কোন কিছু পড়ে মনে রাখার উপায়

Share

Image Source: theusefulmind.com

আমাদের মস্তিষ্ক আমরা জীবনে যা কিছুর সম্মুখীন হই সবকিছু মনে রাখা জন্য নয়। যদি না আপনি কোন বিরল ব্যক্তিতের অধিকারী হয়ে থাকেন এবং আপনার  ফোটোগ্রাফিক মেমরি থেকে থাকে, এটি খুবই স্বাভাবিক কোন  বিষয়বস্তু খুঁটিনাটি খুব দ্রুত মলিন হয়ে যায় আমাদের স্মৃতি থেকে।

আপনি যদি কোন আর্টিকেল পড়েন, কতদিন আপনার সেটি মনে থাকে, অথবা সেটি কি নিয়ে ছিল আপনি কি তা মনে করতে পারেন? এমন কি কখনও হয়েছে যে  আপনি একটি সিনেমার টাইটেল দেখে চিনতে পারছেন, কিন্তু প্লট মনে করতে পারছেন না? আপনি যা পড়ছেন বা যে সিনেমাগুলি দেখেছেন তা যদি প্রায়শই ভুলে যেয়ে থাকেন, তবে আপনি একা নন।

মনে করে দেখুন তো গতকাল দুপুরের আপনি কি খেয়ে ছিলেন অথবা আপনি গত সপ্তাহে কি করেছিলেন। সেই স্মৃতিগুলো সম্ভবত ঝাপসা হয়ে গেছে কারণ তারা আপনার বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় নয়। আমাদের মস্তিস্ক প্রায় 8 গিগাবাইট ক্ষমতা আছে কোন কিছু মনে রাখার জন্য এবং শুধুমাত্র সবচেয়ে প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো এটি সংরক্ষণ করে রাখে । এটি আমাদের জন্য অপ্রয়োজনীয় তথ্যের কিছু অস্পষ্ট ছবি ধরে রাখে মাত্র।

মানুষের মস্তিষ্কটি বিপুল পরিমান তথ্য নিয়ন্ত্রণ করা জন্য তৈরী হয়নি। আমরা প্রতিদিন নানা ধরনের ঘটনার সম্মুখীন হই। যদি আমরা সবকিছুকেই প্রসেস করি এবং মনে রাখি, তাহলে সম্ভবত আমাদের পক্ষে ঠিক মত ফাংশন করাই সম্ভব হবে না। আমাদের মস্তিষ্ক আমাদের সব অভিজ্ঞতাগুলো সাজিয়ে রাখে, তুচ্ছ ঘটনাগুলোকে বেছে ফেলে দেয় এবং গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো মনে রাখে।

আপনি যখন প্রথমবার কিছু পড়েন, এটি শেষ করা আপনার প্রাথমিক লক্ষ্য থাকে

এটা কোন ব্যাপার না যে আপনি একটি সিনেমা দেখতে বা একটি বই পড়তে কতটা উন্মুখ হয়ে আছেন। যতক্ষণ পর্যন্ত না এর বিষয়বস্তু আপনার বেঁচে থাকার সাথে সম্পৃক্ত, আপনি যা দেখেছেন বা পড়েছেন তা খুব দ্রুত ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

এটির একটি কারণ হল আমাদের প্রাথমিক লক্ষ্যই থাকে সিনেমাটি দেখা বা বইটি পড়া। যখন  কোন কিছু আমাদের অদেখা থাকে, গল্পটি শেষ করা আমাদের প্রধান উদ্বেগের কারন হিসাবে দেখা দেয়। আপনি যখন আপনার ইচ্ছাটি পূর্ণ করতে পারেন, আপনি সম্ভবত যা দেখেছেন তা আর মনে রাখবেন না।  কোন সিনেমা বা বই পড়ে শেষ করা আর এর প্রতিটি ডিটেইল মনে রাখা এক কথা নয়।

মানুষ স্মৃতি সংরক্ষণ করে রাখে এনকোডিং নামক প্রক্রিয়া মাধ্যমে। আমাদের মস্তিষ্ক এনকোডিং মাধ্যমে তথ্য সংরক্ষণ করে যখন এটি আমাদের আগের অভিজ্ঞতার সাথে নতুন তথ্যগুলো মিলাতে পারে।

আমরা যখন রাস্তায় অচেনা কাউকে প্রথমবারের মত দেখি আমাদের মস্তিষ্ক একটি তথ্য প্রেরণ করে।আপনার নিউরোন এটি প্রসেস করে যে আপনি কাউকে দেখেছেন এবং এটিই এর শেষ। আপনার আর এটি মনে থাকে না এবং সেই জায়গাটি ছেড়ে যাওয়ার পরে, আপনি সম্ভবত মনে রাখবেন না আপনি কাকে দেখেছেন।

কিছু মানুষ মনে রাখতে পারেন তারা কি দেখেছেন, কিন্তু কেন?

আপনি হয়তো বা হতাশ হতে পারেন যা দেখেছেন তা মনে রাখতে পারেন না বলে। কিন্তু যখন আপনি এমন কাউকে খুঁজে পান যে সব কিছু মনে রাখতে পারে তখন ব্যাপারটি আরও মারাত্মক হতে পারে। আপনার এই বন্ধুটি কয়েক মাস আগে দেখেছেন এমন সিনেমার গল্প বিশদভাবে বিবরণ দিতে পারে। এতোদিনে আপনার হয়তো অনেক আগে পড়ে আসা টেক্সট বুকের তত্ত্ব কোন পয়েন্ট আর মনে নেই, কিন্তু সে হয়তো এখনও সেটি মনে রেখেছে। তারা এটা কিভাবে পারে?

এই মানুষগুলোর অসাধারণ স্মৃতিশক্তি নেই। তারা কেবল সক্রিয়ভাবে তথ্য সংরক্ষণ করতে পারে। যেহেতু তারা সক্রিয়ভাবে তথ্য প্রক্রিয়াকরণ করছে, তারা অল্প সময়ের মধ্যে কোন বইয়ের বিবরণ বা সিনেমার দৃশ্যগুলি বারবার রিপিট করে মনে রাখে। তারা তথ্যগুলো নিজেদের মত করে সংশোধন এবং সংশ্লেষণ করে, ফলে এটি তাদের নিজস্ব হয়ে ওঠে।

এটা প্রতিদিন একই রুট ব্যবহার করা এবং একই মানুষের সাথে বারবার দেখা হওয়ার মত। আপনি মানুষটিকে চিনতে শুরু করেন এবং তাদের সম্পর্কে আরো নিরীক্ষণ করতে শুরু করেন কারণ সে ইতিমধ্যে আপনার কাছে পরিচিত। অনুরূপভাবে, আপনার নিউরন সহজেই নতুন কানেকসন তৈরি করতে পারে যখন তাকে কোন কিছু পুনর্বিবেচনার করতে বলা হয় এবং নতুন তথ্য বিশ্লেষণ করতে বলা হয়, নিষ্ক্রিয় হয়ে থাকার পরিবর্তে।

মূল ব্যাপার হচ্ছে পর্যবেক্ষণ রা, সংযোগ স্থাপন করা এবং তারপর এর পুনরাবৃত্তি করা

আপনি যত বেশি সক্রিয়ভাবে কোন বিষয়ের সাথে সংযুক্ত হবেন বা তা গ্রহণ করবেন, আপনি ততো সহজেই সেটি মনে রাখবেন। যেহেতু আপনার নিউরন একই বিষয়কে বারবার রিপিট করে, এটি তাদের জন্য নতুন কানেকশন তৈরি করার ব্যাপারটি সহজ করে তুলে।

এটিকে বনের মধ্যে দিয়ে হাঁটার মত মনে করুন। প্রথমে সেখানে কোন পথ খুঁজে পাবেন, কিন্তু যদি আপনি প্রতিদিন একই পথ ধরে আগান, এক সময় আপনি একটি পথচিহ্ন তৈরি করে ফেলবেন। আপনি যে পথে আগে ধীরে আগাতেন, এখন সে পথে আপনি সহজে এবং দ্রুত আগাতে পারবেন। আপনার মস্তিষ্কও এমন করে আপনার মেমরিগুলো সামলাচ্ছে। আপনি আপনার স্নায়ু জন্য একটি গতানুগতিক রাস্তা তৈরী করতে চান।

আপনার প্রাথমিক মেমরি উপর নির্ভর করবেন না

প্রথমবার যখন আপনি কিছু করবেন, আপনি হয়তো অনেক কিছুই ভুলে যাবেন। আপনার জন্য সবকিছু মনে রাখা সম্ভব না ও হতে পারে কারণ অনেক বেশি নতুন তথ্য আপনাকে প্রসেস করতে হচ্ছে বলে। যখন আপনি সিনেমা দেখেন বা বই পড়েন, তখন আপনি পরে কি ঘটবে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পরতে পারেন। আপনার লক্ষ্য হয়ে উঠবে শেষে পর্যন্ত কি হল তা জানা।

কোন কন্টেন্ট বার বার পুনরাবৃত্তি করা খুবই সহায়ক। আপনি যেহেতু ইতিমধ্যে জানেন কি ঘটতে চলেছে, আপনি এর খুঁটিনাটি বিষয়গুলো ধরতে পারবেন।

বার বার দেখা অথবা পড়া যথেষ্ট নয়

আপনি একই জিনিস বার বার দেখতে পারেন, কিন্তু এর মানে এই নয় যে এটি আপনার মনে থাকবে। বার বার দেখে মনে রাখা (পুনরাবৃত্তি মাধ্যমে মনে রাখা) আপনাকে আপনি যা দেখছেন তার সাথে কোন অর্থপূর্ণ সংযোগ স্থাপন করতে সাহায্য করে না।

কোন কিছু মনে রাখার জন্য, আপনাকে এটি প্রয়োগ করতে হবে। অসাড়ের মত তথ্য গ্রহণ না করে বা বার বার করে মনে রাখার চেয়ে, এটির সাথে কানেকশন তৈরি করা জরুরী। আপনি যদি যা শিখেছেন তা প্রয়োগ করতে পারেন, এর ফিডব্যাক পান এবং সেই ফিডব্যাক থেকে একটি ধারণা নিয়ে পুনরায় প্রয়োগ করতে পারেন, এটি মনে থাকার সম্ভাবনা বেশি।

উদাহরণস্বরূপ, শুধুমাত্র রেসিপি পড়ে আপনি রান্না করা শিখতে পারবেন না। একটি খাবার রান্না কড়া এবং আপনাররা টেস্টবাডের ফিডব্যাক এবং অন্যদের মন্তব্য আপনার মনে থাকবে বেশি। কেউকে ব্যায়াম করতে দেখা এবং এটি নিজে করা এক কথা না। আপনি এটি প্রয়োগ না করা পর্যন্ত এটি কার্যকরী নয়।

আপনি যখন আপনার জীবনের কোন কসেপ্ট বা প্র্যাকটিস প্রয়োগ করেন, তখন কোন তথ্য গ্রহন করা সহজ হয়। মনে করে দেখুন তো আপনার প্রথমবার কাজ যাওয়ার জন্য যে রুট আপনি ব্যবহার করেছিলেন। প্রথমে, আপনাকে সেই রুটটির প্রতিটি ধাপ সম্পর্কে চিন্তা করতে হয়েছে, কিন্তু এখন, আপনি এটি নিয়ে আপনাকে চিন্তাও করতে হয় না। এটা পুনরাবৃত্তি এবং অ্যাপ্লিকেশন সংমিশ্রণ যা আপনার স্নায়ু সাথে সংযোগ স্থাপন করতে পেরেছে।

একটি প্রশ্ন মনে মনে করে রাখুন কোন কিছু পড়া/দেখার আগে

যখন আপনি একটি বই পড়েন বা একটি সিনেমা দেখতে বসেন, আপনার মনে একটি উদ্দেশ্য থাকে। আপনি যদি তা না করে থাকেন, তবে আপনার ডিফল্ট মোড আপনাকে সেই বই বা সিনেমাটির শেষে নিয়ে যাবে। শুরু করার আগে উত্তর চান এমন একটি প্রশ্ন ঠিক করে রাখুন।

উদাহরণস্বরূপ, ‘পাওয়ার অফ হেবিট’ বইটি কোন উদ্দেশ্য ছাড়া পড়া কোন কাজে দিবে না। এটা কোন কাজে দিবে না যদি না কেউ কোন অভ্যাস গড়ে তুলতে প্রস্তুত না হন, বইটি যত ভাল হোক না কেন। অন্য দিকে, যদি আপনি কোন খারাপ অভ্যাস ছেড়ে দিতে চান এবং তারপর পড়া শুরু করেন, আপনি আপনার নিজের জীবনের সাথে আপনি যা পড়ছেন তা কানেক্ট করতে পারবেন।

যখন আপনি কোন বইয়ে আপনার সাথে যায় এমন কোন চাপ্টার বা আইডিয়া খুঁজে পান, তখন এটির সাথে কানেকশন তৈরি কড়া সহজ হয়। এগুলো হাইলাইট করে রাখুন অথবা নোট করুন, ক্লিপ করে রাখুন। হাতে লিখে নোট করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কোন আইডিয়া মনে রাখার।

যারা প্রচুর সিনেমা দেখেন বা প্রচুর বই পড়েন, কিন্তু কিছুই মনে রাখতে পারেন না, তারা শুধু কিছু সময় অপচয় করেন মাত্র। তারা কোন তথ্য গ্রহন করতে পারেন না, যা কিনা আসলে তাদের সাহায্য করবে। আপনি যা দেখেন তা ভুলে যাবার আগে, এটি সাথে সাথে প্রয়োগ করুন এবং ধারণাগুলো বার বার পুনরাবৃত্তি করুন।

দৃঢ় মনোবল রাখুন

আপনি যে এই আর্টিকেলটি পড়ছেন তা আগামীকালের মধ্যে ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনা বেসি, যদি না আপনি এটি সেভ করেন অথবা এটি হাইলাইট করেন বা এটি আপনার জীবনের সাথে সম্পর্কিত হয়ে থাকে। এটি বুকমার্ক করুন এবং এটিতে ফিরে আসুন বারবার যাতে আপনি মনে রাখতে পারেন যা আপনি বিভিন্ন জায়গা থেকে শিখেছেন।

উদ্দেশ্যহীন ভাবে সিনেমা দেখা বা বই পড়া সমযয়ের অপচয় মাত্র। আপনি যা দেখছেন বা পড়ছেন তা থেকে সর্বাধিক উপকার পেতে এর কন্টেন্টের সাথে সংযোগ স্থাপনের চেষ্টা করুন। চিন্তা করুন, আপনি কি হারাতে পারেন, যদি শেখার এই সুযোগ হাত ছাড়া করেন।

www.lifehack.org সাইটে প্রকাশিত আর্টিকেলের ছায়া অবলম্বনে লেখা।

আপনি উদ্যমী!
আপনার জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে চান?  

তাড়াতাড়ি সাবস্ক্রাইব করুন।

আমাদের সেরা কনটেন্ট আপনার ইমেইলে পৌছে যাবে প্রতি সপ্তাহে।  

Invalid email address
আপনি যেকোনো সময় আনসাবস্ক্রাইব করতে পারবেন।  

মন্তব্য করুন