প্রথম সাক্ষাতেই অন্যের কাছে আরো বেশি পছন্দনীয় হতে আপনার করণীয়

Share

Image Source: Dhaka Tribune

আপনি লোকের কাছে প্রথম দেখাতেই আপনার সম্পর্কে খুব ভালো ধারণা তৈরি করতে চান—এবং কেনইবা চাইবেন না? আপনি জানেন যে কিছু প্রাথমিক ধাপ রয়েছে যেগুলোর সাথে আপনি এগোতে পারেন, যেমন: মুচকি হাসি, সরাসরি দৃষ্টি বিনিময়, বলার চাইতে বেশি শোনা, অপর ব্যক্তি সম্পর্কে বেশি জানতে চাওয়া। এগুলো যে কেউ করতে পারে।

কিন্তু আপনি হয়তো জানেন না যে আপনি যদি ভাবেন যে অপর ব্যক্তি আপনাকে পছন্দ করতে যাচ্ছে, তবে সাধারণত তারা তা করে।

গবেষণায় দেখা গেছে যে, আন্তঃব্যক্তিক আন্তরিকতা একে অপরের কাছে গ্রহণযোগ্যতাকে পরিপূর্ণ ও স্বকীয় একটি ব্যাখ্যা দান করে। গবেষণায় অংশগ্রহণকারী, যারা গ্রহণযোগ্যতার প্রত্যাশী ছিলেন, তারা বেশি পছন্দনীয় বলে প্রমাণিত হয়েছেন। (অথবা, একজন অগবেষকের ভাষায় বলা চলে, আপনি যখন ভেবেই নেন যে অপর ব্যক্তিটি আপনাকে পছন্দ করবে, তখন আপনি অনেক বেশি স্বতস্ফূর্ত এবং বন্ধুভাবাপন্ন আচরণ করেন—যা মানুষকে আপনাকে পছন্দ করার দিকে উৎসাহিত করে, যেহেতু আমরা অপেক্ষাকৃত আন্তরিক ও বন্ধুভাবাপন্ন লোকেদের পছন্দ করে থাকি।)

এসব কিছু ভালোই শোনাচ্ছে। কিন্তু এই যে উপায়টি তখন প্রয়োগ করা দরকার, যখন আপনি লজ্জা পাবেন বা অনিরাপত্তায় ভুগবেন। তখন আপনার আসলেই ভাবা দরকার যে লোকে আপনাকে পছন্দ করবে। যখন আপনি কোনো অপরিচিত স্থান বা অস্বস্তিকর পরিবেশে আছেন, এটি ভাবা অনেক বেশি স্বাভাবিক যে লোকে আপনাকে পছন্দ করবে না।

তো আপনি কীভাবে নিজেকে বোঝাবেন যে লোকে আপনাকে পছন্দ করবে? এক্ষেত্রে ইতিবাচক আত্ম-কথোপকথনে (“তারা আমাকে অনেক পছন্দ করবে!”) কাজ হবে না।

এর পরিবর্তে, আপনার চোখ দুটো বন্ধ করুন, গভীর শ্বাস নিন এবং কয়েকটি ধাপের প্রতি প্রচণ্ড দায়বদ্ধ হোন এটি নিশ্চিত করতে যে, যে কেউ আপনাকে পছন্দ করবে। (যখন ফলাফল অনেকটাই সুনিশ্চিত, তখন আরো অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী ও স্ব-নিশ্চিত হওয়া সহজ।)

প্রস্তুত হোন:

) সত্যিকারের প্রশংসা করুন

প্রশংসিত হতে সবাই ভালোবাসে, বিশেষ করে যখন কেউ যথেষ্ট প্রশংসা পায় না। তাই অন্যকে বলতে শিখুন সে কী করেছে, কী করে- এসব সম্পর্কে বলতে। অথবা যার সাথে আপনার দেখা হতে যাচ্ছে, আগেই তাকে নিয়ে কিছুটা গবেষণা করে ফেলুন।

যদি প্রস্তুতি নিয়ে আসাটা সম্ভব না হয়, তাহলেও সমস্যা নেই। প্রশ্ন করার মাধ্যমে আপনার আগ্রহ প্রকাশ করুন। কিন্তু “আপনি কী করেন?”- এ ধরনের প্রশ্নের বাইরে যান। বরং ব্যক্তিটির কাছে জানতে চান তার কাজটা আসলে কীরকম বা কাজটি করার সময় তাকে কী ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। তাকে জিজ্ঞেস করুন সে কাজটির কোন দিকটি তার সবচাইতে ভালো লাগে। এতে করে খুব দ্রুতই আপনি প্রশংসা করার মতো কিছু পেয়ে যাবেন।

এবং এতে করে যাদের সাথেই আপনার দেখা হবে, তারা শুধু আপনার প্রশংসাই পছন্দ করবে না, বরং নিজেদেরকে আরো বেশি দক্ষ এবং গুরুত্বপূর্ণ মনে করবে। এবং তারা এটাও অনুভব করবে যে আপনিই তাদেরকে তেমনটা ভাবতে শিখিয়েছেন।

. অন্যদেরকে তাদের নিজের সম্পর্কে বলতে দিন

মানুষ নিজেকে নিয়ে কথা বলতে ভালোবাসে। (এবং তারা যদি কিছু নাও করে থাকে, তবুও এটা করবেই।)

গবেষণায় দেখা গেছে যে, প্রতিদিনের কথা বলার মধ্যে প্রায় ৪০% কথাই হচ্ছে আমরা অন্যকে নিজের অনুভূতি ও ভাবনা সম্পর্কে বলি। মূলত, আমরা আমাদের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কিত অভিজ্ঞতা নিয়ে কথা বলি। (শুধু এটাই নয় যে আপনি কালরাতে স্পিন ক্লাস করেছেন, বরং স্পিন ক্লাসটি করতে আপনার ভালো লেগেছে না মন্দ, সেটাও। এবং আপনার নির্দেশককে কেমন লেগেছে, এবং স্টুডিওটি কেমন ছিল, এবং ক্লাসের অন্যদের সম্পর্কে, এবং… )

প্রকৃতপক্ষে, আমরা নিজেদের চিন্তাভাবনা অন্যের সাথে ভাগ না করে থাকতে পারি না। গবেষণায় এও দেখা গেছে যে, কারো সাথে বা সামাজিক মাধ্যমে নিজেকে নিয়ে কথা বলার মাধ্যমে মস্তিষ্কে অর্থপ্রাপ্তি বা খাদ্যগ্রহণের মতো সুখানুভূতি তৈরি হয়। আত্ম-উন্মোচন মস্তিষ্কে বিদ্যমান বিভিন্ন অংশে টাকা, খাবার, এমনকি শারীরিক মিলন থেকে প্রাপ্ত তৃপ্তি বা সন্তুষ্টির মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।

অন্যকে নিজের সম্পর্কে কথা বলতে দেবার মাধ্যমে, আপনি অনেক ভালো একজন কথোপকথনকারী হয়ে উঠতে পারেন, এমনকি যদি আপনি সাধারণত খুব কম কথা বলেন, তবুও। এবং এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে, আপনি অন্যদেরকে নিজের সম্পর্কে ভালো অনুভব করাতে পারবেন, যাতে করে তারা আপনাকে পছন্দ করবে।

এটি আরেকটি জয়-জয় অবস্থা।

. একটি শব্দ পরিবর্তন করুন

এই কথাগুলোর মধ্যকার পার্থক্য খেয়াল করুন:

  • “আমাকে মিটিংয়ে যেতে হয়েছিল।”
  • “আমার কয়েকজন চমৎকার মানুষের সাথে দেখা করার সুযোগ হয়েছিল।”

অথবা

  • “চাকরির জন্য আমাকে বেশ কয়েকজন প্রার্থীর সাক্ষাৎকার নিতে হবে।”
  • “আমাদের দলে যোগ দেবার জন্য চমৎকার কাউকে খুঁজে নিতে হবে।”

এটা তেমন কিছু না, তাই না? ভুল। আমরা অপেক্ষাকৃত সুখী, উদ্যমী এবং উৎসাহিত লোকের আশেপাশে থাকতে পছন্দ করি। আপনি কি এমন কারো আশেপাশে থাকতে চান, যাদের কিছু নির্দিষ্ট কাজ করতে হয়, নাকি এমন কাউকে চান, যারা কিছু নির্দিষ্ট কাজ করতে চায়?

মনে রাখবেন যে আপনি সঠিক শব্দগুলো বলার মাধ্যমে আপনার অনুভূতির উপরও প্রভাব পড়বে। “আমাকে জিমে যেতে হবে”, এটি না বলে বরং বলুন, “আমি জিমে যেতে চাই”।

এটুকু সময়ের মধ্যেই আপনি এটি বিশ্বাস করবেন। আপনি এটি করতে চাইবেন।

যা আপনার করা উচিত, কারণ নিজের সৌষ্ঠব বাড়াতে পারলে আপনার সামগ্রিক স্বাস্থ্য এবং কর্মক্ষমতার উন্নতি ঘটবে। এমনকি এতে করে আপনি সুখী হয়েও উঠবেন।

. একটু নম্রতা দেখান

শ্রেষ্ঠ দলগুলো এমন নেতাদের দ্বারাই পরিচালিত হয়, যারা নিজেদের দুর্বলতা ও ব্যর্থতাকে স্বীকার করে নিতে পারে। সবচেয়ে ভালো বন্ধুরাও এমনই হয়।

প্রথম সাক্ষাতেই অন্যের কাছে নিজের সম্পর্কে ভালো ধারণা তৈরি করতে চান? প্রভাব ফেলার চেষ্টা করবেন না। এর পরিবর্তে, নম্র হোন। আপনার দুর্বলতাগুলো ভাগ করে নিতে চেষ্টা করুন। আপনার ভুলগুলো মেনে নিন। সতর্কবাণীর মতো করে সেগুলো বলুন। নিজেকে নিয়েই হাসাহাসি করুন।

আপনি যখন এগুলো করবেন, তখন অন্যেরা আপনার উপর হাসবে না। তারা আপনার সাথে হাসবে।

এবং তারা তাৎক্ষণিকভাবেই আপনাকে এর জন্য আরো বেশি পছন্দ করবে এবং আপনার সাথে বেশি সময় কাটাতে চাইবে।

www.inc.com সাইটে প্রকাশিত আর্টিকেলের ছায়া অবলম্বনে লিখিত।  

আপনি উদ্যমী!
আপনার জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে চান?  

তাড়াতাড়ি সাবস্ক্রাইব করুন।

আমাদের সেরা কনটেন্ট আপনার ইমেইলে পৌছে যাবে প্রতি সপ্তাহে।  

Invalid email address
আপনি যেকোনো সময় আনসাবস্ক্রাইব করতে পারবেন।  

মন্তব্য করুন