যথেষ্ট অভিজ্ঞতা না থাকা সত্বেও কাঙ্ক্ষিত চাকরি পাওয়ার ৫টি উপায়
এতদিনে আপনি একটি কাঙ্ক্ষিত চাকরির বিজ্ঞপ্তি পেয়েছেন, কিন্তু সমস্যা হল তাতে উল্লিখিত আবশ্যক যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার দিক দিয়ে আপনার কিছু স্বল্পতা রয়েছে। এমন অবস্থায় আপনি নিরুৎসাহিত হয়ে পড়লেন।
কিন্তু আপনার যদি সবগুলো আবশ্যিক শর্ত নাও থেকে থাকে, এরপরও আপনার চাকরিটির জন্য আবেদন করা উচিত। মনে প্রশ্ন জাগছে যে “কেন”? ট্রানসিজনের প্রতিষ্ঠাতা ও জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির প্রাক্তন ক্যারিয়ার অ্যাম্বাসেডর জেসন প্যাটেলের মতে, “আপনি হয়ত নিয়োগদাতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ফেলতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ তিনি বলেছেন, আপনার জীবন বৃত্তান্তে হয়ত এমন কিছু কিওয়ার্ড আছে বা সংযুক্ত কাভার লেটারটিতে এমন কিছু কথা লেখা রয়েছে যা নিয়োগকর্তা হয়ত একজন প্রার্থীর মাঝে খুঁজছেন”।
“ মূলকথা হচ্ছে ইন্টারভিউ দেয়ার সুযোগ পাওয়া। যদি আপনি ইন্টারভিউ দেয়ার সুযোগ পেয়ে নিয়োগকারীদের প্রতিষ্ঠানের দোরগোড়ায় পৌঁছে যান তবে বুঝতে হবে ঠিক পথেই চলছেন আপনি”।
টাইগ্রিস ইভেন্টসের সিইও এবং নিয়োগের কাজে নিযুক্ত কর্মকর্তা সেরেনা হলমেসের মতে, “আমরা হিউম্যান ফ্যাক্টরের কথাটা ভুলে যেতে পারি না”। তিনি আরো বলেন, “যেকোন পদের জন্য নিয়োগ এবং সাক্ষাৎকার পর্ব একটি চূড়ান্ত রকমের আবেগপূর্ণ কাজ। যখন আপনি ইন্টারভিউ দেওয়ার জন্য উপস্থিত হলেন ও সামনে বসা সাক্ষাৎগ্রহণকারীদের সাথে একটা ইমোশনাল অ্যাটাচমেন্ট তৈরি করে ফেলতে পারেন তাহলে অনেকসময় ঐ পদের জন্য আপনি শতকরা ১০০ ভাগ উপযুক্ত না হলেও নিয়োগকারীরা অনেক কিছু বিবেচনা করে থাকেন”।
তাহলে কিভাবে আপনি ইন্টারভিউ কল পাওয়ার জন্য নিজেকে তৈরি করবেন এবং সাক্ষাৎকার পর্বে নিজেকে কিভাবে একজন উপযুক্ত প্রার্থী হিসেবে প্রমাণ করবেন? নিম্নে উল্লেখিত এই ৫টি উপায় অবলম্বনে আপনি খুব সহজেই যথেষ্ট অভিজ্ঞতা না থাকা সৎত্ত্বেও কাঙ্ক্ষিত চাকরিটি পেতে পারেন।
১। যে বিষয়গুলোতে আপনি দক্ষ সেই বিষয়গুলো আপনার জীবনবৃত্তান্তটিতে উল্লেখ করুন
প্যাটেলের মতে, “খুব হতাশাজনক একটা ব্যাপার হচ্ছে যে কম যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থীরা বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই একটি সাধারণ জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়ে থাকে”। তিনি আরো বলেন, “কারো যদি কোন কমতি থেকে থাকে, তাহলে সেই কমতিটাকে আরো বড় করে প্রকাশ করার তো কোন প্রয়োজন নেই”। এর চেয়ে বরং চাকরির বিজ্ঞপ্তিটি ভালো করে পড়া উচিত এবং তাতে কি কি আবশ্যকতা ও যোগ্যতা চেয়েছে তার দিকে দৃষ্টিপাত করা উচিত। প্যাটেলের মতে, “যদি আবশ্যকতা ও যোগ্যতার সাথে আপনার পূর্ব অভিজ্ঞতা মিলে যায়, তবে আপনার পূর্বের কাজগুলোকে জীবনবৃত্তান্তে ভালোভাবে উল্লেখ করুন”। জীবনবৃত্তান্ত বাছাইয়ের পর্বে, হোক সেটা কোন মানুষের দ্বারা বা মেশিনের দ্বারা, আপনি প্রাথমিকভাবে বাছাইপর্বে উতরে যাবেন।
২। সোশ্যাল মিডিয়াতে নিজেকে লক্ষণীয় করে তুলুন
পদ্ম যেমন পাঁকে ফোটে, ঠিক তেমনি হাজার লোকের ভীড়ে আপনার সামান্য পরিচিতি আপনাকে বাকি সবার তুলনায় আলাদা করে তুলবে। হতে পারে সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে নিয়োগকারী হয়ত আপনাকে কিছুটা হলেও চেনে। হোলমেস বলেন, “তাই সবসময় চেষ্টা করুন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর মাধ্যমে বিভিন্ন কোম্পানীর সাথে যোগাযোগ করার এবং বিভিন্ন কোম্পানীর দেয়া ব্লগ পোস্ট বা অন্যান্য মাধ্যমে করা কার্যক্রমগুলোতে কমেন্ট করুন ও শেয়ার করুন”।
৩। এলিভেটর পিচ বা শুরুর কথা সম্পর্কে আপনাকে ভালোভাবে অবগত হতে হবে
শুরুর বক্তব্যটুকুই হল আপনার অভিজ্ঞতার সারসংক্ষেপ যা কিনা আপনার পূর্বের কাজ সম্পর্কে সবাইকে অবহিত করবে। এই অংশে উল্লেখিত কথাগুলোই আপনার স্বপক্ষে যুক্তি দাঁড় করাবে যে সেই চাকরিটির জন্য আপনি কেন উপযুক্ত। প্যাটেলের মতে,“আপনি কি করেছেন, এখন কি করছেন এবং কোথায় কাজ করেছেন সে ব্যাপারে উল্লেখ থাকা উচিত এলিভেটর পিচ বা শুরুর কথায়”। ইন্টারভিউতে সাধারণ ও প্রায়শ করা একটি প্রশ্ন হচ্ছে “আপনার সম্পর্কে বলুন”, এই প্রশ্নেরই উত্তর হচ্ছে এলিভেটর পিচ। প্যাটেল বলেন, “তাই ইন্টারভিউ দিতে যাওয়ার পূর্বে ২ মিনিটের একটি উত্তর তৈরি করে ফেলুন”। সক্ষিপ্ত এবং গোছানো উত্তর নিয়োগকর্তাদের মন কাড়তে সহায়তা করবে।
৪। লিঙ্ক তৈরি করা বা যোগাযোগ করা
হোলমেস বলেন, “আপনি যদি কোন একটি প্রতিষ্ঠানের নিয়োগের কর্মকর্তা বা নিয়োগ বিভাগের প্রধাণের সাথে লিংকডইনে সম্পর্কযুক্ত থাকেন এবং তাদের দেয়া পোস্টগুলোতে লাইক দেয়া, কমেন্ট করা বা শেয়ার করার মাধ্যমে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেন। এতে করে আপনার কথা সেই ব্যক্তির স্মরণে থাকবে এবং নিয়োগকারীর দৃষ্টি আকর্ষণে সাহায্য করবে”। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বর্তমান কর্মীদের সাথেও যোগাযোগ রাখতে পারেন, তাহলে সেই প্রতিষ্ঠানে কাজের ধরণ বা রেফারেন্সের জন্য তাদেরকে অনুরোধ করতে পারেন।
৫। আত্মবিশ্বাসী হওয়ার চেষ্টা করুন
যদি আপনি দৃঢ়ভাবে সুনিশ্চিত হন যে এই চাকরিটি পাওয়ার জন্য আপনার যোগ্যতা নেই, তাহলে আপনার এই চিন্তা বা মনোভাবটি কিছুতেই নিয়োগকারী বা পরিচালককে বুঝতে দেবেন না। প্যাটেলের একটি উৎসাহমূলক উক্তি এখানে উল্লেখ করছি, “লোকের সাথে যোগাযোগ স্থাপনের চাবিকাঠি হল নিজেকে আত্মবিশ্বাসী দেখানো”। অনেক বড় ও বিখ্যাত পেশাদার ব্যক্তিরা নিজেদেরকে আত্মবিশ্বাসী প্রমাণ করার মাধ্যমে সাফল্যের শিখরে উঠেছেন”।
কিন্তু কিভাবে, তাদের মতে আত্মবিশ্বাসী না হয়েও কি আপনি নিজেকে আত্মবিশ্বাসী প্রমাণ করবেন? প্যাটেলের মতে, “আত্মবিশ্বাসের সাথে যৌক্তিক ও প্রাসঙ্গিক কথা বলার মাধ্যমে আপনি নিজেকে আত্মবিশ্বাসী হিসেবে প্রমাণ করতে পারেন এবং তা সর্বদা কাজে আসে”।
লিখেছেন জিল্লিয়ান ক্রমের।
www.glassdoor.com সাইটে পূর্বপ্রকাশিত।
মন্তব্য করুন