মানসিকভাবে শক্তিশালী মানুষ: যে ১৩ টি জিনিস তারা এড়িয়ে যায়
কর্মীরা বেশিরভাগ সময়ই তাদের শারীরিক ক্ষমতা এবং স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তিত থাকেন, কিন্তু বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় মানসিক সক্ষমতা আরো অধিক গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষকরে উদ্যোক্তাদের জন্য, অনেকগুলো আর্টিকেল খুবই গুরুত্বপূর্ণ কিছু মানসিক ক্ষমতার কথা বলে যেমন-জিদ,চারিত্রিক দৃঢ়তা,আশাবাদ,এবং হার মেনে না নেয়ার মনোভাব যা কিনা ফোর্বসের লেখক ডেভিড উইলিয়ামস বলেন,’ব্যর্থতার পরও উঠে দাড়ানো।’
যাই হোক, আসুন আমরা মানসিক সক্ষমতা নির্ণয় করি সেইসব বিষয়গুলোকে নির্দেশ করে যা মানসিকভাবে শক্তিশালী মানুষেরা করে না। এই সপ্তাহান্তিক কালে, এমি মরিন একজন সাইকোথেরাপিস্ট এবং লাইসেন্সপ্রাপ্ত সমাজসেবক, তার একটি লিস্ট যা তিনি লাইফহ্যাক সাইটে প্রকাশ করেছেন তা আমার মনে গভীর ছাপ ফেলেছে। এটা আমাকে এতটাই প্রভাবিত করেছে যে আমি তার সেই লিস্টটি এখানে শেয়ার করছি আমার সেইসব ভাবনার সাথে যা আমি মনে করি বিশেষভাবে উদ্যোক্তাদের জন্য প্রযোজ্য।
১) নিজেদের জন্য দুঃখ বোধ করে সময় নষ্ট করা।
আপনি সাধারণত এমন কোন মানসিকভাবে শক্তিশালী মানুষদের দেখেন না যারা তাদের অবস্থার জন্য বা অন্যদের তাদের প্রতি খারাপ ব্যবহারের জন্য দুঃখ বোধ করে। তারা তাদের কাজ এবং কাজের ফলাফলের দায়িত্ব নেয় এবং এটা বুঝে যে জীবনে প্রায় সময়ই বেঠিক জিনিসই ঘটে থাকে। তারা নিজ উদ্যোগে খারাপ অবস্থা থেকে নিজেদেরকে বের করে আনে এবং সেই অভিজ্ঞতা থেকে প্রয়োজনীয় শিক্ষাটা নেয়। যখন কোন অবস্থা খারাপের দিকে মোর নেয়, তখন তারা ভাবে, ‘এ অবস্থা থেকে উত্তরণের পথ কি!’।
২) অন্যকে তাদের মন খারাপের কারণ হতে দেয়া।
মানসিকভাবে শক্তিশালী মানুষেরা অন্যদেরকে তাদেরকে নিচু বা খারাপ বোধ করানোর ক্ষমতা দেয় না। তারা মনে করে তাদের কাজ এবং আবেগ তাদের নিয়ন্ত্রণে আছে। তারা জানে তাদের এই আবেগ নিয়ন্ত্রনের ক্ষমতাই তাদের শক্তিমত্তা।
৩) পরিবর্তনকে ভয় পাওয়া।
মানসিকভাবে শক্তিশালী মানুষেরা পরিবর্তনকে আলিঙ্গন করে এবং চ্যালেঞ্জকে স্বাগত জানায়। তাদের সবচেয়ে বড় ভয় হলো সন্তুষ্ট এবং স্থির হয়ে থাকা। অনিশ্চয়তা এবং পরিবর্তনের পরিবেশ একজন মানসিকভাবে শক্ত মানুষকে উদ্যমী করে তুলতে পারে এবং তাদের সেরাটা বের করে আনতে পারে।
৪) তাদের নিয়ন্ত্রণে নেই এমন জিনিস নিয়ে সময় নষ্ট করা।
মানসিকভাবে শক্ত মানুষেরা খারাপ ট্রাফিক,হারিয়ে যাওয়া লাগেজ,বা বিশেষকরে অন্য মানুষদের সম্পর্কে অভিযোগ করে না, কারণ তারা এটা বুঝে যে এইসব ব্যাপারগুলো তাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। একটি খারাপ অবস্থায়, তারা এটা বুঝে যে একটা জিনিসই তাদের নিয়ন্ত্রণে আছে তা হলো ওই নির্দিষ্ট অবস্থায় তাদের জবাব এবং মনোভাব,এবং তারা সেটা খুব ভালোভাবেই ব্যবহার করে।
৫) অন্যদের সন্তুষ্টির জন্য সবসময় চিন্তা করা।
এমন কাউকে চিনেন যে সবসময় অন্যদেরকে সন্তুষ্ট করার জন্য ব্যতিব্যস্ত থাকে? অথবা অন্যদিকে এমন একজন যে নিজেকে শক্তিশালী প্রমান করার জন্যই অন্যদেরকে অসন্তুষ্ট করে? কোনটাই ভালো নয়। একজন মানসিকভাবে শক্ত মানুষ দয়ালু এবং স্পষ্ট থাকতে চায় এবং অন্যদেরকে খুশি করে যেখানে সংগত, কিন্তু প্রয়োজনে ঠিক কথা বলতে পিছপা হয় না। তারা চাইলে সুনিপুনভাবে সেইসব অবস্থার সম্ভাবনা এড়িয়ে যেতে সক্ষম যা কাউকে মর্মাহত করতে পারে।
৬) হিসেব করে ঝুকি নিতে ভয় পাওয়া।
একজন মানসিকভাবে শক্ত মানুষ হিসেব করে ঝুকি নেয়। এটা সম্পূর্ণ সাত পাচঁ না ভেবে ঝুকিপূর্ণ কিছুতে ঝাপিয়ে পড়ার থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। কিন্তু মানসিকভাবে সক্ষম একজন মানুষ কোন একটা ঝুকি নেয়ার আগে, ঝুকি এবং সুবিধার দিকগুলো পুরোপুরিভাবে বুঝে নেয় এমনকি অত্যন্ত খারাপ অবস্থার মধ্যে করণীয় পদক্ষেপগুলোকেও বিবেচনায় রাখে।
৭) অতীত নিয়ে পড়ে থাকা।
অতীত এবং অতীত অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষাগুলোকে স্বীকার করে নেয়ার মধ্যে শক্তি আছে। কিন্তু একজন মানসিকভাবে শক্ত মানুষ তার মূল্যবান মানসিক শক্তি অতীত হতাশাগুলো এবং স্বর্ণালী দিনগুলোকে মনে করে নষ্ট করে না। তারা তাদের বেশিরভাগ শক্তি সন্তোষজনক বর্তমান এবং ভবিষ্যত তৈরীতে কাজে লাগায়।
৮) একই ভুল বার বার করা।
আমরা পাগলামোর সংজ্ঞা সবাই জানি, ঠিক কি না? এটা ঠিক সেইসময়ই ঘটে যখন আমরা একই কাজ বার বার করতে থাকি, এবং আশা করি যে আমরা আগে যেই ফলাফল পেয়েছিলাম এবার তার চেয়ে ভিন্ন কিছু ঘটবে। একজন মানসিকভাবে শক্ত মানুষ তার অতীত আচরণের সম্পূর্ণ দায়িত্ব নেয় এবং অতীত ভুল থেকে শিখে। গবেষণায় দেখা যায় যে, বিশেষকরে সফল কর্মকর্তাদের এবং উদ্যোক্তাদের নিজের কাজগুলোকে নির্ভুলভাবে এবং কার্যকরভাবে বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা তাদের অন্যতম বড় শক্তিগুলোর মধ্যে একটি।
৯) মানুষের সাফল্যে রাগান্বিত হওয়া।
অন্যের সফলতায় খুশি এবং উল্লাস বোধ করার জন্য চারিত্রিক দৃঢ়তার প্রয়োজন। মানসিকভাবে শক্ত মানুষদের এই ক্ষমতাটা থাকে। তারা ঈর্ষান্বিত বা রাগান্বিত বোধ করে না যখন অন্যরা সাফল্য লাভ করে যদিও তারা মনোযোগ দিয়ে নোট করে সাফল্যের কারনটা। তারা শর্ট কাট পথ না ধরে, তাদের নিজেদের সাফল্যের পথ তৈরী করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করে।
১০) ব্যর্থতার পরে হাল ছেড়ে দেয়া।
প্রতিটি ব্যর্থতাই উন্নতির পথ খুলে দেয়। এমনকি দারুনভাবে সফল উদ্যোক্তারাও বলেন যে তাদের শুরুরদিকের অনেক ব্যবসার উদ্যোগই ব্যর্থতায় পর্যবর্ষিত হয়েছিল। মানসিকভাবে শক্ত মানুষেরা বার বার ব্যর্থতার জন্য প্রস্তূত থাকেন, যদি দরকার হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত যতক্ষণ পর্যন্ত না প্রতিটি ব্যর্থতার শিক্ষা তাদেরকে তাদের অভিষ্ট লক্ষ্যের কাছাকাছি পৌছে না দেয়।
১১) একাকী সময়কে ভয় পাওয়া।
মানসিকভাবে শক্ত মানুষেরা তাদের একাকী সময় উপভোগ করে। তারা সেই সময়টুকু তাদের কাজ বিশ্লেষণ করতে, পরিকল্পনা করতে, এবং আরো কার্যক্ষম হতে ব্যবহার করে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, তাদের আনন্দ এবং মেজাজ অন্যদের উপর নির্ভর করে না। তারা সবার সাথে যেমন আনন্দ নিয়ে থাকে, তেমনই নিজেরা একাকীও খুশি থাকে।
১২) তারা মনে করে পৃথিবী তারা যা চায় তা দিতে বাধ্য।
বিশেষকরে এই অর্থনীতিতে, প্রতিটি স্তরের কর্মকর্তা এবং কর্মচারীরা বোঝা শুরু করেছে যে এই পৃথিবী তাদেরকে একটি বেতন,লাভজনক প্যাকেজ এবং আরামদায়ক জীবন দিতে বাধ্য নয়, বরং এটা তাদেরকে যথাযথ প্রস্তুতি এবং পড়ালেখার মাধ্যমে অর্জন করতে হবে। মানসিকভাবে শক্তিশালী মানুষেরা কর্মক্ষেত্রে প্রতিটি ধাপে কাজ এবং মেধার কার্যকরী ব্যবহারের মাধ্যমে,সাফল্য লাভ করতে প্রস্তুত থাকে।
১৩) আশু ফলাফল আশা করা।
হোক তা শারীরিক ব্যায়াম, সুষম খাদ্য খাওয়া,বা একটি ব্যবসা শুরু করা, মানসিকভাবে শক্ত মানুষেরা দীর্ঘমেয়াদে ফলাফল আশা করে।তারা হিসেব করে তাদের কর্মশক্তি আর সময় ব্যয় করে এবং লক্ষ্যের পথে প্রতিটি মাইলফলক আর সাফল্য উদযাপন করে। তারা ধৈর্য ধরতে জানে। এবং তারা এটা বোঝে যে সত্যিকারের পরিবর্তনের জন্য সময় লাগে। আপনি কি মানসিকভাবে শক্তিশালী? এই লিস্টের মধ্যে এমন কোন উপাদান আছে যা আপনার আরো বেশি দরকার? এমি মোরিনের পরামর্শ অনুযায়ী, আজকে থেকে আমি এখানে উল্লেখিত প্রতিটি ক্ষেত্রে আমার দক্ষতা বাড়ানোর জন্য কাজ করব। আপনি কি করবেন?
লিখেছেন সেরীল স্নাপপ কোনার।
www.Forbes.com সাইটে পূর্বপ্রকাশিত।
মন্তব্য করুন