যেকোনো অবস্থায় নিজের জন্য দাঁড়াবার ১০টি শক্তিশালী পন্থা

Share

Image Source: greatperformersacademy.com

প্রতিদিন আমরা এমন অনেক ছোটখাট বিষয় পছন্দ করে বেছে নিই যার মাধ্যমে আমাদের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব আসে, নয়তো আমরা নিজেদেরকেই ধ্বংস করে দিই কারণ আমরা নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি বা আকাঙ্ক্ষাগুলো দৃঢ়ভাবে গড়ে তুলতে দ্বিধা বোধ করি।

কোনো বিষয়ে প্রবল সংঘাত এড়ানোর জন্য কখনো কখনো স্রোতের সাথে বয়ে যাওয়া অনেক সহজ। কিন্তু সত্যি এই যে অন্য মানুষদেরকে নিজের জীবনে সর্বত্র বিচরণ করতে দেবার মাধ্যমেই নিজের স্ট্রেস বা উত্তেজনার অনুভূতি বৃদ্ধি ঘটে। এবং এতে করে আপনার আত্ম-মূল্যায়নের অনুভূতি কমে যাবে এবং আপনার ভিতরে  অনিরাপত্তার অনুভূতি বৃদ্ধি পাবে।

নিজের জন্য দাঁড়ানো শেখাটা আপনাকে জীবনের নিয়ন্ত্রণ হাতে নিতে, আত্মশক্তিতে বিশ্বাস করতে এবং আপনার স্বপ্নগুলোকে ছুঁতে সাহায্য করবে। আপনি যত বেশি শক্তিশালী অনুভব করবেন, তত বেশি শক্তিশালীই হয়ে উঠবেন।

তাই যেকোনো অবস্থানে নিজের জন্য দাঁড়াতে শেখার জন্য এই ১০টি সহজ পন্থা আপনাকে সাহায্য করবে।

) স্বচ্ছ ও প্রকৃত রূপে থাকবার অনুশীলন করুন

এটি হয়তো অনেকসময় কঠিন বলে মনে হবে, কিন্তু আপনি যদি নিজেকে সম্পূর্ণ মুক্ত ও সৎভাবে প্রকাশ করতে শেখেন তবে আপনার কাঁধ থেকে অনেক বড় বোঝা নেমে যাবে। প্রায়ই আমরা ঠোঁটে আধখানা হাসি ঝুলিয়ে রেখে মাথা নাড়াই এবং যা ভাবি, তা বলতে পারি না। কারণ তা বলতে চর্চার প্রয়োজন পড়ে, কিন্তু নিজের প্রকৃত রূপে থাকতে শেখা এবং সকল অনুভূতি সহজে মুক্তভাবে প্রকাশ করতে পারাটাই এর প্রথম ধাপ। একবার আপনি এই অভ্যাস শুরু করুন কোনোরূপ প্রতিরক্ষার ভাবনা ছাড়াই, নিজের কথা শুনুন এবং তারপরই লোকে আপনার কথা শোনা শুরু করবে।

) ছোট কিন্তু শক্তিশালী পদক্ষেপ নিন

আপনি যদি দৃঢ়ভাবে নিজেকে গড়ে তুলতে সংগ্রাম করতে থাকেন, তবে নিজের জন্য ছোট ছোট পদক্ষেপ নিন। এমনকি আরেকটু আত্মবিশ্বাসের সাথে মাথা উঁচু করে, কাঁধ সোজা করে হাঁটতে শেখাটাও আপনাকে আত্মবিশ্বাসী চেহারায় ফিরে আসতে সাহায্য করবে। এই আত্মবিশ্বাসটুকু অন্যদের সাথে কথা বলার সময়ও প্রবাহিত করুন। এরূপ আচরণ আপনার জীবনের সব অংশেই প্রযোজ্য। স্টারবাকসে আপনার সামনের থাকা লোকটি বিরক্ত করেছে? তাকে নম্রভাবে পেছনে গিয়ে বসতে বলুন। কোনো পরিষেবা সংস্থা থেকে পাওয়া বিলে অহেতুক চার্জ যোগ করেছে? তাদেরকে কল করুন এবং ব্যাপারটির মীমাংসা করুন।

) কেউ আক্রমণ করলে তাদের সরে যাবার অপেক্ষা করুন

আপনি যখন আরো আত্মবিশ্বাসের সাথে নিজেকে প্রকাশ করতে পারবেন, তখন আপনি এটিও শিখবেন যে যারা আপনাকে অতিক্রম করতে চায়, তাদের মুখোমুখি কীভাবে হতে হয়। সবসময়ই আপনার আশেপাশে এমন লোক থাকবে যারা আপনাকে আক্রমণ করতে চাইবে। এটি গুরুত্বপূর্ণ যে আপনি ইতিবাচক হয়েও শান্ত থাকবেন যদি আপনার মনে হয় যে কেউ আপনাকে উত্যক্ত করার চেষ্টা করছে। এসব আচরণকে নিজের উপর প্রভাব ফেলতে দেবেন না এবং হুটহাট প্রতিক্রিয়াও দেখিয়ে বসবেন না। আপনাকে আরো উত্যক্ত করার সুযোগটিও তাদের দেবেন না। আপনি আপনার মতো উঁচ্চতায় পৌঁছান, কিন্তু পা যেন সবসময় মাটিতে থাকে, তা নিশ্চিত করুন।

) আপনাকে আসলেই কোন জিনিসটি বিরক্ত করছে, তা চিহ্নিত করুণ

যখন কোন কিছুতে আপনি চরম বিরক্ত বোধ করেন কিন্তু ঝামেলা এড়ানোর জন্য চুপ করে থাকেন তাহলে সেটা আপনার উপর আরো বেশি স্ট্রেস ও উত্তেজনার সৃষ্টি করবে। অবশ্যই কোনোকিছু বা যদি কারো কোনো বিরক্তিকর আচরণ আপনাকে উত্যক্ত করলে তাদের মুখোমুখি হবার বিষয়টি ভীতিকর। কিন্তু সে সাহসটুকু আপনার মধ্যে বেড়ে ওঠা উচিত। কিন্তু সেসব বিষয়ের মুখোমুখি হওয়াটা আপনাকে আরো ভালো বোধ করাবে এবং আপনার উপর সেটির নিয়ন্ত্রণ আর থাকবে না। এটি মনে রাখবেন যে মানুষ আপনার মন পড়তে পারে না; আপনি যদি আপনার বিরক্তির বিষয়টি স্পষ্টভাবে উচ্চারণ না করেন, তবে কেউই তা জানতে পারবে না।

) আক্রমণের পূর্বে নিশ্চয়তা প্রয়োজন

সঠিক অবস্থানে দাঁড়িয়ে থাকার বিষয়টি অবশ্যই প্রলুব্ধকর, বিশেষ করে আপনি যখন নিশ্চিত যে আপনিই ঠিক। আপনার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে, আপনি ন্যায়সঙ্গতভাবে নিজেকে এমন কারো বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা করছেন, যে সম্পূর্ণ ভুল। কিন্তু তৎক্ষণাৎ প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে এই আবেগীয় উদ্দীপনাটি রোধ করা দরকার। তাই আপনি বরং একটি লম্বা শ্বাস নিন এবং শান্তভাবে তাদেরকে আপনার অবস্থানটি পরিষ্কার করে বুঝিয়ে বলুন। কোনো আক্রমণাত্মক শব্দ বা সংঘর্ষমূলক কণ্ঠস্বর এড়িয়ে চলুন। আপনি যা সত্যিই বোঝাতে চান, সেটিই পরিষ্কার করে বলুন এবং তাদের জবাবটুকুও মনোযোগ দিয়ে শুনুন। শুধুমাত্র তখনই একটি প্রকৃত আলোচনা সম্ভব।

) গাইতে গাইতে গায়েন (অনুশীলনের মাধ্যমেই নিখুঁত হয়ে ওঠা যায়)

একবার যখন আপনি বুঝতে পারবেন যে নিজের জন্য দাঁড়ানোর অর্থ আসলে কী, তখনই আপনাকে বারবার এর চর্চা চালিয়ে যেতে হবে যে আপনার অনুভূতিগুলো সজোরে প্রকাশ করবার। যখন কেউ এমন কিছু বলবে যার সাথে আপনি পুরোপুরি অসম্মতি জ্ঞাপন করেন অথবা এমন কিছু করা হয় যার মাধ্যমে আপনার অপছন্দের কাজটি করতে হবে এবং আপনি তা করতে চান না, তখন কিছু বলুন। গবেষণায় দেখা গেছে যে একটি নতুন অভ্যাস চালু করতে ৬৬ দিন সময় লাগে, তাই ২ মাস সময় ধরে আপনার নতুন ইতিবাচকতার সাথে লেগে থাকুন এবং ফলাফল দেখে হয়তো আপনি অবাকই হবেন।

) উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হন

আমরা নিজেদেরকে প্রায়ই এমন কিছু অবস্থায় আবিষ্কার করি যেমন: অগোছালো সহকর্মী বা গবেট রুমমেটের সাথে রুম ভাগ করে নেওয়া। আপনি হয়তো অনেক পরিস্থিতিতে চুপচাপ সহ্য করে যান। হয়তো নীরব-শীতল দ্বন্দ্বে লিপ্ত হওয়াটাও আপনার কাছে ভালো উপায় মনে হতে পারে, যেমন রাগ করে ঘর গোছানো বা চোখা মন্তব্য করা ইত্যাদি। কিন্তু এর পরিবর্তে সরাসরি কথা বলুন। ব্যক্তিটিকে বলুন যে আপনার সমস্যা হচ্ছে। সোজাসুজি আপনার বক্তব্য স্পষ্ট করে বলুন। এধরনের পরিস্থিতির জন্য সহজ একটি সমাধান কাজে লাগাতে পারেন, যেমন বলতে পারেন, “তুমি যদি রাতে তোমার জায়গাটা একটু গুছিয়ে ফেলতে পার, তবে অনেক ভালো হতো।”

) নিজের জন্য সময় খুঁজে নিন

সময় অবশ্যই মূল্যবান এবং সীমিত একটি সম্পদ এবং অনেকসময় আমরা চাপের মধ্যে পড়ে যাই, যখন সেটি অন্য কারো সাথে ভাগাভাগি করে নিতে হয় এবং বিশেষ করে যখন আমাদের “না” বলার সামর্থ্য থাকে। এমন অনেক সময় আসে যখন আপনার কোনো বিকল্প থাকে না, যেমন আপনার উর্ধ্বতন কর্মকর্তা কোনো বড় প্রজেক্টের কথা যখন বললে হয়তো আপনার করার তেমন কিছু থাকে না। কিন্তু কোনোরূপ বাধ্যবাধকতা আসতে দেবেন না, যা আপনি কীভাবে দিনটি কাটাবেন, তা পুরোপুরি নির্ধারণ করে দেয়। আপনি নিজে আপনার সময়ের নিয়ন্ত্রণ করুন। যখন সম্ভব কোনো কাজে জড়ান, অথবা এমন কোনো লোক বা পরিস্থিতি থেকে নিজেকে সরিয়ে নেবার অবস্থায় থাকুন, যারা আপনার রুটিনের সাথে খাপ খাচ্ছে না।

) এটি স্বীকার করুন যে আপনাকে কেউই বাতিল করে দিতে পারবে না

আপনার অনুভূতি এবং কর্মকাণ্ডের সম্পূর্ণ অধিকারে রয়েছেন আপনি। আপনার বিশ্বাস, আবেগ, চিন্তা এবং ধারণা আপনার কাছেই আছে এবং অন্য কেউ আপনাকে বলতে পারে না যে আপনি কী অনুভব করবেন বা আপনার মতামত বাতিল করে দিতে পারে না। যেমন আপনি যদি অন্য কারো দৃষ্টিভঙ্গি বাতিল করতে চান, আপনিও সমস্যা সমাধানের কোনো সম্ভাবনা এবং একটি মুক্ত আলোচনার কণ্ঠরোধ করছেন।

১০) যতক্ষণ পর্যন্ত পারছেন না, ততক্ষণ ভাণ করুন

নিজের জন্য দাঁড়াবার এই শিক্ষনীয় বিষয় রাতারাতি সম্পন্ন হবে না। ইতিবাচক হয়ে গড়ে উঠতেও অনেকটা সময় লাগে। যখন আপনি শিক্ষনীয় ধাপের মধ্যে রয়েছেন, আপনার মনে করতে হবে যে আপনি নতুন একটি ভূমিকায় অভিনয় করছেন।

মনে করুণ যে আপনার জানা সবচাইতে ইতিবাচক মানুষটি আপনি। তারা কীভাবে কঠিন পরিস্থিতিতে নিজেদের সামলায়? এমন অনেক সময় আসবে যখন তারা অতিরিক্ত উদ্দীপনার ফলে সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে। নিজের জন্য দাঁড়াবার এই শিক্ষনীয় প্রক্রিয়া বাইকে চড়ার মতো: শেষমেশ আপনি ঠিকঠাক ব্যলেন্সটা পেয়েই যাবেন।

www.success.com সাইটে পূর্বপ্রকাশিত আর্টিকেলের ছায়া অবলম্বনে লেখা।    

আপনি উদ্যমী!
আপনার জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে চান?  

তাড়াতাড়ি সাবস্ক্রাইব করুন।

আমাদের সেরা কনটেন্ট আপনার ইমেইলে পৌছে যাবে প্রতি সপ্তাহে।  

Invalid email address
আপনি যেকোনো সময় আনসাবস্ক্রাইব করতে পারবেন।  

মন্তব্য করুন