পৃথিবী সম্পর্কে যে ১৫টি আশ্চর্যজনক তথ্য হয়ত এখনো আপনার কাছে অজানা
আপনি যদি খুব ভালোভাবে স্রষ্টার সৃষ্টি এই পৃথিবীকে অবলোকন করেন তাহলে খুব সহজেই অনুধাবন করতে পারবেন যে কত জটিল ও সুগঠিতভাবে এই গ্রহটি তৈরি করা হয়েছে। সূর্য থেকে শুধুমাত্র এর দূরত্বই নয়, বরং এই গ্রহটিতেই কেবলমাত্র মানুষ ও অন্যান্য পশুপাখির বংশবৃদ্ধির জন্য রয়েছে এক চমৎকার ও উপযুক্ত পরিবেশ। আমরা যদি আমাদের দৃষ্টিকে আরো প্রসারিত করি তাহলে এই বিশাল বিশ্বব্রম্মান্ডের মাঝে নিজেদেরকে এক বিন্দুর ন্যায় মনে হবে। আমরা আরো জানি যে পৃথিবীর প্রতিটি সৈকতে যে পরিমান বালুকণা রয়েছে, বিশ্বব্রম্মান্ডে তার চেয়েও বেশি নক্ষত্রপুঞ্জ আছে।
যে পৃথিবীতে আমরা বসবাস করছি তা সম্পর্কে আমরা অনেক কিছুই জানি, কিন্তু এর বাইরেও রয়েছে এমন অনেক তথ্য যা আজও আমাদের কাছে অজানার চাদরে ঢাকা। পৃথিবী সম্পর্কে এমনই ১৫টি তথ্য আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করব যা হয়ত ইতোপূর্বে আপনার কাছে অজানা ছিল-
১। পৃথিবীর সবচেয়ে উষ্ণতম স্থান হচ্ছে ক্যালিফোর্নিয়ার ডেথ ভ্যালি নামক একটি জায়গা। এই জায়গার তাপমাত্রা হচ্ছে ৫৬.৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস (১৩৪ ফারেনহাইট)।
২। এই যাবতকালে পৃথিবীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল অ্যান্টার্কটিকার সোভিয়েত ভস্কট স্টেশনে। ১৯৮৩ সালের ২১ জুলাইয়ের কথা, বিশেষজ্ঞদের রেকর্ড অনুযায়ী সেই সময়ের তাপমাত্রা ছিল -৮৯.২ সেলসিয়াস।
৩। প্রতি ৪৫০ হাজার বছর পর পর পৃথিবী তার চৌম্বক মেরু পরিবর্তন করে। যা একসময় উত্তর চৌম্বক মেরু ছিল ৪৫০ হাজার বছর পর তা পরিবর্তিত হয়ে দক্ষিণ চৌম্বক মেরু হয়ে যায়। এভাবেই ক্রমান্বয়ে পরিবর্তন চলতে থাকে!পরবর্তী পরিবর্তন হতে ২০০০ বছর লাগবে।
৪। আমরা সকলেই এভারেস্ট পর্বত শৃঙ্গকে বিশ্বের সর্বপেক্ষা উঁচু পাহাড় হিসেবে জানি। কিন্তু যদি পাহাড়ের গোড়া থেকে শুরু করে শৃঙ্গ পর্যন্ত পরিমাপ করা হয়, তবে পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু পাহাড় হিসেবে হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের মওনা কিআ নামক পাহাড়টি বিবেচ্য হবে।
৫। এযাবতকালে পৃথিবী যত উল্কাপিন্ড ভূপতিত হয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে বড় উল্কাপিন্ডটি পাওয়া গিয়েছিল আফ্রিকার দেশ নামিবিয়াতে যার ওজন ছিল প্রায় ৬৬ টন। ধারণা করা হচ্ছে এই উল্কাপিন্ডটি আজ থেকে প্রায় ৮০,০০০ বছর আগে পৃথিবীতে এসে পড়েছিল।
৬। টাইরানোসরাস রেক্স এর উপর চিত্রায়িত সিনেমাগুলোতে এই প্রাণীটির দৌড়ানোর গতিবেগ যতটা দ্রুত দেখানো হয়েছে বাস্তবে এই প্রাণী অত দ্রুত দৌড়াতে পারে না। বিজ্ঞানীদের মতে প্রতি ঘন্টায় টাইরানোসরাস রেক্স ১৫ থেকে ২৫ মাইল বেগে দৌড়তে পারে। দৌড়ানোর এই গতিবেগ গাড়ির গতিবেগের চেয়ে কম কিন্তু মানুষের হাঁটার গতিবেগের চেয়ে বেশি!
৭। বলা হয়ে থাকে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশী রহস্যময় জায়গা হচ্ছে মহাসাগর। মহাসাগরের তলদেশে গভীর পানির নীচে লুকিয়ে রয়েছে অনেক না জানা রহস্য। এ পর্যন্ত জলের নীচে আবিষ্কৃত সবচেয়ে গভীর জায়গাটি মারিয়ানা ট্রেঞ্চ নামে পরিচিত।
মারিয়ানা ট্রেঞ্চ প্রশান্ত মহাসাগরের জাপান উপকূলে অবস্থিত এবং এর মধ্যে চ্যালেঞ্জার ডিপ নামক জায়গাটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১০ কিলোমিটার বা ১০,০০০ মিটার নীচে অবস্থিত।
৮। অ্যান্টার্কটিকায় অবস্থিত ম্যাকমুর্দ ড্রাই ভ্যালি নামক জায়গাটি পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা শুষ্ক জায়গা হিসেবে পরিচিত। অ্যান্টার্কটিকা একটি বরফাচ্ছন্ন মহাদেশ হলেও এই স্থানে কোন বরফ বা তুষারপাতের উপস্থিতি নেই। গত ২০ লক্ষ বছর ধরে এই স্থানে কোন বৃষ্টিপাত হয় না।
৯। পৃথিবীতে আবিষ্কৃত সবচেয়ে পুরনো ফসিলের বয়স প্রায় ৩.৫ কোটি বছর এবং এই ফসিলটি কোন মানুষ বা প্রানীর নয় বরং একটি ব্যাকটেরিয়ার!
১০। পৃথিবীর আকাশমন্ডল বিভিন্ন স্তরে বিন্যাস্ত রয়েছে। ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৬২ কিলোমিটার উপরে অবস্থিত কারম্যান লাইনটি আকাশ হিসেবে পরিচিত যা আমরা খালি চোখে দেখে থাকি।
এছাড়াও আরো চারটি স্তর রয়েছে এবং একটি স্তর যখন হালকা হয়ে এসেছে তখন আরেকটি স্তর শুরু হয়। সর্বশেষ স্তরটির নাম এক্সোসফিয়ার এবং এটি সবচেয়ে উঁচুতে অবস্থিত। পৃথিবীর মধ্যাকর্ষণ শক্তি অতিক্রম ব্যতীতই আপনি এই স্তরে পৌঁছতে পারবেন। স্যাটেলাইটের নেটওয়ার্ক এই স্তরে এসে শেষ হয়।
১১। ডেড সী বিশ্বের সবচেয়ে নীচু স্থান। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৪৩০ মিটার গভীরে অবস্থিত এর তলদেশ। ডেড সীর সীমানা ছড়িয়ে রয়েছে ইসরায়েল, প্যালেস্টাইন ও জর্ডান জুড়ে।
পর্যটকদের জন্য এই স্থানটি আরাম করা ও সূর্যস্নানের জন্য একটি উপযুক্ত জায়গা। সাধারণ সমুদ্রের পানির চেয়ে এর লবণাক্ততা প্রায় ১০ গুণ (৯.৬ গুণ) বেশী, আর তাই জলপ্রেমীরা জলজ শিকার প্রাণীর আক্রমণের ভয়কে উপেক্ষা করে নির্ভয়ে জলকেলিতে সময় কাটাতে পারেন।
১২। পৃথিবীর সবচেয়ে পুরনো ধর্মীয় স্থাপনাটির নাম গবেকেলি তেপি এবং এটি তুর্কিতে অবস্থিত। ধারণা করা হয় এই নির্মাণটি প্রায় ১০,০০০ বছর পুরনো এবং বলা হয়ে থাকে এটি পিরামিড ও স্টোনহেঞ্জেরও আগে নির্মিত হয়েছিল।
এই স্থাপনাটির আকৃতি অনেকটা ইংরেজি “টি” অক্ষরের মত। নির্মাণটির গায়ে বিভিন্ন দৃশ্য ও পশুপাখির অবয়ব খোদাই করা আছে, যা দেখে অনেকেই বলে থাকেন এই স্থাপনাটি হয়ত ১২,০০০ বছর পুরনো।
১৩। পৃথিবীতে এখনো এমন অনেক প্রজাতি রয়েছে যা সম্পর্কে মানুষ এখনো অন্ধকারে রয়েছে। অনুমান করা হয় যে, পৃথিবীতে প্রায় ৫ থেকে ১০ মিলিয়ন প্রজাতি রয়েছে।
মানুষ এ পর্যন্ত উপরিউক্ত পরিমাণের মধ্যে কেবলমাত্র শতকরা দশ থেকে পনের ভাগ প্রজাতি সম্পর্কে মানুষ তথ্য বের করতে পেরেছে। আরো বলা হয় যে, সমুদ্রভাগের শতকরা দশ ভাগ স্থান মানুষ আবিষ্কার করতে পেরেছে।
১৪। সবচেয়ে ছোট আকৃতির স্তনপায়ী প্রাণী হলো কিটিস হগ-নোসড বাদুড়। এটি লম্বায় ১.১ থেকে ১.৩ ইঞ্চি হয়ে থাকে এবং ওজন মাত্র ২ গ্রাম। ১৯০০ সালের শুরুর দিকে থাইল্যান্ড ও মায়ানমারের গুহায় এই ভ্রমর সদৃশ বাদুড়গুলো দেখা যেত।
১৫। পৃথিবীতে দুই ধরনের মেরুপ্রভা আছে।যদিও আমরা অনেকেই উত্তর দিকের আলো বা অরোরা বরিয়ালিস সম্পর্কে জানি,খুব কম লোকই জানে দক্ষিন দিকের আলোর ব্যাপারে।এই দক্ষিন দিকের আলোকে অরোরা অস্ট্রালিসও বলা হয়, এবং এই সৈন্দর্যকে সবচেয়ে ভালোভাবে অবলোকন করা যায় এন্টারটিকা থেকে কিন্তু এগুলোকে মাঝে মাঝে নিউজেল্যান্ড বা অস্ট্রেলিয়া থেকেও দেখা যায়।উত্তরের মেরুপ্রভা সবচেয়ে ভালো দেখা যায় আইসল্যান্ড বা নরওয়ে থেকে, কিন্তু উত্তর কানাডা বা ইউরোপের কিছু কিছু জায়গা থেকেও দেখা যায়।
লিখেছেন জেরেমি হন।
www.providrmedia.com সাইটে পূর্বপ্রকাশিত।
মন্তব্য করুন