সফলতা এবং ব্যর্থতার কিছু অনুপ্রেরণামূলক ছোট গল্প (পার্ট-০১)

Share

Image Source: accidentalcreative.com

সফলতার পথে সবচেয়ে বড় যে সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় তা হলো ব্যর্থতা। নতুন এবং অজানা কোন কাজে নিজেকে নিয়োজিত করা যে কারো জন্যই চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার, কিন্তু ব্যর্থতার মোকাবিলা করা এবং কাটিয়ে ওঠার কাছে এটা কিছুই না। আমরা ধরেই নিই যে আমাদের কাজের পথে যে কোন বাঁধা আসলে তা মোকাবেলা করতে প্রস্তুত আছি, কিন্তু বাস্তবে যখন এরকম ঘটে তখন গল্পটা পুরোপুরি অন্যরকম দাঁড়ায়। আমরা কিভাবে  কোন সমস্যার মোকাবেলা করতে হয় তা জানি না বলে নয়, বরং শুধু কিভাবে কোন সমস্যার মোকাবেলা করতে হয় তা না জানার চেয়েও সমস্যা আগে থেকে আঁচ করতে পারি না বলে ব্যর্থতা কাটিয়ে উঠতে পারি না। সোজা কথায় বলতে গেলে, আশঙ্কা যত কম থাকে, আঘাত তত বেশি লাগে।

সমস্যা হলো আমরা যখন নতুন কিছু শুরু করি তখন আমাদের জানার কোন উপায় থাকে না যে আমাদের সামনে কী আসতে চলেছে। আমরা একটা নতুন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখে বিচার করি কারণ তখনো আমরা এতে যথেষ্ট শ্রম, সময় এবং অর্থ ব্যয় করিনি। মনেই হয় না যে এতে কোন সমস্যা আসতে পারে। তারপর যখন আমরা কাজের পেছনে যথেষ্ট পরিমাণ সম্পদ ব্যয় করে ফেলি, মনপ্রাণ দিয়ে চেষ্টা করি তখন ব্যর্থতা এবং বিপর্যয় একটি সম্পূর্ণ নতুন অর্থ লাভ করে। এগুলো মারাত্মক হয়ে ওঠে। তখন প্রশ্ন দাঁড়ায়, আপনি এগুলো কাটিয়ে উঠতে পারবেন কী না? মূলত এটাই বাকি সবার থেকে সফল ব্যক্তিদের আলাদা করে ফেলে, কারণ তারা এমন কিছু করতে সক্ষম যা সবাই পারে না তা হলো যে কোন বাধা পেরিয়ে যাবার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ মনোভাব।

পৃথিবীর কোন সফল ব্যক্তিই সফল হয়ে জন্মায়নি। তাদের প্রত্যেককেই শিখতে হয়েছে এবং তাদের কাজগুলো আয়ত্ত করতে হয়েছে। বাকি সবার মতোই তাদেরও ব্যর্থতা এবং প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে। আপনাদের বোঝার সুবিধার্থে এবং অনুপ্রাণিত করতে আমি চারটি ছোট অনুপ্রেরণামূলক গল্প এখানে বলেছি যা আপনাদের বুঝতে সাহায্য করবে যে ব্যর্থতা ছাড়া আপনি সফল হতে পারবেন না। জীবনে শ্বাস-প্রশ্বাস যেমন খুবই সাধারণ ব্যাপার, সফলতার পথে ব্যর্থতাও ঠিক ততটাই সাধারণ ব্যাপার। ব্যর্থতার কারণে দমে যাওয়ার পরিবর্তে একে খেলার একটি অংশ ভেবে নিন, এর থেকে শিখুন এবং একে আলিঙ্গন করুন। পৃথিবীর সব শুভকামনা আপনাদের জন্য!

ক্ষুদে অনুপ্রেরণামূলক গল্প

টমাস এডিসন (১১ ফেব্রুয়ারি, ১৮৪৭ – ১৮ অক্টোবর, ১৯৩১)

Image Source: burrosabio.net

প্রথম গল্পটি টমাস এডিসনের যাকে বাড়িতেই পড়ালেখা শিখতে হয়েছিল কারণ তার স্কুলের শিক্ষক বলেছিল “সে কোন কিছু শেখার জন্য ভীষণ হাদা”। তাকে তার জীবনের প্রথম বেশ কিছু চাকরি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল কারণ তিনি যথেষ্ট প্রোডাকটিভ ছিলেন না।

আমাদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষই তাকে বৈদ্যুতিক বাল্বের উদ্ভাবক হিসেবে চিনি কিন্তু অনেকেই জানি না যে তিনি আসলে তার সময়ের সিরিয়াল উদ্যোক্তা ছিলেন।

বৈদ্যুতিক বাতির কারণে বিখ্যাত হওয়ার আগেই বেশ কিছু দিন যাবত ধরে এডিসন নতুন নতুন কাজ করেছিলেন। ‘এডিসন পোর্টল্যান্ড সিমেন্ট কোম্পানী’ নামে তিনি একটি কোম্পানী প্রতিষ্ঠা করেন যার লক্ষ্য ছিল সিমেন্ট শিল্পকে উন্নত করা। তিনি কংগ্রেসের জন্য স্বয়ংক্রিয় ভোট গণনার পদ্ধতিও আবিষ্কার করেছিলেন। প্রথম উদাহরন, কোম্পানী, এডিসন যতটা চেয়েছিলেন সে পর্যন্ত কখনোই পৌছায়নি এবং কংগ্রেস তার ভোট গণনা যন্ত্র একেবারেই বাতিল করে দেয়।

তার এমন আরো অনেক উদ্ভাবন আছে যা থেকে কখনোই বড় কিছু হয়নি কিন্তু এটি তাকে বার বার চেষ্টা করে যাওয়া থেকে থামাতে পারেনি। সর্বোপরি, নিজের চিন্তা এবং উদ্ভাবনগুলোকে সংরক্ষণ করে রাখার জন্য এডিসন তার সারা জীবন ধরে ১০৯৩ টি পেটেন্ট অর্জন করেছিলেন।

বলা হয়ে থাকে বৈদ্যুতিক বাতি আবিষ্কারের আগে তিনি যেমনটা চান সেরকম করে বানানোর জন্য তাকে ১০,০০০ নমুনা বানাতে হয়েছিল। তার এই ১০,০০০ বার ব্যর্থতার কথা যখন তাকে জিজ্ঞেস করা হয় তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, “আমি ১০,০০০ বার ব্যর্থ হইনি বরং সফলভাবে ১০,০০০ টি পদ্ধতি খুঁজে পেয়েছি যেগুলো কাজ করবে না”।

লুডউইগ ভ্যান বিটোফেন (ডিসেম্বর, ১৭৭০ – ২৬ মার্চ, ১৮২৭)

Image Source: focusjunior.it

দ্বিতীয় অনুপ্রেরণামূলক ক্ষুদে গল্পটি লুডউইগ ভ্যান বিটোফেনের, যিনি সর্বকালের সর্বাধিক পরিচিত অন্যতম একজন ক্ল্যাসিকাল সুরকার।

সুরকার হিসেবে বিটোফেনের ক্যারিয়ার খুব ভালো ভাবে শুরু হয়নি। তার গানের শিক্ষক বলেছিলেন, “একজন সুরকার হিসেবে তিনি আশাহীন”। জীবনের পরবর্তী ধাপে তার সৃষ্ট সুরের জন্য তিনি ভীষণভাবে সমালোচিত হন। তবুও ক্ল্যাসিকাল সঙ্গীতের যুগকে রোমান্টিক যুগে বদলাতে তিনি একজন অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তি হয়ে ওঠেন।

যদিও বর্তমানে বিটোফেন তার অপূর্ব সঙ্গীতের জন্য পরিচিত কিন্তু এই সাফল্য অত সহজে আসেনি। কোন একটা সিম্ফোনি হুবহু লেখার কথা আমাদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষই ভাবতেও পারে না আর বিটোফেনের বয়স যখন ত্রিশের কাছাকাছি তখন তার শ্রবণশক্তি কমতে থাকায় পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়ে গিয়েছিল। যত বছর পার হতে থাকে পরিস্থিতি তত খারাপ হতে থাকে। জনশ্রুতি আছে, একদিন বিটোফেন তার সুরকার সহকর্মী ফার্দিনান্দ রাইসের সাথে বসে ছিলেন। এমন সময় তারা একজন মেষপালককে বাঁশি বাজাতে দেখনে। তারা দুজনেই এটি দেখতে পান কিন্তু শুধু রাইস এর সুর শুনতে পান। তখন বিটোফেন প্রথমবারের মত তার বধিরতার সম্মুখীন হন। এই ঘটনা তাকে সারাজীবনের জন্য বদলে দেয়।

বিটোফেন ধীরে এবং নিশ্চিতভাবে বধির হয়ে যেতে থাকেন কিন্তু তিনি হাল ছাড়েননি। তিনি জানতেন জীবনে শুধু সঙ্গীত সম্পর্কিত কাজই তিনি করতে পারবেন এবং সেটা তিনি কোনভাবেই বাদ দেবেন না। ফলে তিনি গান লেখা অব্যাহত রাখলেন। তার বধিরতার প্রথম দিকে নীচু নোট ব্যবহার করতে শুরু করেন কারণ উঁচু নোট তিনি ভালোমত শুনতে পেতেন না। কিন্তু পুরোপুরি বধির হয়ে যাওয়ার পর তাকে শুধু তার মনের ভেতর থাকা শব্দের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়তে হয়।

বিটোফেন তার জীবনে অনেক চমৎকার কিছু সুর সৃষ্টি করেছেন কিন্তু তার অন্যতম বিখ্যাত কাজ হলো নবম সিম্ফোনি। যখন তিনি পুরোপুরি বধির হয়ে গিয়েছিলেন তখন এটি লিখেছিলেন। তার কাছে সঙ্গীতহীন জীবন বিকল্প কিছু হিসেবে গ্রহণযোগ্য ছিল না।

পরবর্তী সংস্করণের জন্য চোখ রাখুন কন্টেন্টো গ্লোবালের নতুন পোস্টগুলোতে।

www.gedground.com সাইটে প্রকাশিত আর্টিকেলের ছায়া অবলম্বনে লেখা।

আপনি উদ্যমী!
আপনার জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে চান?  

তাড়াতাড়ি সাবস্ক্রাইব করুন।

আমাদের সেরা কনটেন্ট আপনার ইমেইলে পৌছে যাবে প্রতি সপ্তাহে।  

Invalid email address
আপনি যেকোনো সময় আনসাবস্ক্রাইব করতে পারবেন।  

মন্তব্য করুন