বিজ্ঞাপনে স্টোরিজ ফিচার ব্যবহারের অভিনব ৫ উপায়
স্টোরিজ ফিচারটির সাথে আমাদের প্রথম পরিচয় করিয়ে দেয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম স্ন্যাপচ্যাট। এটি এমন একটি গল্প বলার মাধ্যম যা দ্বারা ব্যবহারকারীরা তাদের প্রতিদিনকার জীবনের ছবি ও ভিডিও একসাথে জুড়ে দিতে পারেন। ২৪ ঘন্টা পর এই স্টোরিজ স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিজে নিজেই মুছে যায়, যা এটাকে একটা ‘রিয়ালটাইম’ ও নতুন মাধ্যম হিসেবে তুলে ধরেছে।
স্টোরিজ নিয়ে স্ন্যাপচ্যাটের অভাবনীয় সাফল্যে বাজারের অন্যান্য কোম্পানিও তাদেরকে অনুসরণ করতে এগিয়ে আসে।
এখন ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, এমনকি ইউটিউবেরও নিজস্ব স্টোরিজ ভার্সন আছে। সামনের দিনগুলোতে আরো বেশি জায়গায় এই ফিচারটি দেখা যাওয়ার সম্ভবনা বাড়বে।
যেহেতু স্টোরিজ ফিচারটি শীঘ্রই বিলুপ্ত হচ্ছে না, তাই এটাকে আমরা শুধুমাত্র বাচ্চাদের একটা খেলনা ফিচার হিসেবে না দেখে বরং আধুনিক বিজ্ঞাপনের একটি শক্তিশালী ও অভিনব মাধ্যম হিসেবে ভাবতে পারি।
কিভাবে? চলুন দেখে নেওয়া যাক।
১) ইনস্টাগ্রাম স্টোরিজে ‘পোল’ ব্যবহার
অক্টোবরে ইনস্টাগ্রাম তার ব্যবহারকারীদের জন্য স্টোরিজ ফিচারের ভেতর পোল সুবিধা যুক্ত করে। এর ফলে আপনি আরো সরাসরি ও দ্রুত উপায়ে আপনার পাঠকদের সাথে জড়িয়ে যাবেন ও যেকোন বিষয়ে তাদের পরিষ্কার মতামত জানতে পারবেন। এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে আপনি সহজেই ভোক্তাদের অভিমত জানতে পারবেন, যা আপনার সময়, শক্তি ও খরচ বাঁচাবে।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায়- ইনস্টাগ্রামের পোল ফিচারটি ব্যবহার করে আপনি খুব সহজেই ব্যবহারকারীদের কাছে জানতে চাইতে পারেন যে তারা আপনার ওয়েবসাইটের মূল পেইজের ঠিক কোন সংস্করণটি বেশি পছন্দ করে, বা আপনার আগামী বিজ্ঞাপনের জন্য তারা কোন গানটি বেশি পছন্দ করে। এভাবে কোনো পণ্য বা সেবা বাজারজাত করার আগেই ভোক্তাদের মনের ভেতর ঢুকতে পেরে পরবর্তী বিক্রয়ের আগে আপনি বেশ একটা সুবিধাজনক অবস্থান পেয়ে যাবেন।
২) পর্দার অন্তরালের গল্প বলুন
স্টোরিজ ফিচারের আরো একটা অনন্য ব্যাপার হলো- এর বিশ্বাসযোগ্যতা। তাই দর্শকের চোখে আপনার কাজের পেছনের খুঁটিনাটি ব্যাপারগুলো তুলে ধরার জন্য এটি বেশ চমৎকার একটি মাধ্যম।
এর মাধ্যমে রবার্ট সিয়ালদিনী’র ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নীতিও (যেটি কিনা ‘মানুষ ঠিকই উপকার ফিরিয়ে দেয়’ নামেও পরিচিত) কাজে লাগানো যায়। যদি আপনার ভোক্তারা সামনের প্রজেক্টের পেছনে আপনার কঠিন পরিশ্রমটা দেখতে পায়, খুব সম্ভব তারা আপনার পণ্যটি কিনবে।
আপনি যদি নিজের সামনের এলবামের জন্য কঠিন পরিশ্রম করা একজন শিল্পী কিংবা পরের পৃষ্ঠা লেখার পরিকল্পনা করছেন এমন লেখক হন, নিজের শ্রোতা-পাঠকদের নিয়ে ছোট এই ভ্রমনটি বেশ উপভোগ্য হবে। সাফল্যের মতো নিজের প্রতিবন্ধকতাগুলোও তাদের জানতে দিন।
৩) স্টোরিজে লিঙ্ক ব্যবহার
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পণ্য বিক্রয়ের ক্ষেত্রে স্টোরিজ ব্যবহার করে সাফল্য লাভের জন্য আপনাকে মনোযোগ আকর্ষণ করতে হবে। আর এটার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো পণ্যের সরাসরি লিঙ্ক সংযুক্ত করা।
ভালো ব্যাপার হলো- ইনস্টাগ্রাম ও স্ন্যাপচ্যাট ব্যবহারকারীদের স্টোরিজে লিঙ্ক যুক্ত করার সুবিধা দেয়। এটা ব্যবহার করে আপনি স্টোরিজে বিক্রয়যোগ্য পণ্যের লিঙ্ক, নিউজলেটার বা অন্যান্য কিছুর লিঙ্ক সংযুক্ত করতে পারেন, যা ব্যবসাকে চাঙ্গা রাখবে।
নিজের এজেন্সি থেকে জানি, আমাদের একজন ক্লায়েন্ট যে কিনা একজন জীবনধারা বিষয়ক উদ্যোক্তা, তার স্ন্যাপচ্যাট স্টোরিতে লিঙ্ক যুক্ত করার পর ইমেইল নিউজলেটারের সাড়া ৯ শতাংশ বেড়ে যায়, যা ২০১৭ সালের স্বাভাবিক সাড়ার হার ১.৯৫ শতাংশের চেয়ে যথেষ্ট বেশি। তাই এ মাধ্যমটার ভবিষ্যৎ বেশ আশাপ্রদ।
৪) গল্প বলা
কিছু কিছু ব্র্যান্ড চমৎকারভাবে গল্পকে ব্যবহার করে। একটা চমৎকার শুরু, মাঝখান, শেষসহ ভালো গল্প সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিক্রি বাড়াতে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
ধরা যাক, আপনি একটি জুতো কোম্পানির মালিক এবং আপনি একটা চমৎকার পাহাড়ে চড়তে চলেছেন। তাহলে আপনি কিছু ইনস্টাগ্রাম ও স্ন্যাপচ্যাট স্টোরির মাধ্যমে আপনার চূড়ার দিকের এগুনোর যাত্রাটা ধরতে পারেন।
তারপর যখন চূড়ায় ওঠার পরের দৃশ্য দেখাবেন, নিজের জুতোর একটা ছবি রাখুন- যেটা পুরো ভ্রমণে আপনি পরেছিলেন। তাতে পণ্যটির লিঙ্ক জুড়ে দিন, যেন কারো পছন্দ হলে নিজের জন্য নিতে পারে।
৫) স্ন্যাপচ্যাট জিওফিল্টারের ব্যবহার
ব্র্যান্ডকে অন্য এক উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে স্ন্যাপচ্যাট জিওফিল্টার। আপনার জিওফিল্টার আপনাদের কোম্পানি আয়োজিত কোনো অনুষ্ঠান, প্রডাক্ট লাঞ্চ, বা যেকোন কিছু সংরক্ষণ করে রাখতে পারে।
জিওফিল্টারের ফলাফল পুরোপুরি পেতে একটি অনলাইন প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে পারেন। যেখানে প্রতিযোগীরা আপনার পণ্যের সাথে ছবি তুলে ইনস্টাগ্রামে আপনার ব্র্যান্ডকে ট্যাগ করে আপনার পছন্দে পুরস্কার জেতার সুযোগ পাবে। আমাদের একজন ক্লায়েন্ট ইনস্টাগ্রামে এরকম একটি প্রতিযোগিতা আয়োজনের মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের সাড়ে ৩ গুন বাড়তি সাড়া পেয়েছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্টোরিজ ফিচারটি একেবারেই নতুন। এখনই এর সকল সম্ভাবনাকে যাচাই করার সময়। তাই এবছর স্টোরিজকেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপনার বিক্রয় কৌশলে গুরুত্বসহ অন্তর্ভুক্ত করে নিন।
লিখেছেন ডাকোটা শেইন
www.inc.com সাইটে পূর্ব প্রকাশিত।
মন্তব্য করুন