মার্ক জুকারবার্গ সম্পর্কে অজানা ২২ টি তথ্য
মার্ক জুকারবার্গ বিশ্বের একজন স্বনামধন্য সিইও এবং ৩২ বছর বয়স পর্যন্ত তিনি জীবনে যা কিছু অর্জন করেছেন তার গল্পটাও বিস্ময়কর।
প্রতিদিন কোটি কোটি মানুষ ফেসবুকে তাদের অনেকটা সময় ব্যয় করে থাকে। মার্ক জুকারবার্গ চ্যান জুকারবার্গ ইনিশিয়েটিভ নামক একটি সংস্থার মাধ্যমে চিকিৎসা ক্ষেত্রে গবেষণার জন্য কোটি কোটি টাকা দান করে থাকেন। আর দশটা সাধারণ মানুষের মত তার জীবনেও রয়েছে নানা ঘটনা যা আমাদের কাছে অজানা ছিল। চলুন আজকে জানা যাক ফেসবুকের এই প্রতিষ্ঠাতা সম্পর্কে সেই অজানা তথ্যগুলি-
১। তিনি প্রায় মাইক্রোসফটের জন্য কাজ করতে যাচ্ছিলেন
উচ্চ মাধ্যমিকে পড়াকালীন তিনি সিন্যাপস মিডিয়া প্লেয়ার নামক একটি এমপিথ্রি প্লেয়ার অ্যাপের সহনির্মাতা ছিলেন। যাকে স্পটিফাই বা প্যান্ডোরার পুরনো ভার্সন বলা যায়। এই এমপিথ্রি প্লেয়ারে প্রিয় গানগুলো সংরক্ষণ ও পছন্দ অনুযায়ী প্লেলিস্ট তৈরি করার সুবিধা ছিল।
মাইক্রোসফট কোম্পানিটি এবং এর প্রতিষ্ঠাতাদেরকে কিনতে চেয়েছিল, কিন্তু জুকারবার্গ ও সহনির্মাতা অ্যাডাম ডি’এঞ্জেলো – যিনি পরে কোরা (Quora) প্রতিষ্ঠা করেন – সিয়াটেল টেক জায়ান্টে কাজ করার পরিবর্তে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানটির পেটেণ্ট করান এবং কলেজের পড়াশোনায় ফিরে যান।
২। মাধ্যমিক স্কুলে পড়াকালীন তার আবিষ্কারক সত্তার বিকাশ ঘটে
জুকারবার্গের বাবা একজন দন্ত চিকিৎসক ছিলেন। তাঁর কাছে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা কখন এসে পৌঁছাবে, সে সম্পর্কে জানার জন্য জুকারবার্গ ১২ বছর বয়সে চিকিৎসক বাবার জন্য একটি ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং প্রোগ্রাম তৈরি করেছিলেন। এই অ্যাপটি জুকনেট নামে পরিচিত ছিল।
৩। তিনি পপ সংস্কৃতির ভক্ত ছিলেন
মার্ক জুকারবার্গের প্রিয় বই ও টিভি শো এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে যথাক্রমে দ্যা অ্যানেইড ও দ্যা ওয়েস্ট উইং। এই টিভি শো এর উপস্থাপক হলেন এরোন সরকিন। এরোন সরকিনের আরো একটি পরিচয় রয়েছে আর তা হল তিনি ফেসবুকের উদ্ভাবন নিয়ে নির্মিত সিনেমা দ্যা সোশ্যাল নেটওয়ার্ক এর লেখক ছিলেন।
৪। মিতব্যয়ী হিসেবে তিনি পরিচিত
যদিও তার একটি সুন্দর বাড়ি রয়েছে যা মর্গান ফ্রিম্যান এর ভয়েস সঙ্গে একটি এআই বাটলার দ্বারা চালিত হয়। ২০১০ সালে দ্যা নিউ ইয়োর্কার এ অনুষ্ঠিত একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন যে, তার অ্যাপার্টমেন্টের সব কিছুই তিনি ক্রেইগলিস্টে পেয়েছিলেন।
৫। ফেসবুকের এমন রঙ নির্ধারণের পেছনে রয়েছে তার দূর্বল দৃষ্টিশক্তি
জুকারবার্গের লাল-সবুজ রঙয়ের প্রতি রয়েছে বর্ণান্ধতা, আর তাই ফেসবুকের লোগোর রঙ হিসেবে তিনি বেছে নিয়েছেন নীল রঙকে।
৬। তিনি সবসময় একজন উচ্চমানের কোডার ছিলেন না
ডামি বইগুলো থেকে তিনি সর্বপ্রথম সি++ কোডিং শিখেছিলেন।
৭। বহুভাষী জুকারবার্গ
ল্যাটিন ভাষার মত প্রাচীন ভাষাগুলোর প্রতি রয়েছে তার অসীম আগ্রহ। তিনি মান্দারিন ভাষায় কথা বলতে পারেন।
৮। ফেসবুক বিক্রয়ের বহু প্রস্তাবকে তিনি বিনয়ের সাথে প্রত্যাখ্যান করেছেন
নিউজ কর্পোরেশন, মাইস্পেস, ভায়াকম, ইয়াহু, এনবিসি, মাইক্রোসফট ও গুগলের মত নামী দামি সব কোম্পানী থেকে বিভিন্ন সময়ে মার্ক জুকারবার্গকে ফেসবুক বিক্রয়ের প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল, কিন্তু তিনি তার সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন। তাই আজও ফেসবুকের উদ্ভাবক ও কর্তা হিসেবে আমরা জুকারবার্গকে তার স্বস্থানেই দেখতে পাই।
৯। তার ও তার স্ত্রীর প্রথম পরিচয় পর্বটি খানিকটা অদ্ভুত ছিল
জুকারবার্গের স্ত্রী একজন চিকিৎসক। তার ও তার স্ত্রী প্রিসিলার প্রথম দেখা হয়েছিল হার্ভার্ডে অনুষ্ঠিত একটি প্রতিষ্ঠানের ভোজসভার শৌচাগারে। বর্তমানে তারা সন্তানের মা-বাবা হয়েছেন এবং জনহিতৈষী হিসেবে তারা সুপরিচিত।
১০। তিনি স্টিভ জবসের একজন প্রশংসক
অ্যাপল ব্রান্ডের মরহুম প্রতিষ্ঠাতার নেতৃত্ব প্রদানের ধরণ তাকে এতটাই অনুপ্রাণিত করেছিল যে এর প্রতিফলন আমরা দেখতে পাই জুকারবার্গের বিজনেস কার্ডের উপর লেখা মেসেজ থেকে। মেসেজটি হচ্ছে, “আই অ্যাম সিইও, বিচ”।
১১। টুইটারেও রয়েছে তার অ্যাকাউন্ট
যদিও টুইটারে তার উপস্থিতি খুব একটা দেখা যায় না, কিন্তু ২০০৯ সালে থেকে এ পর্যন্ত তিনি মোট ১৯ বার টুইট করেছেন।
১২। তিনি নিজেই নিজেকে উপহাস করেন
জুকারবার্গের কিছু কাজ মাঝে মাঝে বেখাপ্পা লাগে। স্যাটারডে নাইট লাইভ অনুষ্ঠানে তাকে নিয়ে অ্যান্ডি স্যাম্বার্গের করা হাস্যরসাত্মক মন্তব্যগুলোকে একটি পোস্টের মাধ্যমে তিনি লিখিতভাবে সমর্থন জানিয়েছিলেন।
১৩। তিনি যথেষ্ট ফিটনেস সচেতন
২০১৬ সালে তিনি ফিটনেস রক্ষার জন্য সেই বছরে ৩৬৫ মাইল দৌড়ানোর একটি লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিলেন এবং গ্রীষ্মের প্রায় মাঝামাঝি এসে তিনি তার সেই লক্ষ্য পূরনে সমর্থ হন।
১৪। আলবার্ট আইনস্টাইন ও পাবলো পিকাসোর মত ব্যক্তিদের জীবনদর্শন তিনি অনুসরণ করে থাকেন
আইনস্টাইন ও পাবলো পিকাসোর দুটি উক্তি যা জুকারবার্গকে সবসময় অনুপ্রাণিত করে থাকে, সেই উক্তিদ্বয় এখানে উল্লেখ করা হল –
আইনস্টাইনের উক্তি, “কোন একটা বিষয়কে যতটা সম্ভব সহজ ও সরল রাখা উচিত”।
পিকাসোর উক্তি, “সব শিশুর মাঝেই রয়েছে শিল্পী সত্ত্বা। এই সত্ত্বার বিকাশ নির্ভর করে হচ্ছে সময়ের সাথে সাথে একজন তার শিল্পী সত্ত্বাকে কিভাবে বেড়ে উঠতে সাহায্য করে, তার উপর”।
১৫। তার পোষা কুকুরটিও একজন সেলিব্রেটি বটে
জুকারবার্গের বিস্ট নামের একটি হাঙ্গেরিয়ান পোষা কুকুর রয়েছে। ফেসবুকে এই কুকুরটিরও রয়েছে একটি ফ্যান পেজ, যাতে লাইকের সংখ্যা প্রায় দুই মিলিয়নেরও বেশী। জুকারবার্গের মেয়েও এই কুকুরের একজন ভক্ত। তার মেয়ে ম্যাক্সের প্রথম উচ্চারিত শব্দ ছিল “কুকুর”।
১৬। ডজনখানেক লোক রয়েছে যারা জুকারবার্গের ফেসবুক পেজটি দেখাশুনা করে থাকেন
১২ জন সদস্যের একটি দল রয়েছে যারা জুকারবার্গের ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি দেখাশুনা করেন। বিভিন্ন পোস্ট দিয়ে থাকেন, তাতে করা কমেন্টগুলো মনিটর করে থাকেন এবং সর্বোপরি সার্বক্ষণিক নিবিড় নজরদারি করে থাকেন।
১৭। তিনি তার প্রাইভেসীর ব্যাপারে যথেষ্ট সংরক্ষণশীল
জুকারবার্গ তার প্রাইভেসীকে সুনিশ্চিত করার জন্য বেশকিছু গুরুত্বপূর্ন ও আইনি পদক্ষেপ নিয়ে রেখেছেন। তিনি ২০১৪ সালে হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে ১০০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের এক খন্ড জমি কিনেছেন এবং সম্প্রতি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে তিনি কিছু আইনি পদক্ষেপ নিয়ে রাখবেন যাতে করে ঐ জমির পূর্ব মালিকের বংশধররা ভবিষ্যতে এসে জমির মালিকানা দাবী করতে না পারে। এছাড়াও ক্যালিফের পলো অল্টোতে অবস্থিত তার বাড়ির ভেতরে ও চারপাশে অবস্থিত আরো ৪টি বাড়ি ভেঙ্গে ফেলার চেষ্টা করেছিলেন তিনি।
১৮। অভিনেতা ভিন ডিজেলের সাথে রয়েছে তার সখ্যতা
দ্যা নিউইয়র্ক টাইমস এর সাথে অনুষ্ঠিত একটি সাক্ষাৎকারে ভিন ডিজেল তাদের সম্পর্ক নিয়ে বলেন, “প্রায় দুবছর আগে আমরা ফেসবুকে আড্ডা দিচ্চিলাম এবং আমি ফাস্ট ৭ মুভিটি নিয়ে যথেষ্ট উতলা ছিলাম”। মার্ক বললেন, “তোমার অভিনীত মুভিগুলোর মধ্যে আমার কাছে সবচেয়ে প্রিয় মুভি হল জান্ডার কেজ”। ভিন ডিজেল বলেন, “যখন আমি আর মার্ক একসাথে থাকি আর আমার অভিনীত কোন চরিত্রের কোন একটা ডায়ালগ কিছুটা ভুল বলে ফেলি কখনো, সাথে সাথে মার্ক আমাকে শুধরে দেয়। ব্যাপারটা সত্যিই আমার কাছে লজ্জাজনক”।
১৯। ছবিতে তাকে যতটা লম্বা দেখা যায়, বাস্তবে তিনি ততটা লম্বা নন
জুকারবার্গের উচ্চতা মাত্র ৫ ফিট ৭ অথবা ৮ ইঞ্চি, কিন্তু ছবিতে তাকে বেশ খানিকটা লম্বাই দেখা যায়। তিনি দাঁড়ানোর কিছু কৌশল অবলম্বন করতেন, যার কারণে তাকে ছবিতে লম্বা দেখা যায়।
২০১০ সালে নিউ ইয়োর্কারে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়, “তার উচ্চতা মাত্র পাঁচ ফিট আট ইঞ্চি, কিন্তু তার দাঁড়ানোর ভঙ্গির কারণে তাকে খানিকটা আরো বেশী লম্বা দেখায়। তিনি দাঁড়ানোর সময় সামনের দিকে বুক ঠেলে সোজা হয়ে দাঁড়ান, মনে হবে যে তিনি সটান হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন”।
লেখক গ্রাহাম স্টারের মতে, জুকারবার্গের ছবি তোলার কিছু কৌশল রয়েছে যার কারণে তাকে লম্বা দেখায়। কৌশলগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে ক্যামেরার খুব কাছে দাঁড়ানো এবং অপরটি হচ্ছে খাটো খাটো মানুষদের সাথে দাঁড়ানো।
২০। তার সবসময় পরা টি-শার্টের দাম ৩০০ থেকে ৪০০ ডলার
জুকারবার্গকে আমরা সবসময় একটি ধূসর টি-শার্ট, একটি হুডি, জিন্স ও নাইকি স্নিকার জুতা পরিহিত করা অবস্থায় দেখে থাকি। একটি বিশেষ কারণে তাকে সবসময় একই ধরনের পোশাকে তাকে দেখা যায়। ২০১৪ সালে একটি প্রশ্নোত্তর পর্বে, যখন জুকারবার্গকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে তিনি কেন সবসময় একই ধরনের পোশাক পরিধান করেন এর উত্তরে তিনি বলেন, “আমি সকল বিষয়ে যতটা সম্ভব কম সিদ্ধান্ত নেয়ার চেষ্টা করে থাকি যাতে করে সমাজের জন্য কাজে আমি আরো বেশী করে সময় দিতে পারি”।
জুকারবার্গ ধূসর রঙয়ের যে টি-শার্টটি পরেন তা ডিজাইন করেছেন ব্রুনেলো কুসিনেলি নামক একজন ইটালিয়ান ডিজাইনার যার দাম ৩০০ থেকে ৪০০ ডলার।
ভ্রেশ ক্লথিং নামক একটি রিটেইলার শপ জুকারবার্গের ফ্যানদের কাছে তার পরিহিত শার্টের রেপ্লিকা পৌঁছে দিয়েছেন সুলভ মূল্যে। আর এইজন্য তারা প্রথমে টি-শার্টটির রং, ম্যাটেরিয়াল ও দৈর্ঘ্য নিয়ে বিশেষভাবে পর্যবেক্ষণ করেন এবং এই সিইও স্টাইলের টি-শার্টটির রেপ্লিকা সবার জন্য সুলভ করে দিয়েছেন।
২১। ফেসবুকে তাকে কখনো ব্লক করা সম্ভব নয়
আপনি চাইলেই তাকে আনফলো করতে পারেন। তবে কোন ফেসবুক ইউজার জুকারবার্গ বা তার স্ত্রী প্রিসিলাকে কখনোই ফেসবুকে ব্লক করতে পারবে না। যদি কেউ তাদেরকে ব্লক করতে চায় তাহলে তাদের কাছে পৌঁছে যাবে এই এরর মেসেজ, “ দিস প্রোফাইল ক্যান নট বি ব্লকড ফর নাউ”। একজন ফেসবুক বিশেষজ্ঞ কোয়ার্টজকে জানান, “যে ফেসবুক আইডিগুলোকে খুব স্বল্প সময়ে বহুবার অনেক আইডি থেকে ব্লক করা হয়েছে, এমন আইডিকে ব্লক করতে গেলে এক ধরনের এরর মেসেজ পেয়ে থাকেন”।
২২। তার নিরাপত্তার জন্য তিনি একটি মোটা অংকের অর্থ খরচ করে থাকেন
২০১৭ সালে তার নিরাপত্তার জন্য তিনি প্রায় ৭.৩ মিলিয়ন ডলার খরচ করেছিলেন। এই পরিমাণ অর্থ ফেসবুক জুকারবার্গের সুরক্ষার কাজে দায়িত্বপ্রাপ্ত ইউ.এস সিকিউরিটিস অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে জমা দিয়েছিল। এই অর্থের মাঝে রয়েছে তার ব্যক্তিগত বিমানে করে যাতায়াতকালীন সুরক্ষা খরচও। এই অর্থের পরিমাণ তার ২০১৭ সালের কমপেনসেশন প্যাকেজের শতকরা ৮৩ শতাংশ। ২০১৬ সালে এই অর্থের পরিমাণ ছিল ৪.৯ মিলিয়ন ডলার।
লিখেছেন নিনা যিপকিন।
www.entrepreneur.com সাইটে পূর্বপ্রকাশিত।
মন্তব্য করুন