প্রেরণা হারিয়ে ফেলা ব্যক্তিদের জন্য ১১টি শক্তিশালী ‘মন্ত্র’

Share

আপনার কি কখনো এরকম মনে হয়েছে যে কোন একটি প্রজেক্টে অথবা কাজে আপনার আর কিছুই করার নেই? হয়তো আপনি একটি বই অথবা নতুন ব্যবসা নিয়ে কাজ করছেন অথবা একটি সম্পর্কে আবদ্ধ আছেন। কিন্তু সেটি সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রেরণা পাচ্ছেন না।

আমরা সকলেই এরকম সময়ের মধ্যে দিয়ে যাই। এটি একটি প্রক্রিয়ার অংশ। অনেক সময় সৃজনশীল ব্যক্তিরা বিরাট সাফল্য লাভের ঠিক পূর্ব মুহূর্তে এরকম বোধ করেন।

অনুপ্রেরণা ফিরিয়ে আনার একটি পরীক্ষিত উপায় হলো প্রয়োজনের সময় প্রেরণা ও পুনরুজ্জীবিত করার মন্ত্রের পুনরাবৃত্তি করতে হবে। আপনাকে আবার মূল পথে ফিরিয়ে আনতে এবং সামনে যে সম্ভাবনাগুলো রয়েছে সেগুলোর প্রতি নজর দিতে এখানে ১১ টি মন্ত্র বলে দেওয়া হলো।

১। তাদের সাথে থাকুন যারা আপনাকে দুশ্চিন্তায় ফেলার পরিবর্তে আপনার ভেতরের সেরাটা বের করে আনে

আপনি যাদের সাথে বেশির ভাগ সময় কাটান তাদের প্রভাবই আপনার জীবনে সবচেয়ে বেশি পড়ে। যদি আপনি খোশ গল্পে মেতে থাকা এবং নিজেদের অবস্থা নিয়ে অনবরত অভিযোগ করতে থাকা মানুষদের পরিবর্তে এমন মানুষদের সাথে মেশেন যারা নিজেদের লক্ষ্য নিয়ে আলোচনা করে এবং অন্যদের এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা দেয় তাহলে আপনিও আপনার লক্ষ্য পূরণে এগিয়ে যাবেন। এবং আপনার মনোভাব এবং জীবন দুটোই উন্নততর হবে।

২। জীবন ধরে রাখা এবং ছেড়ে দেওয়ার একটি ভারসাম্য (রুমি)

অনেক সময় যে জিনিসগুলো আপনার আর কাজে আসছে না সেগুলো বাদ দিতে হবে। আপনার নাগালের বাইরে এমন কোন কিছুকে যদি আপনি জীবনের লক্ষ্য হিসেবে ধরে রাখেন তবে তা এখনি ছেড়ে দিন। কোন সম্পর্ক যদি উন্নতির দিকে যাওয়ার বদলে আপনাকে শুধু মানসিক চাপের মধ্যে রাখে তবে তা থেকে বেরিয়ে আসুন। আপনি আপনার জীবনে যে বিষয়গুলো ধরে রেখেছেন সেগুলোর উপর একবার নজর বুলিয়ে নিন এবং প্রতিটির গুরুত্ব যাচাই করে দেখুন।

৩। দৈর্ঘ্য দিয়ে নয় গভীরতা দিয়ে জীবন মাপুন

সারাবিশ্বে মানুষ দীর্ঘ জীবন লাভের জন্য অনবরত নতুন খাবার, পরিপূরক এবং অমৃতের সন্ধান করে চলেছে। আমরা ভিটামিন খাই, বিভিন্ন মিশ্রণ খাই, ত্বকে বিভিন্ন প্রাকৃতিক ওষুধ ব্যবহার করি শুধু আর কয়েকটি বছর বেশি বাঁচার জন্য। কিন্তু আমরা ইতোমধ্যে যে বছর, মাস, সপ্তাহ এবং দিনগুলো পেয়েছি সেগুলোর সর্বোচ্চ ব্যবহারের কথাও মাঝে মাঝে মনে করা উচিত। প্রতিটি মুহূর্তই বাঁচতে হবে। এই মন্ত্রটি আজকের কাজ আজকে করে আগামীকে সুন্দর করার কথা মনে করিয়ে দেয়।  

৪। ধাপে ধাপে প্রক্রিয়া আয়ত্ত করুন

যদি আপনি এই লেখাটি পড়েন তাহলে ধরে নিচ্ছি আপনারও লক্ষ্য আছে। হয়তো আপনি একটি নির্দিষ্ট বয়সে একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের বেতনের চাকরী করতে চান। অথবা আগামী ১০ বছরে কিছু দেশ ঘুরতে চান। আপনি একটি বই লিখতে চান বা একটি নতুন ভাষা শিখতে চান। লক্ষ্যগুলো দারুণ এবং গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু লক্ষ্যের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো আমরা কোন প্রক্রিয়ায় আমাদের লক্ষ্যকে বাস্তবে রূপান্তরের চেষ্টা করছি।

৫। একমাত্র আমিই আমাকে ছাড়িয়ে যেতে পারি (মাইকেল জনসন)

কঠোর পরিশ্রমের সময় বা মাঝরাতে কাজের সময়ে যখন মনে হয়েছে আমি আর পারবো না তখন আমি বহুবার এই মন্ত্রটি ব্যবহার করেছি। এটি আমাকে মনে করিয়ে দেয় যে কোন লক্ষ্য অর্জন করা থেকে যে আমাকে থামাতে চাইছে সে হলো আয়নার দিকে তাকালে যাকে আমি দেখতে পাই সেই মানুষটি। ২০ পাউন্ড ওজন কমানো থেকে যে আপনাকে থামাতে চাইছে সে হলো আপনি নিজে। ক্যারিয়ারে সফল হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা লাভ থেকে আপনাকে থামাতে চাওয়া মানুষটিও আপনি নিজে। আরো একটি কাজের জন্য কিছু ত্যাগ স্বীকার করা থেকে আপনিই নিজেকে থামিয়ে রাখছেন। পুরো পৃথিবী আপনার বিরুদ্ধে- এমন মনে হলে এই মন্ত্র সাধন করুন। কারণ বাস্তবে যুদ্ধটি হলো আপনি বনাম আপনি।

৬। বিচলিত ব্যক্তি নয়, যোদ্ধা হয়ে উঠুন

ছন্দযুক্ত মন্ত্রগুলো বেশ চমৎকার কারণ এগুলো সহজেই মনে রাখা যায়। স্পার্টান এবং ভাইকিংসদের কথা একবার ভাবুন। এই ঐতিহাসিক চরিত্রগুলোর প্রতি আমাদের আকর্ষনের একটি কারণ রয়েছে। কারণ তারা যোদ্ধা। তারা এমন মানুষ যারা নিজেদের চেয়েও মহান কিছু অর্জনের জন্য প্রবলভাবে ইচ্ছুক। তারা ভয়ে মুখ লুকানো মানুষ নয় বরং ভীষণ উদ্যমী মানুষ।

৭। আপনি এটিই করতে চেয়েছিলেন (স্কট জুরেক)

আপনি কি একটি চাকরী শুরু করেছিলেন? বা ম্যারাথন দৌড়? বা কোন অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেওয়া? যদি করে থাকেন তাহলে হ্যাঁ, আপনি ঠিক এটিই করতে চেয়েছিলেন। অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে জেনেই আপনি এটি শুরু করেছিলেন। দরজার আরেক পাশে নানা বাধা বিপত্তি আছে জেনেই আপনি এই দরজা দিয়ে হাঁটা শুরু করেছিলেন। যখনই কোন বাঁধার সম্মুখীন হবেন তখন মনে রাখবেন এটি এই কাজেরই একটি অংশ এবং এই অংশে আপনার সামর্থ্য এবং দক্ষতা আরো বাড়াতে হবে।

৮। মোকাবেলার মাধ্যমে ভয়কে জয় করুন

সকলের মাঝেই ভীতি কাজ করে। কিন্তু যারা ভীতি থেকে না পালিয়ে একে কাবু করতে জানে তারাই ভয়কে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে জানে। পালানোর সহজাত প্রবৃত্তি চর্চার পরিবর্তে ভীতির কারণ খুঁজে বের করার জন্য ভয়কে চ্যালেঞ্জ করুন। ভীতি কাটিয়ে ওঠার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো সরাসরি এর মুখোমুখি হোন এবং যা করণীয় তাই করুন।

৯। অনুতাপ নয় স্মৃতি নিয়ে জীবন শেষ করুন

মানুষের জীবনের একটি অন্যতম বড় ভুল হলো মৃত্যুর কথা ভুলে যাওয়া। অনেক সময় আমাদের দেখে মনে হয় আমরা যেন অমর। বস্তুত আমরা খুবই নশ্বর জীব। সুতরাং আমরা এমন একটি জীবন কাটাতে চেষ্টা করবো যা অনুতাপে নয় বরং চমৎকার সব স্মৃতিতে পরিপূর্ণ।

১০। সবই অতীত হয়ে যাবে

কোনকিছুই চিরস্থায়ী নয়। না ব্যথা, না সংগ্রাম, না ব্যর্থতা। যখন কোন কিছু আপনার জন্য ভীষণ বোঝা হয়ে দাড়াবে তখন মনে রাখবেন এটিও সাময়িক। যখন কোন কিছু করা আপনার জন্য ভীষণ কঠিন হয়ে উঠবে বা আপনি যখন কোন সম্পর্কের খারাপ সময় অতিবাহিত করবেন তখন এই মন্ত্রটি ভীষণ কাজে দেবে।

১১। পথ খুঁজে বের করুন অথবা তৈরি করুন

সমস্যার পরিবর্তে সমাধানের দিকে নজর দিন। কঠিন সময়ে শুধু সমস্যা নিয়ে পড়ে থাকা সহজ। কিন্তু নিজের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা কঠিন।

যখন মনে হবে পুরো পৃথিবী আপনার বিরুদ্ধে তখন এক মুহূর্ত সময় নিন। নিজেকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার জন্য এই মন্ত্রগুলোর যেকোনটি প্রয়োগ করুন। মন্ত্রগুলো একদম ব্যক্তিগত। যখন আপনার মনে হবে যে জীবনের সংগ্রামে আর এগিয়ে যেতে পারবেন না তখন আপনার জন্য উপযুক্ত মন্ত্রটি খুঁজে নিয়ে মন্ত্র দিয়ে মাথা থেকে এই বিরূপ ধারণা মুছে ফেলুন।

আপনার নিজেরও কি এমন কোন মন্ত্র রয়েছে যার উপর আপনি নির্ভর করতে পারেন?

www.success.com এ পূর্ব প্রকাশিত আর্টিকেলের ছায়া অবলম্বনে লেখা।

আপনি উদ্যমী!
আপনার জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে চান?  

তাড়াতাড়ি সাবস্ক্রাইব করুন।

আমাদের সেরা কনটেন্ট আপনার ইমেইলে পৌছে যাবে প্রতি সপ্তাহে।  

Invalid email address
আপনি যেকোনো সময় আনসাবস্ক্রাইব করতে পারবেন।  

মন্তব্য করুন