নতুন ব্যবসা শুরু করার আগে আপনার যে ৩ টি প্রশ্নের উত্তর জানতে হবে
নতুন একটা ব্যবসা শুরু করা মানেই হচ্ছে প্রচুর পরিশ্রম করার সাথে নতুন অনেক কিছু শিখা। কিন্তু এটার মানে এই যে ব্যবসাটির পুরো অর্জনই আপনার। আপনি এমন একটি ব্যবসার জন্য প্রস্তুত কি না সেটা বোঝার জন্য এই প্রশ্নগুলির উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করুন।
আমি এখনো এমন কারো সাথে সাক্ষাত করিনি যিনি কিনা নতুন ব্যবসা শুরু করেছিলেন এবং ব্যবসা ক্ষেত্রে যথোপযুক্ত অভিজ্ঞতা না থাকার জন্য ব্যর্থ হয়েছিলেন।
সাধারণত গল্পটা তার বিপরীতঃ অনেকক্ষেত্রেই দেখা যায় যে তারা অন্য মানুষের প্রতিষ্ঠানে দক্ষতার সাথে কাজ করতে করতে তাদের উপলব্ধি হয় যে তারা যদি তাদের এই জ্ঞান এবং প্রতিভা নিজের প্রতিষ্ঠানের জন্য কাজে লাগান তাহলে ব্যবসায় আরও সাফল্য লাভ করবেন।
আমি এখন পর্যন্ত এমন কোন সীসক কর্মকারকে দেখিনি যে কল মেরামত করতে না পারার জন্য,একজন ল্যান্ডস্ক্রাপার যে ঠিকমতো লন পরিষ্কার করতে না পারার বা একজন ওয়েব ডেভেলপার একটি সুন্দর ওয়েবসাইট বানাতে না পারার কারনে ব্যবসায় ব্যর্থ হয়েছে। বেশিরভাগ কারনেই তারা ব্যর্থ হয় ব্যবসার চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলায় সঠিক স্ট্রাটেজির অভাবে যা কিনা তাদেরকে প্রতিদ্বন্দীদের কাছ থেকে আলাদা করে এবং একটি স্থায়ী চাকরি ছেড়ে দেবার মতো যথেষ্ট পরিমানে টাকা উপার্জনের পথ তৈরী করে দেয়।
এখানে উল্লেখিত এই তিনটি প্রশ্ন যদি আপনি নিজেকে করেন তাহলে আপনি নিশ্চিত বুঝতে পারবেন যে ব্যবসার সেই চ্যালেঞ্জগুলো আপনি ঠিকভাবে মোকাবিলা করতে পারবেন কিনা।
আপনিই কেন এবং এখনই কেন? আপনি কি ব্যবসার চ্যালেঞ্জগুলো নিতে এখন প্রস্তুত?
যদি আপনার উত্তরটা এরকম হয় যে- আপনি একটি ব্যবসা শুরু করতে চাইছেন যেখানে আপনি কম কাজ করবেন অথবা দ্রুত বিলাসবহুল জীবনযাপন করবেন, সেক্ষেত্রে আপনার ব্যবসা শুরু করার আগে পুনরায় ভাবা উচিত। আমি শত শত ছোট ব্যবসা মালিকদের সাথে সাক্ষাৎ করেছি এবং তাদের মধ্যে কিছু ব্যবসা আছে যা লাভের টাকায় চলছে এবং মুনাফার বাকি অংশ তাদের ব্যাঙ্ক একাউন্টে ঢুকছে। এমনটা হতে পারে, কিন্তু আপনার নিজের ব্যবসা শুরু করার জন্য এটি যৈক্তিক কারণ নয়।
ব্যবসাকে একটি সুবিধাপূর্ণ স্থানে নিয়ে যাওয়ার উপায় হল প্রচুর পরিশ্রম করা, কিছু ভুল, বিপত্তি, এবং অসংখ্য শিক্ষনীয় বিষয়কে কাজে লাগানো।
২০১৮ সালের একটি জরিপে দেখা যায় ২৬০০ এরও বেশি বর্তমান এবং ব্যবসা করতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদেরকে নিয়ে করা একটি সমীক্ষায় দেখা যায়, যে দুটি প্রধান কারণে তারা ব্যবসা শুরু করেন তা হলো – নিজেদের বস নিজেরাই হওয়া (৪৯%) আর নিজের পছন্দ অনুযায়ী কাজ করা (৪৫%)। যদি আপনার ব্যবসা শুরুর কারণও এগুলোর মধ্যে একটি হয় এবং আপনি পুরোপুরি এটায় মনোনিবেশ করেন তাহলে বাঁধা বিপত্তির সময়েও ব্যবসাকে উন্নতির দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য আপনার উদ্যম বজায় থাকবে।
আপনার কি পুরোপুরি এবং ব্যক্তিগতভাবে প্রধান সমস্যাগুলি বোঝা হয়েছে যেগুলি আপনি কাস্টমারদের জন্য সমাধান করতে পারবেন?
আপনি যে সমস্যাটি সমাধান করবেন বলে ঠিক করেছেন তা যত সুনির্দিষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করতে পারবেন ততই ভালো। আপনি বাসার জিনিসপত্র ঠিক করার ব্যবসা করবেন তা জানা ভালো, কিন্তু আরও ভালো হল জানা যে আপনি কোন মেরামতে ফোকাস করবেন – জরুরি মেরামত, বা সকল কাজের জন্য পাঁচ বছরের ওয়ারেন্টটি দেয়া, বা আপনার এলাকায় সবচেয়ে কম খরচে কাজ করে দেয়া ব্যবসায় পরিনত হওয়া।
আপনার ফোকাস আরও নির্দিষ্ট করুন সেইসব গ্রাহকের প্রতি যারা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মেরামত চায়। আপনি পরবর্তীতে চাইলে আরও সেবা যোগ করতে পারেন, কিন্তু একটি বা দুটি নির্দিষ্ট সেবা নিয়ে শুরু করা সাধারণত সহজ এবং আপনার ব্যবসা বিস্তারের সাথে আরও আনুষঙ্গিক সেবা শুরু করা অপেক্ষাকৃত বুদ্ধিমানের কাজ।
এই একই প্রবনতা দেখা যায় ইকমার্সের ক্ষেত্রেও। ২০ বছরের উপরে অনলাইন বিক্রেতাদের ইয়াহু মার্চেন্ট সল্যুশনের মাধ্যমে সহায়তা প্রদান করতে গিয়ে একটি মজার নিদর্শন দেখেছি, ধরুন একজন বিক্রেতা অনন্য কুকুরের কলার বিক্রির জন্য একটি ছোট স্টোর খুলল। বছর দুইয়ের মধ্যেই, তাদের বিক্রি বাড়তে লাগলো এবং গ্রাহকেরা জিজ্ঞেস করতে লাগলো যে তারা বিড়ালের কলারও বিক্রি করে কিনা। কিন্তু তারা তাদের প্রোডাক্ট লাইন বাড়ানোর পরিবর্তে, দ্বিতীয় একটি অনলাইন স্টোর খুলল শুধুমাত্র বিড়ালের কলারকে ফোকাস করে।
দুই বছর পরে, তৃতীয় একটি স্টোর তারা খুলল যা কলারের সাথে কুকুরের খাদ্যও বিক্রি করে। এটা ঠিক মার্কেটিং বিস্ময় নয়, বরং একটি সফল নিদর্শন যা আমরা বার বার দেখি খেলাধুলার পণ্য থেকে পোশাক, ইলেক্ট্রনিক্স থেকে পোষা প্রানির খাবার বিক্রির ক্ষেত্রে।
আপনি কি জানেন আপনার পণ্য বা সেবা দিতে কেমন খরচ পড়তে পারে?
আপনি যদি ইবেয়তে সবচেয়ে কমদামে সুগন্ধিযুক্ত মোমবাতি বেচতে চান, তাহলে আপনাকে কম টাকায় মোমবাতি কেনা যায় এমন একটি উৎস বের করতে লাগবে আর সকল লাভ বাদ দিতে হবে এবং যার ফলে আপনি আপনার মূল্যবান সময়ের জন্য নিজেকে এক পয়সাও দিতে পারবেন না এবং আপনি ততদিন পর্যন্তই ব্যবসাতে টিকে থাকবেন যতদিন না আপনার সঞ্চয় শেষ না হয়ে যাবে।
অন্যদিকে,আপনার লক্ষ্য যদি আপনার শ্রম এবং ত্যাগের বিপরীতে টাকা কামানো হয়,তাহলে আপনাকে শুধুমাত্র মোমবাতির পাইকারি দাম ধরলেই হবে না, কতগুলো ভাঙ্গা বা বিক্রয়ের অনুপযোগী অবস্থায় আসবে তারও দাম ধরতে লাগবে। আপনার খরচের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা লাগবে অনলাইনে জিনিস স্টোর করার খরছ,অন লাইন স্টোরের লিস্টিং বা হোস্টিং ফি,শিপিং আর প্যাকেজিং খরচ,ক্রেডিট কার্ড প্রসেসিং এর ফি,মার্কেটিং খরচ,এবং জিনিসপত্র ফেরত আসার খরচ এবং প্রতারণা।
অনলাইনে অনেক সফল ব্যবসাই প্রতি ১০০ টাকা বিক্রিতে ১৫ টাকা ধরে রাখতে হিমশিম খায়। অনেকগুলোই আরো অনেক কম মার্জিনে ব্যবসা করে যা বেশ ভালো যদি আপনার পন্যের মার্কেট বেশ বড় হয় এবং যথেষ্ট পরিমানে বিক্রি হয়।
এটা মনে রাখবেন যে আপনি যে সময় ব্যয় করছেন ব্যবসায় এই ১৫ টাকা সেটারই বেতন দিচ্ছে আপনাকে। আমি এমন বেশ কযেকজন ব্যবসায়ীকে চিনি যারা আমাকে বলেছে যে যখন তারা হিসাব করে প্রতি ঘন্টা ব্যবসাতে দিয়ে তারা কি পরিমান আয় করছে বেশিরভাগ সময়ই তা তাদের শেষ চাকরির চেয়ে কম হয়। কিন্তু যখন তারা কাজের সন্তুষ্টির কথা চিন্তা করেন তখন তা তাদের মুখে হাসি ফুটিয়ে তুলে।
আমরা আবার প্রথম প্রশ্নের যে উত্তর আপনি বেছে নিয়েছেন তাতে চলে যাচ্ছি। যদি আপনার ব্যবসা শুরু করার কারণ হয় নিজের বস নিজেই হওয়া, নিজের পছন্দের কাজকে অনুসরণ করা,বা কর্পোরেট এ কাজের ঝক্কি থেকে নিস্তার লাভ করে, সময় কীভাবে ভালোভাবে কাজে লাগানো যায় তাতে ফোকাস করে তাহলে কঠোর পরিশ্রম করতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। আপনি ইতিমধ্যেই চমৎকার একটি জীবনযাপন করছেন।
www.inc.com সাইটে প্রকাশিত আর্টিকেলের ছায়া অবলম্বনে লেখা।
মন্তব্য করুন