স্টিভ জবস ছিলেন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বিক্রেতা কারণ তিনি প্রত্যেকের মনের প্রশ্নটির উত্তর দিয়েছিলেন
এই প্রবন্ধটি লেখার সময় আমি একটি ৮০০ পৃষ্ঠার পেজ বাইন্ডারের দিকে তাকিয়ে আছি। একটি নতুন পণ্যের ধরন সম্পর্কে এতে কিছু গোপণ তথ্য আছে। যখন পণ্যটি চালু করার জন্য প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তাদের রাজি করালাম তখন আমি একটি কৌশলের ব্যাপারে ভাবছিলাম যা স্টিভ জবস এবং গুগলের সহপ্রতিষ্ঠাতা ল্যারি পেজ এবং সার্জে ব্রিন অত্যন্ত চমৎকার ভাবে কাজে লাগিয়েছিল। পণ্যের ব্যাখ্যা দিয়ে শুরু করো না বরং মানুষকে বলো এটি কেন তাদের জীবনকে বদলে দেবে।
যে কোন প্রেজেন্টেশনে শ্রোতারা নিজেদের একটি প্রশ্ন করছে। এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া আপনার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং এই প্রশ্নটিই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব বহন করছে।
আমি কেন এটিকে গুরুত্ব দেব?
এটি আপনাকে একটি ধাক্কা দিতে পারে কিন্তু আসলেই আপনার ক্রেতারা আপনার পণ্য, সেবা, প্রতিষ্ঠান বা ধারণাকে গুরুত্ব দেয় না। তারা তাদের নিজেদের গুরুত্ব দেয়- নিজেদের জীবনের আশা, স্বপ্ন এবং মানকে। আপনার পণ্য কীভাবে তাদের জীবনকে উন্নত করবে তা তাদের বলুন এবং এতে আপনি তাদের মনোযোগ পাবেন।
একবার স্টিভ জবস বলেছিলেন যে মানুষ কম্পিউটার সম্পর্কে জানতে চায় না। তারা জানতে চায় আরো ভালোভাবে বাঁচতে কম্পিউটার কীভাবে তাদের সাহায্য করবে।
জবস বলেছিলেন, “তোমাকে ক্রেতাদের অভিজ্ঞতা দিয়ে শুরু করতে হবে এরপর প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করতে হবে। এছাড়া অন্য কোনভাবে নয়”।
স্টিভ জবস কিভাবের আগে কেনোর ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন
জবস কীভাবের আগে কেনোর ব্যাখ্যা দিয়ে এই ধারণাকে প্রেজেন্টেশনে ব্যবহার করেছেন। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, খুব অল্প মানুষই মনে রেখেছে আইপডে(৫ জিবি) অভ্যন্তরীণ কতটুকু মেমোরি ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু তারা এটি মনে রেখেছে যে এতে এক হাজার গান পকেটে নিয়ে ঘোরা সম্ভব হয়েছে। “তোমার পকেটে এক হাজার গান” হয়ে ওঠে পণ্যের ইতিহাসের অন্যতম একটি জনপ্রিয় স্লোগান। কিন্তু এটি শুরু হয় তখন থেকে যখন স্টিভ জবস মূল প্রশ্নটি করেন- কেনো এ্যাপেলের ক্রেতারা একটি নতুন এমপিথ্রি প্লেয়ারকে গুরুত্ব দেবে?
২০০৮ সালে জবস একটি নোটবুক কম্পিউটার বাজারে ছাড়ে যাতে ছিল- ১৩.৩ ইঞ্চি এলইডি ব্যাকলিট ডিসপ্লে, প্রমাণ আকারের কীবোর্ড, ১.৬ গিগাহার্জ প্রসেসর এবং একটি ইউনিবডি এ্যালুমিনিয়াম ডিজাইন। এগুলো ছিল বিস্তারিত বর্ণনা। কিন্তু এই বিবরণী পণ্যটির সুবিধার কথা বলতে পারেনি। জবস যখন প্রথম ম্যাকবুক বাজারে আনে তখন সে শুধু বলে, “একবাক্যে বলতে গেলে, এটি পৃথিবীর সবচেয়ে পাতলা নোটবুক”। এই একটি বাক্যে জবস কীভাবের(একটি পাতলা কম্পিউটারে তারা এত পাওয়ার কীভাবে সংকুচিত করে আনলো তার বিশদ বিবরণ) আগে ব্যাখ্যা করেছে কেনো (পণ্যটির সুবিধা)।
একটি মাত্র বাক্য দিয়ে গুগলের কর্তাব্যক্তিরা বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করে
খ্যাতিমান পুঁজিপতি উদ্যোক্তা মাইকেল মরিজ একবার দুজন স্ট্যানফোর্ড গ্র্যাজুয়েট সার্জে ব্রিন এবং ল্যারি পেজের প্রতিষ্ঠান গুগলের কথা বলতে গিয়ে আমাকে বলেন, “একজন যোগ্য নেতা একটি জটিল পণ্যেরও সারাংশ বের করতে পারেন”।
পেজ এবং ব্রিন সেকুয়া ক্যাপিটালে বিনিয়োগকারী মরিজের কাছে গিয়ে একটি বাক্যে তাদের পণ্য সম্পর্কে বলে যা ছিল অত্যন্ত সরল। “কেনো একজন ক্রেতা একে গুরুত্ব দেবে”- এই প্রশ্নের উত্তর তারা এক বাক্যে দেয়। উত্তরটি ছিল এরকম, “গুগল পৃথিবীর সব তথ্যকে এক জায়গায় এনেছে এবং একে সুলভ করেছে”। এটি ছিল স্পষ্ট এবং প্রশ্নাতীত। একবার যখন বিনিয়োগকারীরা সন্তুষ্ট হলো যে গুগলের প্রতিষ্ঠাতারা যা বলছে তাদের প্রযুক্তি দিয়ে সেটা করা সম্ভব তখন তারা এটি কিনে নিল ।কিন্তু তারা আটকে থাকলো শুরুর বাক্যতেই ।
কিভাবে একটি পিচ লাইন তৈরি করতে হয়
যখনই কোন নতুন পণ্যের ব্যাপারে আমাকে সিনিয়রদের সাথে কথা বলতে বলা হয় তখন আমি তাদের একটি পিচ লাইন তৈরি করতে বলি। কেন আমি পণ্যটিকে গুরুত্ব দেব এই প্রশ্নের উত্তরে বলা একটি লাইন যা পণ্যটির উপকারিতা বিক্রি করবে। উত্তরটি হবে সংক্ষিপ্ত (১৪০ বর্ণের) এবং এতে এমন কোন অযথা শব্দ থাকবে না যা প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে শুধু জায়গা নষ্ট করবে।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, আমি একবার তোশিবা আমেরিকা মেডিক্যাল সিস্টেমের সাথে একটি সিটি ব্রেইন-স্ক্যান মেশিন বাজারজাত করার ব্যাপারে কাজ করেছিলাম। তারা প্রথমে যেভাবে এটি সম্পর্কে বর্ণনা করেছিল তা হলো-
এটি প্রথম ডায়নামিক হাই-ভলিউম সিটি যা একটি ঘুর্ণনে পুরো অঙ্গের চিত্র তৈরিতে ৩২০ আল্ট্রা হাই রিজোলিউশনের ডিটেক্টর ব্যবহার করবে।
আমি বললাম, এটি খুব জটিল, দুর্বোধ্য এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর দিতে ব্যর্থ।
আমি বার বার জিজ্ঞেস করলাম, “আমি কেন এটিকে গুরুত্ব দেব?”।
শেষে হতাশ হয়ে একজন বলে উঠল, দেখ ক্যারমাইন,যদি তোমার স্ট্রোক হয় এবং হাসপাতালে আমাদের মেশিনটি থাকে তাহলে ডাক্তাররা আগের চেয়ে অনেক দ্রুত তোমার ডায়াগনসিস করতে পারবে। আমাদের পণ্য পার্থক্য গড়ে দিতে পারে তোমার বাড়ি ফিরে গিয়ে সারা জীবন বেঁচে থাকা অথবা পরিবারের লোকদের কখনো চিনতে না পারার মধ্যে।
আমি উত্তরে বললাম, “তাহলে তুমি এটাই বললে না কেন?” “আমি বিক্রি হয়ে গেলাম”।
সে বছর এই টিম একটি গুরুত্বপূর্ণ রেডিওলোজী কনফারেন্সে প্রেজেন্টেশন দিয়ে স্বাস্থ্য খাতে একটি অ্যাওয়ার্ড জিতে নেয়। কিন্তু এটা শুরু হয় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটির মাধ্যমে। “আমি কেন গুরুত্ব দেব?” এই প্রশ্নের উত্তর স্পষ্ট করে, গুছিয়ে, সংক্ষেপে দাও। উপকারিতা বিক্রি করে শ্রোতাদের আকৃষ্ট করো রাখো।
লিখেছেন ক্যারমাইন গ্যালো।
www.inc.com সাইটে পূর্বপ্রকাশিত।
মন্তব্য করুন