স্ট্রেস থেকে কীভাবে মুক্তি পাবেন?
জেনে নিন স্ট্রেসযুক্ত অবস্থা থেকে মুক্তি পাবার চারটি উপায়
অনেক ভালো উদ্দেশ্য থাকা সত্ত্বেও অনেকেই বিশ্বাস করেন যে আবেগ নিয়ন্ত্রণ করা সহজ নয়, আবেগের পরিস্ফূরণ সতস্ফূর্তভাবেই ঘটে এবং আমরা সেগুলোকে বহুভাবে সামলে থাকি। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে, চারভাবে মানুষ তার আবেগ সামলে থাকে। আপনি কি সেগুলো জানেন? একবার আপনি আপনার আবেগ নিয়ন্ত্রণের প্রাথমিক উপায়টি জেনে গেলে তারপর অবস্থাভেদে সেগুলোকে আপনার সুবিধামতো রূপান্তরিত করতে পারবেন।
এড়িয়ে যাওয়া
নেতিবাচক আবেগের জন্য প্রথম প্রতিরোধ ব্যবস্থা হচ্ছে এড়িয়ে যাওয়া। আমরা সবাইই প্রতিকূল পরিস্থিতি এবং পীড়াদায়ক অনুভূতিকে এড়িয়ে যেতে চাই। এতে করে, আমরা যে অনুভূতিগুলো ভয় পেয়ে থাকি, সে পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে, এমন কোনো ঘটনাও আমরা এড়িয়ে যেতে চেষ্টা করি। কখনো কখনো এর চেয়েও খারাপ করি, যেমন কোনো আবেগই অনুভব না করতে চেষ্টা করি। নেতিবাচক পরিস্থিতি এড়িয়ে যাওয়া আমাদেরকে তাৎক্ষণিকভাবে রক্ষা করতে পারে, এটি আমাদেরকে তীব্র আকাঙ্ক্ষিত আবেগ, যেমন— সংযোগ, প্রবল শক্তি, উত্তেজনা ইত্যাদি অনুভব করা থেকে মুক্ত রাখে।
অস্বীকৃতি
স্ট্রেস থেকে মুক্তির দ্বিতীয় স্তরে রয়েছে সরাসরি অস্বীকৃতি জানানো। যখন আপনি কোনো আবেগের বশীভূত হতে যাবেন এবং তখনই অস্বীকার করার চেষ্টা করবেন, তখন আপনার আবেগগুলো ঘনীভূত হয়ে পড়বে। আপনার ভেতর একধরনের চাপ গড়ে উঠবে এবং আপনি যা এড়িয়ে যেতে চাইছেন, তা আপনাকে একটি অপ্রাসঙ্গিক সময়ে শক্তি যোগাবে।
প্রতিযোগিতা
আজকের সময়ে মানুষের মুখোমুখি হওয়া সবচেয়ে বড় আসক্তির নাম ড্রাগ নয়, মদ্যপান নয়, এটি হচ্ছে ‘সমস্যা’। প্রায়ই, এড়িয়ে যাওয়া এবং অস্বীকৃতির ধাপ পেরোনোর পর, আমরা আমাদের পীড়াদায়ক অনুভূতিগুলোর সাথে লড়াই থামিয়ে দেবার সিদ্ধান্ত নিই এবং সেগুলোর সাথে পুরোপুরি জড়িয়ে যেতে চাই। আমাদের এই অনুভূতিগুলো আমাদেরকে কী বলতে চাইছে, তা না বোঝার চেষ্টা করে আমরা অন্য সকলের মতো আমাদের সমস্যাগুলোকেও আরো খারাপের দিকে এগিয়ে নিই। তখন এটি যেন ‘সাহস প্রদর্শনের একটি উপায়’ হয়ে ওঠে, এবং আমরাও অন্যদের সাথে প্রতিযোগিতায় জড়িয়ে পড়ি এই বলে যে, “তুমি কি ভেবেছ, তোমার সমস্যাটাই বড়? আমি তোমাকে বলছি আমি কতটা সমস্যায় আছি!” তখন আপনার নিজেকে নিয়ে একটু ভাবা উচিত এবং সমস্যাগুলোকে শক্তি না যুগিয়ে বরং ইতিবাচক কিছু করার দিকে মন দেয়া দরকার।
শিক্ষা এবং প্রয়োগ
সত্য: সমস্যা মানেই উপহার। আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে যে আমরা ভাবি, আমাদের সমস্যা থাকা উচিত নয়। অ্যালবার্ট আইনস্টাইন এটিকে এভাবে দেখতেন, “দুর্যোগ মানুষ এবং জাতির জন্য আশীর্বাদস্বরূপ কারণ দুর্যোগ উন্নতি বয়ে আনে…যে নিজের ব্যর্থতা এবং দুর্যোগের ফলে উদ্ভূত সমস্যাকে দোষ দেয়, সে নিজের প্রতিভা নষ্ট করে এবং সমাধানের চাইতে সমস্যাকে বেশি গুরুত্ব দেয়।” সত্যিকারের নেতারা তাদের দুঃখকে কাজে লাগায়। তাই আপনার স্ট্রেস এবং দুঃখকে আপনার সেবকের ভূমিকায় অবতীর্ণ করুন।
স্ট্রেস কি আপনাকে অসুস্থ করে ফেলছে?
স্ট্রেস শুধু মানসিক কিংবা আবেগীয়ভাবেই ক্ষতিকর নয়— এটির মধ্যে আপনাকে শারীরিকভাবে অসুস্থ করার শক্তিও রয়েছে। স্ট্রেস আপনার রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে দুর্বল করে তোলে, সাধারণ ঠাণ্ডা লাগার ভাইরাস এবং অন্যান্য জীবাণুকে তাড়িয়ে দেওয়াটাও কঠিন করে ফেলে। স্ট্রেসের ফলে শিরা-উপশিরায় উত্তেজনা এবং হার্টবিট বেড়ে যাবার মাধ্যমে ক্ষণস্থায়ীভাবে রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়। দীর্ঘস্থায়ী স্ট্রেসের ফলে করোনারি হার্টের রোগ হওয়াটাও এখন স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
স্ট্রেস মানসিকভাবে খিদেকেও পরিচালিত করে এবং অস্বাস্থ্যকর খাদ্যকে গ্রহণ না করাটা কঠিন হয়ে পড়ে। আশ্চর্যের বিষয় হলো, তখন স্ট্রেসের সাথে ওজন বৃদ্ধির বিষয়টিও জড়িয়ে পড়ে। আপনি জেনে অবাক হবেন যে উচ্চ কর্টিসোল মাত্রার সাথে স্ট্রেসের ফলে চর্বির পরিমাণ বৃদ্ধিও জড়িত, বিশেষত তলপেটের অংশে। এর ফলে ক্রমেই শরীরে ইনস্যুলিন প্রতিরক্ষার মাত্রা বেড়ে যায়, যা থেকে ব্লাড স্যুগারে প্রভাব পড়তে পারে। অন্য উপসর্গগুলোর মধ্যে বুকে জ্বালাপোড়া, আইবিএস, ডায়রিয়া এবং পেটে মোচড় ইত্যাদি থাকতে পারে। গর্ভবতী মহিলাদের জন্য, অতিরিক্ত স্ট্রেস থেকে ভ্রূণের মস্তিষ্ক গঠনের ক্ষেত্রেও প্রভাব পড়তে পারে এবং সময়ের আগেই প্রসবকাল এসে যেতে পারে।
দীর্ঘস্থায়ী স্ট্রেস আপনার মস্তিষ্কের জন্যও ভালো নয়। স্ট্রেস থেকে মাথাব্যথা হতে পারে এবং কখনো তা মাইগ্রেনেও রূপ নিতে পারে। এটি স্প্যাশিয়াল মেমোরি হ্রাস করে, যা আপনাকে কোনো স্থান কিংবা সে সংক্রান্ত জিনিসপাতি মনে রাখতে সাহায্য করে। এ থেকে আপনার নতুন স্মৃতি গড়ে ওঠা এবং আত্মনিয়ন্ত্রণ বা আবেগ পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রভাব পড়ে। অতিরিক্ত স্ট্রেসকে তিনটি ভিন্ন ধরনের চুল পড়া এবং সহজে বুড়িয়ে যাওয়া জনিত রোগের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
স্ট্রেস সামলাবেন কীভাবে?
আপনি স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণের কার্যকর উপায় শিখতে পারেন এবং নিজেকে আরো একটু ভালো করে গড়ে তুলতে পারেন। এটি করার একটি উপায় হচ্ছে আপনার কাছে উপভোগ্য কাজগুলো খোঁজা, যেমন— শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি। আপনার জীবনকে এধরনের ছাঁচে নিজের জন্য রোল মডেল হিসেবে কাউকে বেছে নিন বা সাহায্যকারী কাউকে খুঁজে নিন।
প্রতিদিনই মনের জন্য ভালো কিছু খোরাক যোগান। আগাছা বেড়ে উঠতে দেবেন না; ভালো চিন্তার চাষ করুন এবং আগামীর জন্য জ্ঞানের বীজ বপন করুন।
শরীরটাকে গড়ে তুলুন। ভয়, স্থবিরতা, ক্রোধ, অসাড়তা, বিষণ্ণতা: এগুলো সেসব মানসিক অবস্থা, যা মানুষের শারীরিক সুস্থতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, এবং আপনাকে এগুলোর সাথে যুঝতে হবে ও এদেরকে জয় করতে হবে। বিজ্ঞান আমাদেরকে দেখিয়েছে যে আপনি যখন কোনো শারীরিক পরিশ্রমের কাজে অংশ নেন, তখন আপনার দৈহিক রসায়ন সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং শরীর-মনের একীভূতকরণের মাধ্যমে তারা একসাথে কার্যকরভাবে ভূমিকা রাখতে পারে।
আপনার নিজের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ একটি মিশন খুঁজে বের করুন। আমরা সবাইই আরো বড় কিছু একটা চাইবার মাধ্যমে লাভবান হই; এমন কিছু, যা আমাদের দুঃখ, এমনকি আমাদের সুখের চাইতেও অনেক বেশি।
একজন আদর্শ বা রোল মডেল খুঁজুন। এতে করে আপনার মনে আশা জাগবে যে আপনি যা চাচ্ছেন, তা হওয়া সম্ভব। আপনি কি একজন সফল উদ্যোক্তা হতে চাচ্ছেন? এমন কাউকে খুঁজে বের করুন, যিনি তা করেছেন। আপনার অনুভব করতে হবে যে আপনার লক্ষ্য কতটা বাস্তবসম্মত, কতটা সম্ভব এবং অন্যেরা কীভাবে তাদের প্রতিকূলতাগুলো ডিঙিয়ে সেই লক্ষ্য অর্জন করতে পেরেছেন।
আপনি এমন কাউকে ও খুঁজতে পারেন, যারা অভাবে রয়েছেন এবং আপনি তাদের সাহায্য করুন। সাহায্য করার মতো অসংখ্য উপায় রয়েছে, যেমন—স্থানীয় আশ্রয়কেন্দ্র অথবা ফুডব্যাংকে স্বেচ্ছাসেবা প্রদান অথবা সুবিধাবঞ্চিতদের শ্রেণিকক্ষে সেবা পৌঁছে দেওয়া। স্বেচ্ছা সেবার প্রক্রিয়া আপনাকে শেখাবে যে কীভাবে নিজের জীবনের উদ্দেশ্য খুঁজতে হয় এবং আপনাকে মনে করিয়ে দেবে যে আপনি সকলের সাথেই কোনো না কোনোভাবে সংযুক্ত। অন্যকে কিছু দেবার সামর্থ্য এবং সাহায্য করবার প্রবণতা জীবনের বহু ভুল এবং ক্ষতিকে অতিক্রম করেও আপনাকে সামনে এগিয়ে যাবার চেষ্টা করতে অনুপ্রেরণা যোগাবে।
www.tonyrobbins.com সাইটে প্রকাশিত আর্টিকেলের ছায়া অবলম্বনে লেখা।
মন্তব্য করুন