সফলতা এবং ব্যর্থতার কিছু অনুপ্রেরণামূলক ছোট গল্প (পার্ট-০২)
এর আগের খন্ড পার্ট-০১ এ আমরা পড়েছিলাম টমাস আলভা এডিসন এবং লুডউইগ ভ্যান বিটোফেনের গল্প। এই খন্ডে আসুন জানি ওয়াল্ট ডিজনী এবং স্টিভ জবসের গল্প। আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে।
ওয়াল্ট ডিজনী (৫ ডিসেম্বর, ১৯০১ – ১৫ ডিসেম্বর, ১৯৬৬)
তৃতীয় গল্পটি ওয়াল্ট ডিজনীর। তার স্টুডিও প্রযোজিত কার্টুনগুলোকে ধন্যবাদ কারণ এগুলোর জন্যই আমরা আমাদের ছেলেবেলার মুহূর্তগুলোকে উপভোগ করতে পেরেছি এবং এখনো পারছি।
কিন্তু ডিজনীর জীবনও তেমন সহজ ছিল না। তিনি একজন উদ্যোক্তা ছিলেন এবং যারা এই পথ বেঁছে নেয় তাদের প্রতিকূল পরিস্থিতি এবং ব্যর্থতার সম্মুখীন হতেই হয়।
২২ বছর বয়সে একটি মিশৌরি পত্রিকা থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয় কারণ তিনি “যথেষ্ট সৃজনশীল” ছিলেন না। তার প্রথম কোম্পানীগুলোর একটি, লাফ-ও-গ্রাম কখনো সফলতা পায়নি এবং ধীরে ধীরে তিনি দেউলিয়া হয়ে যান।
ডিজনী পকেটে মাত্র ৪০ ডলার এবং একটা স্যুটকেস যাতে ছিল একটা শার্ট, দুটো পাজামা, দুজোড়া মুজো এবং আঁকার সামগ্রী নিয়ে লস এঞ্জেলসে চলে যান। কারণ তার একটা ধারণা ছিল অ্যানিমেশন তৈরিতে তিনি অন্যদের চেয়ে ভালো করবেন। তার লক্ষ্য ছিল হলিউডের অভিনেতা হওয়া যা কখনো হয়ে ওঠেনি।
১৯২০ এর দশকে ডিজনীকে নতুন কিছু তৈরি করতে বলা হলো যা ইউনিভার্সাল স্টুডিওর মাধ্যমে বিলি করা হবে এবং তিনি তা করে দিলেন। তিনি অসওয়াল্ড র্যাবিট তৈরি করলেন যা অনেক সম্ভাবনাময় ছিল। তারপর ১৯২৮ সালে ডিজনী যখন এই সিরিজ তৈরির জন্য বেশি ফি দাবী করেন তখন তিনি খুব অপ্রত্যাশিত উত্তর পান। বাড়ানোর পরিবর্তে প্রযোজক চার্লস মিন্টস তার ফি কমিয়ে দিতে চায়। ডিজনী এই হ্রাসকৃত ফি প্রত্যাখ্যান করার সিদ্ধান্ত নেয় কিন্তু এর ফলে মিন্টস ডিজনীর টিমের সদস্যদের সরাসরি তার অধীনে কাজ করার জন্য বলে। মিন্টস শুধু অসওয়াল্ড র্যাবিটের স্বত্তাধীকার নিয়েই নেয়নি, ডিজনীর কলাকুশলীদের তাকে ছেড়ে যাওয়ার জন্যও প্ররোচিত করেছিল। একবার ভেবে দেখুন ডিজনী তখন কেমন বোধ করেছিলেন।
নানা প্রতিকূলতা ও ব্যর্থতার মধ্যে দিয়ে যাওয়ার পরেও আমরা সবাই এখন ডিজনীর কাজগুলোই দেখছি। বিখ্যাত মিকি এবং মিনি মাউস ৫৯ টি অস্কার পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিল যার মধ্যে ৩২ টি জিতেছিল। এককভাবে সবচেয়ে বেশি অ্যাওয়ার্ড পাওয়ার রেকর্ডও ওয়াল্ট ডিজনীর, যার মধ্যে রয়েছে ২২ টি অস্কার পুরস্কার। খারাপ না, তাই না?
স্টিভ জবস (২৪ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫৫ – ৫ অক্টোবর, ২০১১)
বাকি ৩টি উদাহরণের মতোই আমরা সবাই জানি স্টিভ জবসকে। আমরা তাকে আইফোন, আইপ্যাড, আইপড এবং ম্যাকের উদ্ভাবক হিসেবে জানি।
আমরা এখন যেভাবে প্রযুক্তিকে দেখতে পাই তার উপর যার ভীষণ প্রভাব রয়েছে তাকে নিয়েই এই গল্পটি। তিনি একটি ‘স্মার্ট’ মোবাইল ফোন থাকার প্রকৃত অর্থ সৃষ্টি করেছেন এবং এর একটি মাত্রা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। আগের উদাহরণগুলোর মতই তার সফলতার পথটাও সহজ ছিল না।
জবস স্যান ফ্রান্সিস্কোতে জন্মগ্রহণ করেন এবং জন্মের পরই তাকে দত্তক নেওয়া হয়। তার জীবনের শুরুর দিকে তিনি ভারত ভ্রমণ করেন এবং শেখেন কীভাবে ধ্যান করতে হয়। তিনি বলেন যে তার ভবিষ্যত সাফল্যের জন্য নিজেকে খুঁজে পাওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এবং এটা ওখান থেকে বুঝতে পেরে তিনি ঠিক করেন যে আমেরিকায় ফিরে এসে যা তিনি সত্যিই ভালোবাসেন সেই কাজগুলোয় মনোনিবেশ করবেন।
১৯৭৬ সালে মাত্র ২১ বছর বয়সে মা-বাবার গ্যারেজে জবস যৌথভাবে অ্যাপল প্রতিষ্ঠা করেন। ২৩ বছর বয়সে তিনি ইতোমধ্যে একজন লাখপতি হয়ে গিয়েছিলেন। এই সবকিছুই হয়েছিল তিনি রিড কলেজ থেকে ঝরে পড়ার পরে। ১৯৮৩ সালে অ্যাপল কোম্পানী ফরচুন ৫০০ এর একটি অংশ হয়ে গিয়েছিল। সেই বছরই তিনি পেপসি কোলার প্রধান জন স্কালেকে অ্যাপলের প্রধান কার্যনির্বাহী হিসেবে নিয়োগ দেন। নিয়োগ দেওয়ার সময় জবসের স্কালেকে বলা একটা বিখ্যাত উক্তি আছে যা হলো, “আপনি কি সারা জীবন কোমল পানীয় বিক্রি করেই পার করতে চান নাকি পৃথিবী বদলে দেওয়ার সুযোগ চান?”
কাজের ব্যাপারে জবস খুবই কঠোর ছিলেন এবং তার সাথে কাজ করাও বেশ শক্ত ছিল। কিন্তু অ্যাপলের মত একটি বড় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য এই গুণগুলো তার দরকার ছিল। কিন্তু খুব শীঘ্রই ব্যাপারগুলো জটিল হয়ে ওঠে। অ্যাপলের কাজগুলো কীভাবে করা হবে সে ব্যাপারগুলোয় জবস এবং স্কালের পরস্পরের থেকে ভিন্ন মতামত ছিল। ফলে কর্মচারীরা জবসকে অভিযোগ জানাতে শুরু করে এবং ফলস্বরূপ ম্যাকিনটশ গ্রুপকে জবসের কাছ থেকে নিয়ে নেওয়া হয়। এটা জবসকে ক্ষমতাহীন বোধ করায় এবং অতিশীঘ্রই তিনি অ্যাপল থেকে পদত্যাগ করেন।
১৯৮৫ সালে জবস মধ্য জীবনের জটিলতায় ভুগছিলেন যা থেকে তিনি মূলত ‘নেক্সট’ নামে একটি কম্পিউটার কোম্পানী যৌথভাবে চালু করার জন্য অনুপ্রেরিত হন। অ্যাপলের যা করার কথা ছিল নেক্সট অনেকটাই তা করতে পেরেছিল। এটি একটি শক্তিশালী কম্পিউটার তৈরি করে। এ থেকে স্পষ্টভাবে বোঝা যায়, কোম্পানী খুব বড় কোন বিষয় ছিল না বরং স্টিভ জবস, যে পণ্যগুলো তৈরি করছে সে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
১৯৯৬ সালে অ্যাপল যদিও খুব ভালো চলছিল না তবুও এটি নেক্সটকে কিনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ভাগ্যের ফেরে জবস তার নিজের প্রতিষ্ঠিত কোম্পানীতে আবার ফিরে আসেন এবং এক বছর পরেই সে এর সিইও হয়ে যান। তখন আইফোন এবং আইপ্যাড বাজারে আসার পথে ছিল। আমি নিশ্চিত যে এর পরের ঘটনা আপনারা জানেন।
আমি আশা করছি যে এই অনুপ্রেরণামূলক ক্ষুদ্র গল্পগুলো আপনাদের দেখিয়েছে যে ব্যর্থতা ছাড়া সফলতা আসে না। এটা প্রায় একটা গুরুত্বপূর্ণ নীতিতে পরিণত হয়েছে যে পাহাড়ের শীর্ষে পৌঁছাতে হলে আগে আপনাকে কঠোর সংগ্রাম করতে হবে। এটাই জীবন। এবং শুরুতেই যা বলেছি, প্রতিকূলতা এবং ব্যর্থতা সত্ত্বেও বার বার চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছাই সফল ব্যক্তিদের বাকি সাধারণ ব্যক্তিদের থেকে আলাদা করে।
www.gedground.com সাইটে প্রকাশিত আর্টিকেলের ছায়া অবলম্বনে লেখা।
মন্তব্য করুন