নতুনদের জন্য মেডিটেশন: কীভাবে গভীরভাবে ও দ্রুত মেডিটেট করবেন

Share

মনে করুন আপনি খুব দ্রুত দৌড়াচ্ছেন। কয়েক মিনিট কেটে যাবার পর ধীরে ধীরে আপনার দম ফুরিয়ে আসবে। মাংসপেশিতে ব্যথা শুরু হবে আর আপনার গতি শ্লথ হয়ে আসবে এবং তারপরও আপনি নিজেকে এগিয়ে নিতে চাইবেন। এবং শেষমেশ আপনি মাটিতে পড়ে যাবেন কারণ আপনার সব শক্তি ফুরিয়ে গিয়েছে এবং আপনার দেহ আর সক্রিয় থাকতে পারছে না।

আমাদের মধ্যে অনেকের মনের ক্ষেত্রেও এই ব্যাপারটি ঘটে, যখন আমরা দীর্ঘদিন ধরে মানসিক চাপের মধ্যে থাকি। সব ভাবনাগুলো আমাদের অন্তহীন কাজের তালিকার দ্বারা চালিত হয় এবং সেইসাথে আমাদের দুশ্চিন্তা আর ভয় আমাদের মস্তিষ্ককে ক্লান্ত করে তোলে।

কেমন হবে যদি আমি আপনাকে বলি যে বিজ্ঞান দ্বারা সৃষ্ট একটি সহজ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আপনি দিনে মাত্র ২০ মিনিটেই স্ট্রেস লেভেল কমিয়ে আনতে পারবেন, আপনার সিদ্ধান্ত গ্রহণের দক্ষতা বাড়বে এবং উত্তেজনা দূর হবে?

এই প্রক্রিয়াটিই হচ্ছে মেডিটেশন। শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রেই ১৮ মিলিয়নেরও বেশি লোক এটির চর্চা করছে এবং এটি এখন বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা হয়েও দাঁড়িয়েছে। গুগল, গোল্ডম্যান স্যাকস এবং সেলসফোর্সের মতো বড় বড় কোম্পানিগুলো কর্মক্ষেত্রে মেডিটেশন চর্চাকে কাজে লাগাচ্ছে এবং ২২% কর্মীদেরকে ২০১৬ সালে মনোযোগের বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

আমরা মেডিটেশন নিয়ে এই প্রবন্ধটি লিখছি নুতুনদের জন্য যাতে করে আপনারা এর সম্পর্কে জানতে পারেন এবং এখনই এটি সঠিকভাবে ব্যবহারের মাধ্যমে এর সুবিধাগুলো গ্রহণ করতে পারেন।

আপনার দেহ-মনের জন্য মেডিটেশনের গুরুত্ব  

মেডিটেশনের প্রকৃত চর্চা বিভিন্ন উপায়ে করা যায় কিন্তু এর মধ্যে একটি উপায়ে অনেক ভালো ফলাফল পাওয়া যায় বলে প্রমাণিত হয়েছে এবং একে মনোযোগপূর্ণ মেডিটেশন বলে।

এই চর্চার উদ্দেশ্য হচ্ছে আপনার মনকে দৃঢ়ভাবে প্রশিক্ষিত করা এবং বর্তমান মুহূর্তের মধ্যে ভালো করে ফোকাস করতে শেখানো। এতে আপনার নিজের শ্বাস-প্রশ্বাসের মতো নির্দিষ্ট কিছুতে মনোযোগ ধরে রাখা এবং আপনার মধ্যকার ও আপনার আশেপাশের সবকিছু সচেতনভাবে পর্যবেক্ষণ করাও অন্তর্ভুক্ত।

মেডিটেশন আপনার মস্তিষ্ককে রিচার্জ করে

মেডিটেশন আপনাকে বিশ্রাম করতে এবং সুস্থ অবস্থায় থাকতে সাহায্য করে যেখানে আপনি আপনার চিন্তা-ভাবনা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হন না। এর ফলে আপনার মন সেগুলোকে পরিচালনা করার ক্ষেত্রে আরো দক্ষতা লাভ করে যাতে করে আপনি সেগুলো পর্যবেক্ষণ করতে পারেন আরো ভালো সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে।

মেডিটেশন বলতে ভিন্ন বা নতুন, এমনকি আরো ভালো কোনো ব্যক্তিতে পরিণত হওয়াও বোঝায় না। এটি সচেতনভাবে শিক্ষা গ্রহণ করার এবং দৃষ্টিভঙ্গি আরো স্বচ্ছ করে তোলার বিষয়। আপনি আপনার ভাবনা কিংবা অনুভূতি থেকে পিছু ছাড়াচ্ছেন না। আপনি সেগুলোকে নিরপেক্ষভাবে পর্যবেক্ষণ করতে শিখছেন। এবং এতে করে আপনি সেগুলোকে আরো ভালো করে বুঝতে শুরু করবেন।

মেডিটেশন আপনার মস্তিষ্ক সুস্থ রাখে

বিভিন্ন শারীরিক ব্যায়ামের মাধ্যমে যেমন আপনার দেহ আরো দৃঢ়তা পায়, তেমনি এই মানসিক ব্যায়ামের ফলে আপনার মস্তিষ্কও আরো শক্তিশালী হয়ে উঠবে। এটি মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশ সক্রিয় করে তুলবে, যা থেকে বুদ্ধিমত্তা, সহমর্মিতা এবং সুখের মতো অনুভূতিগুলোর আরো অনেক বিস্তার ঘটবে।

এটি জানা কথা যে আমাদের মস্তিষ্ক ৩০ বছরের কাছাকাছি বয়সে এসে ধীরে ধীরে সংকোচিত হতে থাকে, কিন্তু মস্তিষ্ককে নিজস্ব আকৃতিতে ধরে রাখবার ক্ষেত্রে মেডিটেশন এই সংকোচন রোধ করতে পারে।

মেডিটেশন আপনার দৈহিক সমস্যা সম্পর্কে খেয়াল রাখে

আমরা যখন খুব ব্যস্ত থাকি, তখন শরীরের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম উপসর্গ খেয়াল করতে পারি না। যেমন আমরা যখন স্ট্রেসড থাকি, তখন বুকে ব্যথা, জ্বালাপোড়া এবং শরীর ভারি লাগার মতো কিছু প্রারম্ভিক উপসর্গ দেখা দেয়। এই উপসর্গগুলো এড়িয়ে যাবার কারণে একসময় অনেক বড় কিছু যেমন উচ্চ রক্তচাপ, ক্লান্তি এবং অতিরিক্ত উদ্বেগ  হতে পারে।

মেডিটেশন আপনাকে আপনার শরীর ও স্বাস্থ্যের মধ্যকার যোগাযোগ সম্পর্কে অবগত করায় এবং এতে করে দেরি হবার আগেই সুস্থতার বিষয়ে আপনি সচেতন হয়ে উঠবেন।

মেডিটেশন শুরু করা কেন জরুরি

৫০ বছরেরও দীর্ঘ বৈজ্ঞানিক গবেষণার মাধ্যমে দেখা গেছে যে মেডিটেশনের ফলে বিভিন্ন ধরনের সুবিধা পাওয়া যায়, যা আপনার দেহ-মনে একইসাথে প্রভাব ফেলে।

মেডিটেশনের অন্যতম প্রমাণিত সুবিধা হিসেবে আমি যা পেয়েছি তা হলো এই যে, এটি আপনার মস্তিষ্ককে আক্ষরিক অর্থেই পাল্টে দেয়। ব্রেইন স্ক্যানে দেখা গেছে যে গ্রে ম্যাটার নামক মস্তিষ্কের নিউরন সমৃদ্ধ অংশটি, যেখানে সিদ্ধান্ত গ্রহণ, আবেগীয় পরিচালনা এবং স্মৃতি সংরক্ষণের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ঘটে থাকে, সেটি লক্ষণীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

মেডিটেশন করার একটি সহজ উপায় (এমনকি একদম নতুনদের জন্যও)

যদি আপনি আগে কখনোই মেডিটেশন না করে থাকেন, তাহলে প্রতিদিন মাত্র ২ মিনিট সময় দিয়েই মেডিটেশন শুরু করাটা বেশ ভালো হতে পারে এবং এ অভ্যাস চালু রাখলে আপনি নিজেই এর ফলাফল পাবেন।

একটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে যে মেডিটেশন আপনার চিন্তা-ভাবনাকে থামিয়ে দেবার জন্য নয়। বরং এটি সেগুলো সম্পর্কে আরো বেশি সচেতন থাকা এবং সহজভাবে তাদের আসা-যাওয়া করতে দেবার বিষয়ে।

আপনার যা দরকার হবে তা হলো স্বস্তিদায়ক একটি স্থান যেখানে আপনাকে কেউ বিরক্ত করবে না এবং এরপর নিম্নলিখিত নির্দেশনা অনুসরণ করুন:

১. পিঠ টানটান করে চেয়ার বা মেঝেতে (আপনার জন্য যেটি বেশি স্বস্তিদায়ক) একটি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় বসুন।

২. মৃদু ফোকাসের সাথে চোখ খোলা রাখার মাধ্যমে শুরু করুন।

৩. একবার নাক দিয়ে গভীর শ্বাস নিন এবং মুখ দিয়ে ছাড়ুন।

৪. শ্বাস ছাড়ার সময় ধীরে ধীরে চোখ বন্ধ করুন এবং স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস চালু রাখুন।

৫. একটি মুহূর্তের জন্য থামুন এবং বর্তমানকে উপভোগ করুন। আপনার দেহের নিচে চেয়ারের মধ্যে এবং মেঝের উপর আপনার পায়ের চাপ, আপনার পায়ের উপর ছড়িয়ে থাকা হাত দুটোকে অনুভব করুন।

৬. ধীরে ধীরে শ্বাস-প্রশ্বাসের উপর আপনার মনোযোগটুকু ফিরিয়ে আনুন এবং লক্ষ করুন যে শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে আপনার দেহে একপ্রকার ওঠানামার অনুভূতি হচ্ছে।

৭. যখন আপনার মনে হবে যে আপনার মন সকল ভাবনা-শব্দ কিংবা অন্য যেকোনো অনুভূতি থেকে মুক্ত হয়েছে, তখন আবার আপনার শ্বাস-প্রশ্বাসের দিকে মনোযোগ ফিরিয়ে আনুন।

৮. ধীরে ধীরে আপনার দেহ ও আশেপাশের স্থান সম্পর্কে সচেতন হোন এবং তারপর আস্তে করে চোখ খুলুন।

৯. আপনার দিনটি শুরু করার আগে এতক্ষণ যা করলেন, তা নিয়ে একটু সময় ভাবুন যে আপনার কেমন লেগেছে।

মেডিটেশনের বাধাগুলো দূর করা

এমন অনেককিছুই আছে, যেগুলো হয়তো আপনাকে নিয়মিত মেডিটেশনের চমৎকার ফলাফল ভোগ করা থেকে দূরে রাখতে পারে। এখানে কিছু চ্যালেঞ্জের কথা বলা আছে, যেগুলো মেডিটেশন করার ক্ষেত্রে আসতে পারে এবং সেগুলোর মুখোমুখি হবার জন্যও কিছু নির্দেশনা দেওয়া আছে:

  • সন্দেহ – আপনি হয়তো সংশয় বোধ করছেন এবং আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে এত সহজ প্রক্রিয়ার চর্চার মাধ্যমে সত্যিই কোনো সাহায্য হবে কিনা। মেডিটেশনের সফলতা সম্পর্কে অনেক প্রমাণ পাওয়া গেছে, তাই মুক্তমনে মেডিটেশনের প্রক্রিয়ায় আপনি বিশ্বাস রাখতে পারেন। ধীরে ধীরে আপনি নিজেই পরিবর্তন দেখতে পাবেন এবং সম্ভাবনাগুলো আপনার কাছে বাস্তব হয়ে উঠবে।
  • অস্থিরতা – আপনার অস্থির লাগতে পারে এবং মেডিটেশন করবার সময় বিভিন্ন চিন্তার কারণে বারবার মনোযোগ সরে যেতে পারে। মনে রাখবেন যে, এটি প্রথমদিকে খুবই স্বাভাবিক একটি ব্যাপার। অন্য যেকোনো চর্চার মতই, আপনি শান্ত অবস্থায় পৌঁছুনোর ক্ষেত্রেও বারবার করার মাধ্যমে একসময় দক্ষ হয়ে উঠবেন।
  • অধৈর্য – আপনি হয়তো অন্যদের মতো খুব দ্রুত ইতিবাচক প্রভাব দেখতে পাচ্ছেন না, কিন্তু চিন্তার কিছু নেই। ইতিবাচক ফলাফল আসতে কিছুটা সময় লাগতেই পারে। আপনি আপনার নিজস্ব গতিতে এগিয়ে যান এবং ধীরে ধীরে অবস্থার উন্নতি ঘটবে এবং সে অভিজ্ঞতা খুব দূরে নয়।
  • তন্দ্রাভাব – আপনি যদি ক্লান্ত কিংবা দুর্বল হন, তবে অবশ্যই মনোযোগ ধরে রাখতে সমস্যা হবে। এটি যদি বারবার ঘটে, তবে এমন কোনো সময় মেডিটেশন করার চেষ্টা করুন যখন আপনি আরো বেশি জেগে থাকতে পারেন যেমন দিনের প্রথমদিকে বা রাতে ঘুমানোর কাছাকাছি সময়ে।
  • অনুৎসাহ – অন্য যেকোনো নতুন অভ্যাস গঠনের মতোই আপনার দৈনন্দিন রুটিনে কখনো কখনো হয়তো আপনি মেডিটেশন সেশন মিস করে যেতে পারেন। কিন্তু এতে করে হাল ছেড়ে দেবেন না। সামনে এগিয়ে যান এবং যখন আপনার সুবিধা হয়, তখনই করুন। বিন্দু বিন্দুতেই তো সিন্ধু হয়!

মৌলিক প্রক্রিয়া এবং অনুশীলনের নিয়ম (নির্দিষ্ট ধাপসহ)

সবচেয়ে গবেষণা করা দুটো পদ্ধতির মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ফোকাসড অ্যাটেনশন মেডিটেশন (FAM) এবং ওপেন মনিটরিং মেডিটেশন (OMM)।

ফোকাসড অ্যাটেনশন মেডিটেশনের মধ্যে যেকোনো বস্তু, আপনার শ্বাস-প্রশ্বাস, কোনো স্থিরচিত্র বা কিছু শব্দের উপর সক্রিয় মনোযোগ ধরে রাখা অন্তর্ভুক্ত।

ওপেন মনিটরিং মেডিটেশনের ক্ষেত্রে যেখানে আপনি মেডিটেশন চর্চা করছেন, সেখানে যেকোনো প্রকার চিত্তবিক্ষেপ সত্ত্বেও সেগুলোর প্রতি খেয়াল না করে আপনার পর্যবেক্ষণ ধরে রাখার চেষ্টা অন্তর্ভুক্ত। 

শুরুর দিকে অধিকাংশ মনোযোগপূর্ণ মেডিটেশন সেশনের ক্ষেত্রে মনোযোগের সাথে সাথে এই দু ধরনের পদ্ধতির সমন্বিত রূপ ব্যবহার করুন এবং ধীরে ধীরে ওপেন মনিটরিং মেডিটেশনে স্থানান্তরিত হোন।

আপনার মেডিটেশন প্রক্রিয়াকে আরেকটু এগিয়ে নিতে কিছু মৌলিক প্রক্রিয়া দেওয়া হলো যার প্রতিটির সাহায্যেই আপনি চর্চা করতে পারেন:

ফোকাসড অ্যাটেনশন মেডিটেশন

ফোকাসড অ্যাটেনশন মেডিটেশন বিভিন্ন উপায়ে করা যায় যেহেতু ফোকাস করবার মতো অনেক জিনিসই রয়েছে। এখানে আপনাকে কিছু মৌলিক প্রক্রিয়া দেওয়া হলো যা আপনি ব্যবহার করতে পারেন:

  • শ্বাস-প্রশ্বাস সংক্রান্ত মেডিটেশন – এটি ফোকাসড অ্যাটেনশন মেডিটেশনের অনেক সাধারণ একটি রূপ যেখানে আপনি মেডিটেশন করবার সময় নিজের শ্বাস-প্রশ্বাসের দিকে লক্ষ রাখতে পারেন। প্রতিটি শ্বাস গ্রহণ ও ত্যাগের সাথে ১০ পর্যন্ত গুনুন এবং পুনরাবৃত্তি করুন। যখনই মন এদিক ওদিক যেতে চাইবে, আবারো শ্বাসের দিকে মনোযোগ ফিরিয়ে আনুন এবং আবার নতুন করে গুনতে শুরু করুন।
  • হাঁটার মাধ্যমে মেডিটেশন – স্বস্তিদায়ক গতিতে হাঁটতে বেরোন। তারপর দেহের সকল অনুভূতির প্রতি মনোযোগ স্থাপন করুন। মেঝেতে প্রতি পদক্ষেপের সাথে আপনার পায়ের ওজন অনুভব করার চেষ্টা করুন এবং প্রতিবার আপনার হাত দুটোর দোলন বোধ করবার চেষ্টা করুন। যদি অন্য কোনো চিন্তা মাথায় আসে, তবে আবারো হাঁটার সময় এই অনুভূতিগুলোর প্রতি আপনার মনোযোগ ফিরিয়ে আনুন।
  • মন্ত্র দ্বারা মেডিটেশন – মন্ত্র বলতে কোনো শব্দ বা শব্দগুচ্ছক বোঝায় যা কিনা আপনি বারবার নিজের মনেই আওড়াতে থাকেন। এটি যেকোনো শব্দই হতে পারে তাই আপনার পছন্দসই ইতিবাচক কোনো শব্দ বাছাই করুন, যেটি আপনার জন্য বলতে স্বস্তিদায়ক হয়। মেডিটেশন শুরু করার সময়, আপনার চোখ দুটো বন্ধ করুন এবং নিজের মনে মন্ত্রের পুনরাবৃত্তি করুন। শুধুমাত্র উচ্চারিত শব্দের প্রতিই মনোযোগ স্থাপন করুন এবং মন্ত্রটি সর্বাঙ্গে অনুভব করুন। যখনই মন এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াতে চাবে, মন্ত্রের প্রতি মনোযোগ ফিরিয়ে আনুন।
  • বস্তু বা চিত্রের মাধ্যমে মেডিটেশন –এই প্রক্রিয়াতে আপনার মনে থাকা কোনো চিত্র বা প্রকৃত বস্তুর প্রতি মনোযোগ স্থাপন করতে হবে। চিত্রের মাধ্যমে মেডিটেশন চোখ বন্ধ করে করা যাবে, তবে যদি আপনি চান চোখ খুলেও করতে পারেন যেমন কোনো ফুল বা জ্বলন্ত মোমবাতির শিখার দিকে তাকিয়ে থেকে।

ওপেন মনিটরিং মেডিটেশন

ওপেন মনিটরিং মেডিটেশন পুরোটাই আপনার অভিজ্ঞতাগুলো নিরাসক্ত ও নিরপেক্ষভাবে পর্যবেক্ষণ করার বিষয়। আপনার চিন্তা-ভাবনা ও অনুভূতি সম্পর্কে এধরনের সচেতনতা সেগুলো দ্বারা কোনোভাবে নিয়ন্ত্রিত না হয়ে মনোযোগ ধরে রাখার জন্য জরুরি।

এটি স্বচ্ছতা, জ্ঞান ও দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রতিষ্ঠিত করে যা কিনা অন্তর্দৃষ্টির মাধ্যমে লাভ করা যায় এবং এ থেকে ভয় বা স্ট্রেসের মতো তীব্র আবেগ নিয়ন্ত্রণ এবং আরো ভালোভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের পথে এগিয়ে যাওয়া যায়।

যেভাবে করবেন:

১. আপনার মেডিটেশন অবস্থানে আরাম করে বসুন।

২. লম্বা ও গভীর শ্বাস নিন। প্রতিটি নিশ্বাসের সাথে আপনার দেহের স্বস্তিটুকু অনুভব করুন।

৩. বর্তমান মুহূর্তে আপনার সচেতন মনকে বিশ্রাম করতে দিন।

৪. কিছু মুহূর্তের জন্য আপনার সংবেদনশীল অনুভূতিতে ডুবে যান। চেয়ারের মধ্যে আপনার দেহের ভার এবং কোলে থাকা হাতের উপস্থিতি অনুভব করুন। ঘরটিতে কোনোপ্রকার শব্দ কিংবা গন্ধ আছে কিনা খেয়াল করুন।

৫. আপাদমস্তক নিজের শরীরটি ভালো করে দেখুন এবং কোনো প্রকার সংবেদনশীলতা অনুভূত হচ্ছে কিনা খেয়াল করুন।

৬. পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে আপনার ভাবনা ও অনুভূতিগুলো সম্পর্কে সচেতনতা আরো গভীর করুন। গভীর অনুভূতিগুলো চিনতে শিখুন। সেগুলো নিয়ে বেশি ভাববেন না, কিন্তু সহজভাবে খেয়াল করুন। একমাত্র অনুভূতিগুলোকে চিহ্নিত করবার মাধ্যমেই সেগুলোতে ডুবে যাওয়া থেকে দূরে থাকতে পারবেন। আপনার যদি ভয় লাগে, তবে নিজেকে বলুন, “এটি ভয়।” এবং তারপর এটি থেকে মুক্ত হোন।

৭. আপনার মন যখন মুহূর্তের জন্য অশান্ত হয়ে উঠবে, তখন নিজেকে এই অনুভূতিগুলোর সাথে যুক্ত হওয়াটা প্রতিরোধ করুন। সেগুলোকে শুধু আসা-যাওয়া করতে দিন।

৮. এতক্ষণের গভীর সচেতনতা থেকে মনকে বর্তমান মুহূর্তে মধ্যে আসতে দিন এবং মেডিটেশন বন্ধ করুন।

গাইডেড মেডিটেশন

মেডিটেশন শুরু করবার এবং সত্যিকার অভিজ্ঞতা গ্রহণের জন্য একটি ভালো উপায় হচ্ছে গাইডেড মেডিটেশনে অংশ নেওয়া।

আপনি স্থানীয় মেডিটেশনের ক্লাসে যোগ দিতে পারেন বা আপনি যদি একজন অন্তর্মুখী ব্যক্তি হয়ে থাকেন,তাহলে আপনি হেডস্পেস এর মতো অ্যাপ ডাউনলোড করতে পারেন, যেখানে ফ্রি সেশন রয়েছে এবং এগুলোর মাধ্যমে আপনি ঘরে বসেই আরাম করে মেডিটেশন করতে পারেন।

আপনি যে পরিবর্তনটি খুঁজছেন

যেসব উপায়ে মেডিটেশন আপনাকে সাহায্য করে, তার মধ্যে অন্যতম একটি উপায় হচ্ছে আপনার এটি বোধগম্য হওয়া যে আপনি আপনার চিন্তা-ভাবনা কিংবা অনুভূতি নন; যদি আপনি আপনার ভাবনা দ্বারা শৃঙ্খলিত হয়ে থাকেন, তবে মেডিটেশন আপনাকে তা থেকে মুক্ত করে।

নিজের সাথে খুব সহজে সংযুক্ত হয়ে এবং আরো বেশি আত্মসচেতন হবার মাধ্যমে আপনি স্ট্রেস সামলানো, স্বাস্থ্যোন্নয়ন এবং আপনার বুদ্ধিমত্তা বৃদ্ধির পথে এগিয়ে যেতে পারেন।

তাই দু মিনিট সময় নিন, চোখ দুটো বন্ধ করুন, নিজের শ্বাস-প্রশ্বাসের দিকে মনোযোগ দিন এবং বর্তমানে বাঁচুন। এতে করে আপনার জীবনটা আরো একটু ভালোর পথে এগিয়ে যেতে পারবেন।

www.lifehack.org সাইটে প্রকাশিত আর্টিকেলের ছায়া অবলম্বনে লেখা।

আপনি উদ্যমী!
আপনার জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে চান?  

তাড়াতাড়ি সাবস্ক্রাইব করুন।

আমাদের সেরা কনটেন্ট আপনার ইমেইলে পৌছে যাবে প্রতি সপ্তাহে।  

Invalid email address
আপনি যেকোনো সময় আনসাবস্ক্রাইব করতে পারবেন।  

মন্তব্য করুন