যে ৮ উপায়ে হতে পারবেন সম্মোহনী ব্যক্তিত্বের অধিকারী

Share

শুরুতেই একটা স্বীকারোক্তি করা যাক। বেশ কয়েক বছর আগের কথা। চাকরি জীবনের শুরুতে তখন আমি এনবিসি টিভিতে কাজ শুরু করেছি। একবার আমার উপর বড় বড় তারকাদের নিয়ে একটা অনুষ্ঠান আয়োজনের দায়িত্ব পড়লো। সবকিছু বেশ ঠিকঠাক ভাবেই চলছিলো, অন্তত আসল অনুষ্ঠানটা শুরুর আগ পর্যন্ত।

একই ঘরে এত বড় বড় তারকাদের মাঝখানে নিজেকে আমার বেশ তুচ্ছ লাগছিলো। এই ব্যাপারটা আমাকে একটা অস্বস্তিতে ফেলে দেয়। তাই আমি ঠিক করি আমাকে এমন সম্মোহনী ব্যক্তিত্বের রহস্যটা জানতে হবে- কিভাবে সাধারণ একটি বুনোফুল থেকে একটা উজ্জ্বল নক্ষত্রে পরিণত হওয়া যায়।

আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব কেন জরুরি? মানুষ শুধুমাত্র সৌন্দর্যের প্রতিই আকৃষ্ট হয় না। বরং আপনার যদি ব্যক্তিত্ব যথেষ্ট আকর্ষণীয় হয়, তারা আপনার ও আপনার কাজের উপর আগের চেয়ে বেশি আস্থা রাখবে। তাছাড়া উদ্যোক্তা পুঁজিবাদের বৃদ্ধাঙ্গুলির সূত্র অনুসারে- নেতার উপর বাজি ধরো, নতুন ধারণার উপর নয়। আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব সাফল্যের পথের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।

সেখান থেকে আমি যেসব কিছু শিখেছিলাম সেগুলো শুধু আমার কাজেই লাগেনি, বরং সেসব আমার জীবনকে করে তুলেছে আরো সুন্দর ও আনন্দদায়ক। চলুন দেখে নেয়া যাক-

) নিজের যুক্ত হবার ইচ্ছে বাড়ান

আপনি কি সামাজিক কিংবা অন্য কোনো জমায়েতে যোগ দেওয়া নিয়ে ভীতিতে ভোগেন? ব্যাপারটা একটু অন্যভাবে দেখতে পারেন। সেখানে যারা আছে সবারই নিজস্ব একটা গল্প রয়েছে। একটা ঘরভর্তি মানুষের ভেতর দিয়ে হাঁটাটা অনেকটাই লাইব্রেরি বা ভিডিও স্টোরের মাঝে হেঁটে যাওয়ার মতো- অনেককিছু শেখা ও উপভোগ করা যায়। আপনি কখনোই জানতে পারবেন না কিভাবে কারো গল্প আপনার ব্যবসা, এমনকি জীবন বদলে দিতে পারে। জ্ঞান, প্রেরণা ও ভালো যোগাযোগের উপায় খুঁজুন। আর মনে রাখবেন- এরকম ঘরভর্তি মানুষ হতে আপনার চকলেটের দোকান হতে পারে, কারাগার নয়।

) সচেতনভাবে উপস্থিত ও সজাগ থাকুন

আশেপাশের ছোট ছোট সবকিছু পর্যবেক্ষণ করা কিংবা শোনা মোটেই সহজ কাজ নয়। তাই এটা যারা করতে পারে তারা সহজেই নিজেদেরকে ভিড় থেকে আলাদাভাবে দাঁড় করায়। মানুষের মস্তিষ্ক প্রতিদিন পঞ্চাশ থেকে সত্তর হাজার চিন্তা করে- অর্থাৎ প্রতি মিনিটে ৩৫ থেকে ৪৮টি চিন্তা। তাই নিজের মস্তিষ্ককে ঝিমিয়ে পড়তে না দিয়ে বর্তমান মুহূর্তে মনোযোগ দেয়ার অভ্যেস করুন। মানুষের চোখের দিকে তাকান, যথাযথভাবে হাসুন; এবং আবেগ ও রসবোধ দিয়ে নিজেকে প্রফুল্ল রাখুন। আপনি যখন মানুষকে মনোযোগ দিবেন, তারা নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ ভাববে। এটা তাদের মনে একটা দীর্ঘস্থায়ী ও ভালো ছাপ রাখবে।

) গাম্ভীর্য ঝেড়ে ফেলুন

রসবোধ ও বুদ্ধিদীপ্ত মানুষকে সবাই মনে রাখে। এজন্য আপনার কৌতুকাভিনেতা হওয়ার প্রয়োজন নেই। নিজের সন্তান বা পোষা প্রাণীর কোনো মজার ঘটনা শেয়ার করুন, কিংবা হালকা গাম্ভীর্যের সাথে রসবোধ মিশিয়ে নিজের কোনো অতীত ভুলের কথা বলুন। তাছাড়া সবসময় ব্যবসার কথা না বলে হালকা আলোচনাও করতে পারেন।

) নিজের পোষাকে মনোযোগ দিন

মানুষ প্রথমেই আপনার পোষাকের দিকে মনোযোগ দেয়। এজন্য বিশেষজ্ঞরা বলেন, যেন আপনার ওয়ারড্রবে কমপক্ষে একটা ভালো স্যুট থাকে। রুল অফ থাম্ব অনুযায়ী- এক তৃতীয়াংশ কম কাপড় কিনুন ও নতুন কাপড়ে আগের চেয়ে তিনগুন বেশি খরচ করুন। কিছু জায়গায় জিন্সের প্যান্ট খুবই চলনসই হতে পারে। কিন্তু এটা মাথায় রাখবেন যেন আপনাকে ঢিলেঢালা না দেখায়। পোষাকের একটা চমৎকার বাছাই খুব সহজেই সাফল্যের কাছে পৌঁছাতে পারে।

) চোখে চোখ রাখার গুরুত্বকে ছোট করে দেখবেন না

আমি আগেও চোখে চোখ রাখার কথা বলেছি। কিন্তু খুব বেশি ব্যাখ্যা করতে পারিনি। আপনি যদি অমনোযোগী হন- সেটা আপনার লজ্জা, ফোন কিংবা ভীড় যে কোনো কারণেই হোক না কেন- এটা কারো সাথে আপনার সম্পর্ক চট করে নামিয়ে ফেলতে পারে। আপনার যদি চোখে চোখ রাখতে অস্বস্তি হয় তাহলে তার ভ্রূর মাঝ বরাবর, যেখান থেকে নাক শুরু হয়েছে সেদিকে তাকান। এর ফলে আপনি শুধু স্বস্তিই বোধ করবেন না, সেইসাথে দুই চোখের আবেগের অতিসুক্ষ্ণ পার্থক্যটাও দেখতে পাবেন।

) মনে রাখুন, মন্তব্য করুন ও পুনরায় করুন

আপনি কি কখনো কারো কাছ থেকে এমন কথা শুনেছেন যে, ‘দুঃখিত, কিছু মনে করবেন না যদি আমি আপনার নাম মনে রাখতে না পারি। আমি এ ব্যাপারে একেবারেই কাঁচা।’ লোকটি কি আপনাকে বললো যে, আপনি তার কাছে কোনো গুরুত্বই বহন করেন না? অথচ সেই একই লোককে কেউ যদি এক কোটি টাকা দিতো, তাহলে সে তার নাম ঠিকই মনে রাখতো।

আপনার সবটুকু চেষ্টা দিন মানুষের নাম মনে রাখার জন্য, অন্তত আপনাদের কথাবার্তা চলাকালীন সময়ের জন্য হলেও। সে তার নাম বলার পর এভাবে পুনরায় নামটা বলুন- ‘আপনার সাথে পরিচিত হয়ে খুশি হলাম, ফরিদ।’ তার নামের সাথে মিলে এমন পরিচিত কারো সাথে মিলিয়ে তাকে মনে রাখুন। তার নামের সাথে অন্য তথ্যগুলো মিলিয়ে একটা প্যাটার্ন তৈরী করে স্মৃতিতে রাখুন। যেমন- কবির কফির দোকানদার, তারেকের টেলিফোনের দোকান। সবশেষে এটা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলুন যে, আপনি নাম মনে রাখতে পারবেন না। আপনি শুধু তা-ই পারবেন যা আপনি ভাববেন।

) ইতিবাচক হন

কেউ কারো সাথে শুধু আবহাওয়ার খবর জানতে চাওয়ার জন্য পরিচিত হয় না। আপনার পছন্দের একটা বিষয় নিয়ে কথা শুরু করুন। দেখবেন আপনার চোখ-মুখ জ্বলে উঠছে। এমন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করুন যেটা অপরপক্ষকে নিজের গল্পটি বলতে উৎসাহিত করবে, যেহেতু আপনি শুনতে খুবই আগ্রহী। শুরুতেই নিজের কষ্টের কথা বলা থেকে বিরত থাকুন। সবসময় আলোচনাকে উপভোগ্য থাকতেই ছেড়ে দিন, যেন মানুষ আপনার কাছে আবার ফিরে আসতে চায়।

৮) দোভাষী হন

আপনার বলা কথাই আপনার একমাত্র ভাষা নয়। বাঁকা ঘাড়, আড়াআড়ি হাত কিংবা অস্থিরতা- এসবই আপনার আত্নবিশ্বাসহীনতার কথা বলে। কোথাও প্রবেশের আগে নিজেকে সুপারহিরোর মতো অনুভব করতে যে কোনো একটা ভঙ্গি করুন। সোসাল সাইকোলজিস্ট এমি কাডি’র শারীরিক ভাষা সম্পর্কিত এক গবেষণায় জানা যায়- শরীরের অবস্থার পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে আমরা শুধু নিজেদের প্রতি অন্য মানুষদের মনোভাবই বদলাতে পারি না, বরং নিজেদের শরীরের রসায়নের উপরও প্রভাব রাখতে পারি। প্রফুল্ল থাকার চেষ্টা করুন। কোথাও ঢোকার আগে একটা সুপারহিরোর মতো ভঙ্গি করুন। এটা হতে পারে- সুপারম্যানের মতো কোমরে হাত রেখে পা ছড়িয়ে টানটান হয়ে দাঁড়ানো। দেখবেন মুহূর্তের মাঝেই আপনার ভেতর ও বাহিরের শক্তি বেড়ে গেছে কয়েকগুণ।

মনে রাখবেন- ব্যক্তিত্বের আকর্ষণীয়তা হচ্ছে উদ্যমের আরেক রূপ। অর্থাৎ এটা হলো  নিজের মধ্যে অন্যদের সাথে ভাগাভাগি করার মতো আবেগ, শক্তি ও তাড়না থাকা যা অন্যদেরকেও একই রকম বোধ করতে সাহায্য করে।

লিখেছেন মারলা টাবাকা
www.inc.com- এ পূর্ব প্রকাশিত

আপনি উদ্যমী!
আপনার জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে চান?  

তাড়াতাড়ি সাবস্ক্রাইব করুন।

আমাদের সেরা কনটেন্ট আপনার ইমেইলে পৌছে যাবে প্রতি সপ্তাহে।  

Invalid email address
আপনি যেকোনো সময় আনসাবস্ক্রাইব করতে পারবেন।  

মন্তব্য করুন