গল্প বলার ৪ উপায় ব্যবহারের মাধ্যমে আপনার ব্যক্তিগত ব্র্যান্ডিং জনপ্রিয় করুন
আমেরিকার বিখ্যাত বিমান কোম্পানি সাউথওয়েস্ট এয়ারলাইন্সের যাত্রা শুরু হয়েছিল এক টুকরো ন্যাপকিনের উপর। কোম্পানির প্রাক্তন সিইও হার্ব কেললেহার একটি ককটেল ন্যাপকিনের উপর এই বিমান ব্যবসার পুরো মডেলটি হিবিজিবি করে লিখেছিলেন। আর একসময় স্টার্ট-আপটি একটা বিরাট প্রতিষ্ঠানের রূপ নেয়।
এই দীর্ঘ সময়ে কোম্পানিটির সাফল্যের বিভিন্ন কারণ রয়েছে। এর মাঝে একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো – গল্প বলা ব্যবহার করে ব্যক্তিগত ব্র্যান্ডিংকে সমৃদ্ধ করা। সাউথওয়েস্ট এয়ারলাইন্সের সূচনার ঘটনাটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, অনেক বড় চিন্তাও যেকোনো ছোট বা অসম্ভব জায়গায় উদয় হতে পারে। এবং কেললেহারের ব্যক্তিগত ব্র্যান্ড কোম্পানিটির সার্বিক উন্নতিতে যথেষ্ট সহযোগিতা করে।
গল্প বলা নেতৃত্বের কোন প্রধান গুণ নয়। কিন্তু এটা একজন নেতাকে তার শ্রোতাদের সঙ্গে যোগাযোগের সুন্দর পথ করে দেয়, যা হয়ত সাধারণভাবে সম্ভব না। কেললেহার, ভার্জিন এয়ারলাইন্সের রিচার্ড ব্র্যানসন ও এপলের স্টিভ জবসের মতো সিইওরা তাদের চমৎকার গল্প বলার ভঙ্গির জন্য সুপরিচিত ছিল।
ব্যক্তিগত ব্র্যান্ডিং গল্প বলাকে ব্যবহার করে অনেক জটিল পরিস্থিতিকেও সহজ করে শ্রোতার সাথে যোগাযোগ স্থাপন করাতে পারে। ভালো পণ্যের নাম করতেই আমাদের চোখের সামনে যে ইতিবাচক আর পরিচিত চিত্রটি ভেসে ওঠে তা আসলে এই ব্যাপারটিরই একটা বিস্তৃত রূপ। যেসব নেতা গল্পকে ব্যবহার করে নিজেদের একটা অবস্থান গড়ে তুলেছেন, তাদের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।
নিজের গল্পকে নিশ্চিত করুন
কর্মীদের মিটিং কিংবা প্রকাশ্য বক্তৃতা- সবরকম যোগাযোগের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে নিজের বার্তাটি পৌঁছে দেয়া। আর চমৎকার গল্প বলতে পারা আমাদের সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করে আরও অনেকরকম শ্রোতার সাথে যুক্ত হওয়ার সুযোগ দেয়। ঠিকমতো ব্যবহার করতে পারলে যা আপনার ব্যক্তিগত ব্র্যান্ডের জন্য এক মহামূল্যবান সম্পদ হয়ে দাঁড়াবে।
যদিও শ্রোতার সাথে যুক্ত হওয়ার মতো একটা চমৎকার গল্প বলা খুব সহজ কাজ নয়,তবু নিচে উল্লেখিত চারটি পদ্ধতিতে আপনিও গল্প বলাকে ব্যবহার করে নিজের ব্যক্তিগত ব্র্যান্ডকে সামনে এগিয়ে নিতে পারবেন।
১) গল্পের বিশ্বাসযোগ্যতা নিশ্চিত করুন
আপনি গল্পের যেই চরিত্রই হন না কেন- নায়ক, খলনায়ক বা শুধুই একটা চরিত্র- আপনার উচিৎ সবসময়ই একজন গল্প বলিয়ে হিসেবে থাকা। কখনো নিজেকেই পুরো গল্প বানাবেন না। অকারণ বাণিজ্যিকীকরণ ও বর্ণনা এড়িয়ে কাহিনীসূত্র ও বার্তা যথেষ্ট পরিষ্কারভাবে বলতে হবে।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়- কেললেহার বিচিত্র ব্যক্তিত্বের অধিকারী, কিন্তু এটা কখনোই তার ব্র্যান্ডের কেন্দ্রবিন্দু ছিলো না। মূল ব্যাপার ছিলো- তিনি কিভাবে বিমান ব্যবসার নিরাপত্তা সংস্কৃতির নতুন একটি সংজ্ঞা দাঁড় করালেন ও কাজের একটা ভালো পরিবেশকে উৎসাহ দিলেন।
তিনি তার জন্য কাজ করা কর্মীদের জন্য যথেষ্ট পরিমানে মনোযোগী ছিলেন, তাদের সামর্থ্য ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রতি তার সমর্থনের জন্য পরিচিত ছিলেন। আর এই সহানুভূতিশীল ব্যাপারটা- সহৃদয় কাজের পরিবেশ, এটাই সাউথওয়েস্ট ও কেললেহার স্মরণ করতে পারে কোম্পানিটির কর্মী ও গ্রাহকদের মন জয় করার একটা অন্যতম কারণ হিসেবে।
২) পুনরাবৃত্তি, শক্তিশালী বার্তাই শক্তি
আপনার বার্তা দেয়ার জন্য রসিকতা, বিদ্রুপ বা অন্য যে কোনো কিছুই ব্যবহার করেন না কেন, এটা যেন আপনার শ্রোতার সাথে সংযোগ ঘটাতে পারে। যেমন- ব্র্যানসন একটা উচ্ছাস ও রসিকতার মাধ্যমে তার ভার্জিন কোম্পানির প্রজেক্টগুলো প্রদর্শন করে। এই হালকা মেজাজ তাকে তার প্রতিযোগীদের কাছ থেকেই শুধু আলাদা করেনি, সেই সাথে তার ব্যক্তিগত ব্র্যান্ডের প্রতিও মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে।
কারো ব্যক্তিগত ব্র্যান্ড যদি আকর্ষণীয় ও কৌতুহলজনক গল্প ও বার্তা দিয়ে সাজানো হয়, তবে অন্যদের পক্ষে তার ও তার পেশাদার ব্র্যান্ডের সাথে একাত্ম হওয়াটা সহজ হয়।
একটা সাধারণ বার্তা আকর্ষণীয় হলে শ্রোতারা তার প্রতি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আকর্ষণবোধ করে। একটি প্রাণবন্ত গল্পের সাথে সাথে আপনার কথাটি বলা হলে শ্রোতারা নিজেদেরকেও তার একটা অংশ মনে করে।
৩) গল্পের কাহিনীসূত্রে দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখা
দীর্ঘের চেয়ে সংক্ষিপ্ত ভালো, সরল ভালো জটিলের চেয়ে আর কম মানেই বেশি। এ কথাটা অসংখ্যবার বলা হয় এবং তা গল্পের বেলাতেও খাটে। গল্পের কাহিনীতে অযথা ঘুরে বেড়াবেন না ও অপ্রাসঙ্গিক বর্ণনা পরিহার করুন।
মনে রাখবেন কেন আপনি গল্পটি শুরু করেছিলেন- সেটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। রিচার্ড ব্র্যানসনের নিজের অনন্য ব্যক্তিত্বের সঙ্গতিপূর্ণ ব্যবহার তার ব্র্যান্ডের শক্তিশালী অবস্থানে পৌঁছানোর অন্যতম প্রধান কারণ। এবং প্রায় সবক্ষেত্রে তার কোম্পানি তার কৌতুকবোধের প্রতিনিধিত্ব করে- যা মানুষকে শুধু ব্র্যানসন নয়, বরং ভার্জিনের সাথেও একাত্ম করে।
৪) চকচকে হওয়া ছাড়াই স্মরণীয় হন
রূপক বেশ চমৎকার, কিন্তু সেটাকে দয়া করে যে কোনো কিছু বোঝানোর জন্যই ব্যবহার করবেন না। তুলনা সবসময়ই সুন্দর, যদি তা প্রাসঙ্গিক ও বিশ্বাসযোগ্য হয়। এবং তা বার্তাটিকে আরো ভাবে বুঝতে সাহায্য করার জন্য ব্যবহার করা উচিৎ, ভুল কিছু নয়।
স্টিভ জবসের স্ট্যানফোর্ডের উদ্বোধনী বক্তৃতাকে এজন্যই বছর দশেক পরেও এতো উল্লেখ করা হয়। তিনি বুঝেছিলেন যে মানুষের ভেতরের কন্ঠ রূপকের ব্যবহার এমন একজনকে রূপ দিতে পারে যে কিনা একটি অনন্য আস্থাশীল ব্র্যান্ডের বৈশিষ্ট্য ধারণ করে।
শিক্ষার্থীদের তিনি সেসব কিছু অর্জনের প্রতি উৎসাহিত করেন যা তাদের আলাদা করে। কারণ এটার উপর তাদের সাফল্য নির্ভর করে। ব্র্যান্ডের ব্যাপারটাও অনুরূপ কাজ করে। একটা চমৎকার গল্প শ্রোতাকে আপনার প্রতি একটা ইতিবাচক মনোভাব গড়ে তুলতে সাহায্য করে।
কেললেহার,ব্র্যানসন এবং জবস তাদের গল্প বলার কৌশলকে ব্যবহার করে শ্রোতাকে আনন্দ দিতেন। একইসাথে সবার মনে জায়গা করে নিয়েছিলেন তাদের অনন্য ব্যক্তিগত ব্র্যান্ডের কারণে, প্রতিটি ক্ষেত্রেই গ্রাহকদের সাথে চমৎকার সম্পর্কযুক্ত একটি সফল কোম্পানির মাধ্যমে।
লিখেছেন স্টেফান সওয়ানপোএল।
www.success.com সাইটে পূর্বপ্রকাশিত।
মন্তব্য করুন