কিভাবে হয়ে উঠবেন সকাল বেলার পাখি

Share

সকালে আপনার দেরিতে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস। সেক্ষেত্রে আপনি কি সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস রপ্ত করতে পারবেন? প্রথমত, হ্যাঁ, এটি সম্ভব। তবে এটি এমন নয় যে, আপনি ৫’৬’’ লম্বা হয়েও একজন পেশাদার বাস্কেটবল খেলোয়াড় হতে চান। সকালে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাসটি এর চেয়েও বেশি কিছু, যা নির্ভর করে আপনার বিশ্বাস এবং নিয়মিত কিছু অভ্যাসের উপর। আপনি সফল হবেন যদি আপনার ইচ্ছাশক্তি দৃঢ় থাকে।

আপনি কেন সকালে ঘুম থেকে উঠতে চান? এর কারন বেশ আকর্ষণীয়। যার মধ্যে কিছু কারন এরকমঃ

  • অধিক অর্থ উপার্জন।
  • অধিক কার্যক্ষম হয়ে ওঠা।
  • স্বাস্থ্যবান শরীর এবং দীর্ঘকাল বেঁচে থাকা।
  • সুখী থাকা এবং জীবনে সন্তুষ্ট থাকা।

কিন্তু সকালে দেরিতে ঘুম থেকে ওঠা একজন ব্যক্তি কিভাবে এই অভ্যাসটি আয়ত্ত করবে? নিচে এমন ৯ টি নিয়ম দেওয়া হল যা আপনি আজ থেকেই শুরু করতে পারেন।

১) আপনার জীবনের গল্পটি পরিবর্তন করুন

অনেক মানুষই বলে থাকেন যে, “আমি সকালে ঘুম থেকে ওঠার মত মানুষ নই,” ব্যাপারটা এমন যে এটার পরিবর্তন কোনভাবেই সম্ভব নয়। কিন্তু আসলেই কি এর পরিবর্তন সম্ভব নয়? এমন যদি হয় যে আপনি আবিষ্কার করেন যে এটা হলো শুধুই পছন্দ এবং বছরের পর বছর অনুশীলনের ফল? আপনি আপনার জীবনের এই গল্পটিকে পরিবর্তন করতে পারেন, এবং নিজেকে সকালে ঘুম থেকে উঠতে পারা একজন ভাবতে পারেন। মূলত আমরা আমাদের আচরণকে আমাদের জীবনের গল্পের সঙ্গে অভ্যস্ত করে ফেলি।

২) কি হারাচ্ছেন তা বের করুন

যখনি আমি আমার জীবনের কোন কিছু পরিবর্তন করতে চাই অথবা একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য অর্জন করতে চাই, সেক্ষেত্রে আমি নিজেকে আগে প্রশ্ন করি যে “কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ।” আপনি একটুকরো কাগজে লিখুন সকালে ঘুম থেকে ওঠার উপকারিতা এবং এর সঙ্গে লিখুন সকালে ঘুম থেকে না ওঠার অপকারিতা। অনুপ্রাণিত হয়ে কাজটি করলে আপনি সফল হবেন। মূলত আপনি যখন হতাশ হয়ে পরবেন তখন এটি আপনাকে অনুপ্রাণিত করবে।

৩) পরিকল্পনা করে ঠিক করুন ঘুমের সময়   

আপনাকে সফল হতে হবে এমন একটি চিন্তা মাথায় রেখে আপনাকে অভ্যাস পরিবর্তনের পথে আগাতে হবে। হয়তো আপনি এখন একটু দেরিতে ঘুমাতে যান যা কিনা আপনার প্রয়োজনের চেয়ে কম ঘুমের কারণ। সুতরাং আপনাকে পরিকল্পনা করে ঘুমের সময় ঠিক করা লাগবে, উদহারনসরূপ যদি আপনি জানেন যে আপনার ৭ ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন এবং আপনাকে ভোর ৫ টার মধ্যে ঘুম থেকে উঠতে হবে, সেক্ষেত্রে আপনি সেভাবে ঘুমাতে যাওয়ার একটি সময় নির্ধারণ করতে পারেন।

৪) অ্যালার্ম ব্যবহার করুন

টানা এক বছর সকালে ঘুম থেকে ওঠার কারনে এটি আমার কাছে একটি নিয়মিত  অভ্যাসে পরিণত হয়ে গিয়েছে। আমি অ্যালার্ম ছাড়াই সকাল ৫ টায় ঘুম থেকে উঠে যেতাম। এটা একটা অদ্ভুত ব্যাপার, আমার সকালে ঘুম থেকে ওঠার দরকার না পরলেও আমার ঘুম কিন্তু ঠিক সময়ে ভেঙে যায়। তবে আপনি যদি দেরি করে ঘুম থেকে ওঠা ব্যাক্তি হয়ে থাকেন তবে আপনি অ্যালার্ম ব্যাবহার করতে পারেন। এটি আপনাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে সকালে ঘুম থেকে ওঠা ব্যক্তি হিসেবে তৈরি হতে সাহায্য করবে। আপনি আপনার স্মার্ট ফোনের অ্যালার্ম ব্যবহার করতে পারেন, এবং ফোনটি পাশের ঘরে বা দূরে কোথাও রাখতে পারেন যাতে আপনার অ্যালার্মটি বন্ধ করতে হলে বিছানা ছেড়ে উঠতে হয়।

৫) সমস্ত লাইট অন করুন

আশপাশের পরিবেশর সাথে আপনার দেহের একটি গভীর সম্পর্ক আছে, দেহ জানে কোন পরিবেশে কেমন আচরণ করতে হবে। যখন চারপাশ অন্ধকার হয়ে যায় তখন আপনার দেহ স্বাভাবিকভাবেই ঘুমের জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকে (যদিনা আপনি অন্য কোন পরিকল্পনা করেন)। তেমনই যখন আলো জ্বলে উঠে তখন আপনার ঘুম ভেঙে যাওয়ার প্রবণতা দেখা দেয় বা ভেঙে যায়। যদি আপনি এই পন্থাটি কাজে লাগাতে চান এবং দেহকে জানাতে চান যে এখন বিছানা থেকে ওঠার সময় হয়েছে তবে ঘরের সমস্ত লাইট অন করে দিন।

৬) আপনার জামাকাপড় গুছিয়ে রাখুন

ঘুম ভাঙ্গার পরেও আপনি ঘুমে টলতে থাকেন, একটা অলস ভাব কাজ করে। সেক্ষেত্রে আপনি ঘুমাতে যাওয়ার আগে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন যে সকালে ঘুম থেকে উঠে আপনি কি করবেন। যদি সকালে ঘুম থেকে উঠে দ্রুত আপনার পোশাক পরিধান করতে পারেন তবে ঘুমের জড়সড় ভাবটা দ্রুত চলে যাবে। যেহেতু আমি সকালে ব্যায়াম করি, তাই রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগেই আমি আমার জামাকাপড় গুছিয়ে রাখি, এমনকি আমার জুতাও। ফলে সকালে উঠে আমি শুধু এগুলো পড়ি, আমাকে আর সময় নিয়ে খুঁজে খুঁজে বের করে পড়তে হয় না।

৭) এক কাপ কফি খেতে পারেন

বিভিন্ন সময়ে,আমি আমার খাদ্য তালিকা থেকে কফি বাদ দিয়েছি। যাই হোক,যথেষ্ট গবেষণা করার পরে,আমি বিশ্বাস করি এটা উপকারী।

৮) জবাবদিহি করা যায় এমন একজনকে খুঁজে নিন

পরামর্শদাতা হোক কিংবা জীবনসঙ্গী,এমন একজনকে খুঁজে নিন যে জবাবদিহিতার  মর্ম বুঝবে। তাকে আপনার লক্ষ্যের কথা খুলে বলুন,এবং কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ সেটাও বুঝিয়ে বলুন। আর তার নির্দেশ মত চলুন। আমি যখন কলেজে ছিলাম, তখন আমি এবং আমার এক বন্ধু ক্লাসের পড়াশুনার জন্য সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরিকল্পনা করেছিলাম। আমরা একে অন্যকে ভোর ৫ টার সময় ডেকে দিতাম যাতে নিশ্চিত হওয়া যায় যে আমরা দুজনেই ঘুম থেকে উঠেছি। তার ফলে আমরা খুব ভাল করেছিলাম ক্লাসে।

৯) ২১ দিনের একটি পরিকল্পনা করুন

আমি পরামর্শ দিচ্ছি,যদি আপনি নিয়মিত সকালে ঘুম থেকে ওঠা আয়ত্তে আনতে চান তবে তিন সপ্তাহের একটি পরিকল্পনা করুন। তবে গবেষণা বলে এর চাইতেও বেশি সময় লাগবে তবু ৩ সপ্তাহ অনেক সময় একটি সঠিক নিয়মের মধ্যে নিজেকে নিয়ে আসার জন্য। যদি সফল না হন তবুও একবার চেষ্টা করে দেখুন,আর যদি সফল হয়ে যান তবে চিন্তা করুন,বাকি জীবনের জন্য কত ভাল কিছু অপেক্ষা করছে আপনার জন্য।

সত্যি কথা বলতে কি, সকালে ঘুম থেকে জাগাটাই এখানে মূল বিষয় নয়,মূলত আমি চাই আপনারা অনুধাবন করুন যে আপনারা নিজেদেরকে যতটা শক্তিশালী মনে করছেন তার চেয়েও বেশি শক্তিশালী আপনারা।

আপনাকে আপনার পুরনো অভ্যাসের গণ্ডীতে আটকে থাকতে হবে না। আপনার যদি উদ্দেশ্য ঠিক থাকে,তবে আপনি সঠিক লক্ষ্যে পৌছানোর জন্য প্রয়োজনীয় অভ্যাসগুলো বদলে নিতে পারবেন- এমনকি সেটা একজন সকালে ঘুম থেকে ওঠা ব্যক্তি হওয়ার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

লিখেছেন মাইকেল হায়াট।

www.michealhyatt.com সাইটে প্রকাশিত আর্টিকেলের ছায়া অবলম্বনে লিখিত।     

আপনি উদ্যমী!
আপনার জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে চান?  

তাড়াতাড়ি সাবস্ক্রাইব করুন।

আমাদের সেরা কনটেন্ট আপনার ইমেইলে পৌছে যাবে প্রতি সপ্তাহে।  

Invalid email address
আপনি যেকোনো সময় আনসাবস্ক্রাইব করতে পারবেন।  

মন্তব্য করুন