২০০০ বছর ধরে ব্যবহার হওয়া প্ররোচনার ৩ কৌশল
প্রায় দুই হাজার বছর আগে গ্রিক বিজ্ঞানী ও দার্শনিক এরিস্টটল প্রচারণার তিনটি কৌশল সম্পর্কে বলেন। বিমুর্ত, রাজনৈতিক এবং যুক্তিবিদ্যা বিষয়ে তার জ্ঞান ও আদর্শের জন্য এরিস্টটল সর্বাধিক পরিচিত।
অ্যারিস্টটল প্রায়ই যুক্তিবিদ্যার সাথে জীবনের বিভিন্ন সমস্যা মোকাবিলা করতেন। হাজার হাজার বছর পরও তার দর্শন বেশিরভাগ পশ্চিমা সংস্কৃতির দিক নির্দেশ করে।
তাঁর তত্ত্বগুলি যথেষ্ট প্রভাবক্ষম, এবং যেটা এখনো প্রচলিত প্রেক্ষাপটের সাথে যায় তেমনি একটি হলো- অ্যারিস্টটলের প্ররোচনার দর্শন। তিনি বিশ্বাস করেন যে, সফল প্ররোচনা আসে যখন কেউ তার বক্তব্যের মাঝে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ব্যবহার করে।
আপনি যদি একজন উদ্যোক্তা বা ছোট ব্যবসার মালিক হন, তাহলে আপনাকে সঠিকভাবে আপনার আইডিয়া পিচ করা জানতে লাগবে। আপনার আইডিয়া সহজভাবে ব্যক্ত করা এবং নতুন প্রজেক্ট সফলভাবে সামনে এগিয়ে নেয়ার জন্য, আপনার নিজের একটি মজবুত ও শক্তিশালী এলিভেটর পিচ, লম্বা পিচ এবং পিচ ডেক থাকা লাগবে। পরেরবার আপনি যখন আপনার আইডিয়া পিচ করতে যাবেন, তখন অ্যারিস্টটলের প্ররোচনার এই তিনটি উপাদান ব্যবহার করতে পারেন।
১) আপনার পিচে বা বক্তব্যতে সত্যতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিশ্চিত করার জন্য “এথোস” অন্তর্ভুক্ত করুন
‘এথোস’ একটি গ্রীক শব্দ যার অর্থ চরিত্র। ‘এথিকস’ বা নীতি শব্দটা এখান থেকেই এসেছে। ব্যক্তিত্ব, বিশ্বাস ও অনুভূতিকে ঘিরে এই শব্দটি গড়ে উঠেছে। এটা আপনার ব্যক্তিত্ব ও ব্যক্তিগত সুনাম ব্যবহার করে নির্ভরতা অর্জনের একটি কৌশল।
আপনি যখন বক্তব্যে ‘এথোস’ ব্যবহার করবেন, আপনাকে এটা এমনভাবে ব্যবহার করতে হবে যেন আপনার শ্রোতা আপনাকে বিশ্বস্ত ভাবে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়- এমন শব্দ ব্যবহার করুন যা আপনাকে নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য হিসেবে তুলে ধরে।
কেউই জোড়াতালি দিয়ে তৈরী করা কিছুতে বিনিয়োগ করতে চায় না। এমনভাবে বক্তব্য দিন যেন আপনার নৈতিকতা আপনার বিশ্বস্ততার কথা বলে।
সেই সাথে আপনার নিজেকে বিশ্বাসযোগ্য হিসেবে উপস্থাপন করতে হবে। এটা ধরে নেবেন না যে আপনার শ্রোতারা আপনার সম্পর্কে জানেন। তাদেরকে আপনার অতীত অর্জনের সম্পর্কে কয়েকটি উদাহরণ দিন কিংবা আপনার অভিজ্ঞতা ব্যবহার করুন।
যেমন এটা বলবেন না যে, ‘এই মুহূর্তে বাজারে চাহিদা আছে বলে অনেক স্টার্টআপ কোম্পানি চালু হয়েছে।’ বরং এটা বলুন- ‘আমার স্টার্টআপ কোম্পানিগুলোর সাথে x বছরের কাজের অভিজ্ঞতা আছে, যার কারণে আমি বাজারে চাহিদা দেখতে পাচ্ছি যা আমার পণ্য মেটাতে পারে।’
আপনাকে আপনার শ্রোতা সম্পর্কে জানতে হবে। এবং তাদের ভাষায় কথা বলুন, তাদেরকে আপনার মতের সাথে সম্মত করতে। যদি আপনি ডাটা সায়েন্সের লোকদের সাথে কথা বলেন, তাদের নিজস্ব ভাষা ব্যবহার করুন। যদি ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট ফার্মের সাথে কথা বলতে চান, খুঁজে বের করুন এর আগে কোন কোন প্রজেক্টে তারা বিনিয়োগ করেছে। আপনার শ্রোতাদের ভাষায় কথা বলুন। এটা আপনাকে আপনার বক্তব্য সঠিকভাবে বলতে ও শ্রোতাদের কাছে পৌঁছাতে সাহায্য করবে।
২) আপনার বক্তব্যে ‘লোগোস’ অন্তর্ভুক্ত করুন: গল্প, সময় ও চাহিদার যৌক্তিকতা নিশ্চিত করুন
যদি ‘এথোস’ নৈতিকতা ও বিশ্বস্ততা হয়, তবে ‘লোগোস’ হচ্ছে আপনার বক্তব্যের যুক্তিপূর্ণ অংশ। এটা কাউকে বা কোন দলকে আপনার বক্তব্যের সাথে একমতে আনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা উপাদান।
আপনি যদি বক্তব্য যৌক্তিকভাবে উপস্থাপনা করতে না পারেন, তার মানে আপনি খুব বেশি কিছু বোঝাতে পারছেন না।
গল্প তৈরি করুন, এটাই বক্তব্যকে আকর্ষণীয় করে তোলে। কিভাবে ক খ’তে পরিণত হয়, এবং কিভাবে তা গ, ঘ ও ঙ’তে রূপ নেয়। বক্তব্যকে রচনার মতো বয়ে যেতে হবে। আপনার একটা গোছানো ছাঁচ থাকতে হবে। আপনি কিছু একটা বলতে চান, এবং সেটা যেন মাথার উপর দিয়ে না যায়।
বিশেষ করে যখন কোন জটিল কিছু বলবেন, বক্তব্যকে যথাসম্ভব সরল রাখুন। অধিকাংশ মানুষই বোঝাতে গিয়ে জটিল বিষয়গুলো ব্যাখা করতে চান। বিষয়গুলো আপনার শ্রোতারা যেন সহজভাবে বুঝতে পারে সেদিকে মনোযোগ দিন, শ্রোতাদের জন্য আপনার বক্তব্য সরলভাবে ব্যক্ত করুন।
আপনি যার কাছে আপনার পিচটি সেল করছেন, তার কাছে সেটিকে গ্রহণ করার একটি কারণ আপনাকে উপস্থাপন করতে হবে। এটার একটা ভালো উপায় হল- তথ্য বা কোনোকিছু প্রমাণ সংযুক্ত করা। আপনার বক্তব্যের আরম্ভ, মধ্যভাগ ও উপসংহার কি? আপনার তত্ত্বটাই বা কি? আপনার উদ্দেশ্য কি? এবং কেন এটা গুরুত্বপূর্ণ?
‘লোগোস’ এসব প্রশ্নেরই উত্তর দিয়ে থাকে। নিজের বক্তব্যের যুক্তির মধ্য দিয়ে আপনার শ্রোতাদের মনে জায়গা বানিয়ে নিন। তাদের কাছে যৌক্তিকভাবে পৌছাতে পারলে আপনার প্ররোচনার এক-তৃতীয়াংশ কাজ হয়ে যাবে।
৩) আবেগ সম্পর্কে সচেতন হোন এবং ‘পাথোস’ ব্যবহার করে শ্রোতাদের আরো কাছাকাছি যান
একটা সফল বক্তব্যের অন্যতম একটা ব্যাপার হচ্ছে- শ্রোতাদের আবেগ স্পর্শ করা। এবং এখানেই ‘পাথোস’র আগমন। এটা এমন একটা যোগাযোগের মাধ্যম যা আবেগকে জড়িত করে। এটা আপনার বক্তব্যের এমন একটা দিক যা শুধু সংখ্যা পরিসংখ্যান নিয়ে নয়, বরং শ্রোতার সাথে একটা ব্যক্তিগত যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করে।
তাদের সাথে শুধু কথা বলবেন না এবং আপনার বক্তব্যকে শুধু উচ্চমার্গীয় উদাহরণ দিয়ে ভারী করবেন না। তাদের সাথে একই জায়গায় দাঁড়ান। আপনার বক্তব্যকে আপনার শ্রোতাদের অভিজ্ঞতার সাথে মিলিয়ে উপস্থাপন করুন।
একজন মানুষ অনেক ধরনের আবেগ অনুভব করে। আপনার বক্তব্য দিয়ে শ্রোতাদের আনন্দ ও দুঃখকে টোকা দিন। তাদেরকে যা বিরক্ত করে, স্বস্তি ও আরাম দেয়- সেসব বিষয়ের দিকে দৃষ্টি দিন।
এভাবে বলবেন না যে, ‘এই পণ্যটি একটি বিশাল বিনিয়োগ, কারণ এটা অমুক-তমুক সমস্যার সমাধান করে।’ বরং এভাবে বলুন- ‘আমরা সবাই এমন পরিস্থিতিতে পড়েছি যেখানে আমাদের দেরি হয়ে যাচ্ছে এবং সবকিছুই যেন আমাদের দেরী করিয়ে দিতে চাচ্ছে। সেজন্যই আমরা নিয়ে এসেছি এই পণ্য, কারন আমরা বিশ্বাস করি- এটি সেইসব ব্যস্ত সকালে আমাদের জীবনকে সহজ করতে পারে।
মুক্তমনা হোন।
যখন আপনি কাউকে বা কোন কিছুকে প্ররোচিত করতে চাইবেন, আপনার উচিত তাদের মতামতের প্রতি গুরুত্ব দেয়া। তাদের বিশ্বাস ও মূল্যবোধের ভাষায় কথা বলুন।
এটা হতে পারে সেই বিষয়ে আপনার কণ্ঠস্বর ও বলার ভঙ্গি ব্যবহার করে। আকর্ষণীয়ভাবে গল্পবলা একটি শিল্প তা ব্যবহার করে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি প্রচার করুন।
এই উপাদানগুলোর প্রতিটিই আলাদা আলাদা ভাবে শক্তিশালী যুক্তি তৈরি করতে পারে, কিন্তু একসাথে মিলে তারা আপনার পিচ বা বক্তব্যকে স্মরণীয় ও বিশ্বাসযোগ্য করতে পারে। এথোস, লোগোস ও পাথোস’র ব্যবহার এটাকে আরো বিশ্বাসযোগ্য করতে সাহায্য করে। এটা মানুষের আগ্রহের নানা দিককে আকৃষ্ট করে, এবং আপনাকে একটি প্রয়োজনীয় কাজ সম্পন্ন করতে সাহায্য করে।
লিখেছেন অ্যালিসিয়া সাগারা
www.inc.com-এ পূর্বপ্রকাশিত।
মন্তব্য করুন