্র আমেরিকা উপমহাদেশের সবচেয়ে বেশি খোঁড়া হয়েছে এমন একটি স্থান। সেখানে পাঁচটি প্রাচীন বল কোর্ট রয়েছে, যা কিনা ৩০০০ বছরেরও পূর্বের। গবেষকরা মনে করেন যে, মায়ানরাই ইতিহাসের প্রথম আনুষ্ঠানিক বল খেলাটির আয়োজক ছিল। স্বর্ণপদক কিংবা মিলিয়ন ডলারের চুক্তি তো কোন ছার! মায়ানরা তাদের বাঁচার অধিকারের জন্য প্রতিযোগিতায় নামতো। জয়ী দল বেঁচে থাকতো, এবং পরাজিতদেরকে দেবতার কাছে বলি দিয়ে দেওয়া হতো এবং বাকিজীবনটা পাতালেই কাটিয়ে দিতে হতো।

বল খেলোয়াড়রা জেইড নেকলেস, কিছুটা রক্ষণাত্মক গিয়ার এবং ভয়ালদর্শন মুখচিত্র পরিধান করে তারা বিজয়ের সন্ধানে কঠিন পাথরের কোর্টে পা রাখতো। মানুষের খুলিকে কেন্দ্রে রেখে তারা আট পাউন্ড ওজনের রাবার বল ব্যবহার করতো। এই খেলাটিতে নিজের হাতে একবারও না ছুঁইয়ে বলটি পাস করতে হতো, এবং তারপর এটিকে বাস্কেটবলের মতো হুপে প্রবেশ করাতে হতো। বেশ কঠিন বল খেলাই বটে!

তারা আমাদের বেশ কিছু প্রিয় খাদ্যের উন্নয়ন ঘটিয়েছিল

আজকের সময়ে আমাদের প্রিয় তালিকায় থাকা অনেক খাদ্যই প্রাচীন মায়ান জগতে প্রথম প্রচলিত হয়েছিল। যেমন, মায়ানরাই প্রথমে কাকাওয়ের এর বীজ বের করে সেগুলোকে পোড়ানোর মাধ্যমে হট চকলেট তৈরি করে। তারা এমএনএস কিংবা স্নিকার বার তৈরি করেনি, এমনকি কাকাওকে আরো মিষ্টি করে তুলতে কোনো দুধ বা চিনিও যোগ করেনি। এর পরিবর্তে, তারা ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সময় কোনো আলাদা মিশ্রণ ছাড়াই এই পানীয় গ্রহণ করতো। মায়ানরা কাকাওকে দেবতাপ্রেরিত পবিত্র ফল মনে করতো, এবং মুদ্রা হিসেবেও এটির ব্যবহার ছিল। স্পেনিয়ার্ডরা যখন কেন্দ্রীয় আমেরিকায় প্রবেশ করে, তখন তারা এই পানীয়ের সাথে অভ্যস্ত হয় এবং এর স্বাদবৃদ্ধির জন্য চিনি ও দুধ যোগ করা শুরু করে। এটি ছাড়াও মায়ানরা গুয়াক্যামল, কর্ন টর্টিলা, মিশেল্যাডাস এবং ট্যামালেসের মতো জনপ্রিয় খাবারের প্রচলনের পেছনের ভূমিকা রেখেছে।

মন্দিরকে উজ্জ্বল দেখাতে তারা গ্লিটার ব্যবহার করতো

মায়ান মন্দির হণ্ডুরাস;Image Source: www.pinterest.se

২০০৮ সালে হন্ডুরাসে এক মায়ান মন্দির পর্যবেক্ষণ করার সময় বিজ্ঞানীরা অভ্রের দীর্ঘ রেখা আবিষ্কার করে, যা কিনা বেশ চকচকে ধাতু। মনে করা হয় যে, তারা তাদের পবিত্র মন্দিরে অভ্র দিয়ে আঁকাআঁকি করতো যেন সূর্যরশ্মিতে তা উজ্জ্বল দেখায়। এই শিল্পটি দিনের বেলায়ও তাদের পবিত্র ভবনগুলোকে বেশ আধ্যাত্মিক একটা চেহারা দিতো।

জ্যোতির্বিজ্ঞানীয় বিভিন্ন ঘটনার প্রতিফলনের জন্য তারা পিরামিড নির্মাণ করেছিল

কুকুলকান মন্দির ইউকাতান মেক্সিকো;Image Source: www.dreamstime.com

তৎকালীন যুগে মায়ানরা সবচেয়ে এগিয়ে থাকা জ্যোতির্বিজ্ঞানী ছিল। কুকুলকান  মন্দিরের মতো আরো বহু অদ্ভুত সুন্দর স্থাপত্য নির্মিত হয়েছিল বিভিন্ন জ্যোতির্বিজ্ঞানীয় ঘটনার প্রতিফলনের জন্য। বিষুবীয়কালে সার্পেন্ট স্লাইথার নামক একটি ছায়া সর্পিলগতিতে মন্দিরটির সিঁড়িতে দেখা যেতো। এই প্রতিভাস সূর্যরশ্মি সৃষ্ট কোণের জন্য ঘটে থাকে এবং ভবনের ছাদে এর আলোটি আঘাত করে। চিচেন ইজা মন্দিরের সামনের সিঁড়িতে শুক্র গ্রহের সর্ব-উত্তর অবস্থান নির্দেশ করে। এর প্রান্তগুলোও উত্তরায়ণ এবং দক্ষিণায়নের সময় সূর্যরশ্মির সাথে একরৈখিক অবস্থানে বিরাজ করে।

তারা শূন্যের ধারণার প্রবর্তন করেছিল

মায়ানদের শূন্য সংখ্যার ধারণা;Image Source: www.slideshare.net

যখন অনেক ঐতিহাসিকই বিশ্বাস করেন যে শূন্যের ধারণার উৎপত্তি সর্বপ্রথম ব্যবিলনে হয়েছিল, মায়ানরা সম্পূর্ণ পৃথকভাবে চতুর্থ শতাব্দীতে এর উন্নয়ন ঘটায়। শূন্যকে একটি ঝিনুকাকৃতির গ্লিফের (হায়ারোগ্লিফিক অক্ষর) মতো উপস্থাপন করা হতো।

রেইনফরেস্টের মধ্যে তারা এক শ্রেষ্ঠ সভ্যতা গড়ে তুলেছিল

রেনফরেস্টে মায়ান সভ্যতা পেতেন জঙ্গল গুয়াতেমালা; Image Source: mymodernmet.com

মায়ানদের নিয়ে সবচেয়ে বিচিত্র ও দক্ষ ব্যাপারটি হলো তাদের উন্নত স্থাপত্যকলা এবং এর মাধ্যমে তারা রেইনফরেস্টের মধ্যে এক শ্রেষ্ঠ সভ্যতা গড়ে তুলেছিল। অন্য বৃহৎ সভ্যতাগুলো সাধারণত শুষ্ক জলবায়ুর মধ্যে গড়ে ওঠে, যেখানে তাদের শহরের মূল পরিচালনা প্রক্রিয়াগুলো গঠন করা হয়।

মায়ানরা তাদের প্রাকৃতিক সম্পদের সুবিধা নিয়েছিল, যেমন লাইমস্টোন, লবণ এবং আগ্নেয়শিলা; অস্থিতিশীল জলবায়ু সত্ত্বেও এতে মানিয়ে নিয়েছে।    

মূল আর্টিকেলটি www.historyonthenet.com এ প্রকাশিত হয়েছে।

আপনি উদ্যমী!
আপনার জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে চান?  

তাড়াতাড়ি সাবস্ক্রাইব করুন।

আমাদের সেরা কনটেন্ট আপনার ইমেইলে পৌছে যাবে প্রতি সপ্তাহে।  

Invalid email address
আপনি যেকোনো সময় আনসাবস্ক্রাইব করতে পারবেন।  

মন্তব্য করুন