কিভাবে নিজেকে ও জীবনকে নিয়ে ভালোবোধ করবেন
আমরা প্রায়ই আমাদের জীবনে ঘটে যাওয়া “ভালো” ও “খারাপ” জিনিস নিয়ে চিন্তা করি। আমরা ভাবি, “আমার সাথেই কেন এমন হলো?” এই কথাগুলো আমরা অনেকবার শুনেছি-“যা যায় তা একসময় ফিরে আসে।” “আপনি অন্যদের সাথে যা কিছু করবেন তা আপনার কাছেও ফিরে আসবে।” তবু দিনশেষে নিজের জীবনটা সচেতনভাবে কাটানোর জন্য আমরা কতটুকু সময়ইবা নিয়ে থাকি?
তাছাড়া দিনের মধ্যে বেশ কয়েকবার থেমে নিজের কাজের পর্যালোচনা করাটাও বেশ কষ্টসাধ্য একটা কাজ, বিশেষ করে বর্তমানের এই দ্রুতগতির বিশ্বে। তবু আপনি যদি আশেপাশে তাকান ও মনোযোগী হন, দেখতে পাবেন- এই মহাবিশ্ব একটা ভালো কর্মফল গড়ে তোলার জন্য প্রতিদিনই আপনাকে বেশ কিছু সুযোগ দিচ্ছে। এখানে বিভিন্ন ধর্মে উল্লেখিত কর্মফলের কথা বলা হচ্ছে না। বরং কর্মফলটাকে দেখা হচ্ছে অনেকটা শক্তি বিনিময়ের মতো। প্রতিটি চিন্তা, শব্দ ও কাজ মহাবিশ্বে শক্তি প্রদান করে। এই তত্ত্ব অনুযায়ী, আমাদের উচিৎ মহাবিশ্বে যত বেশি সম্ভব পজিটিভ চার্জ অবমুক্ত করা, যেহেতু সেগুলো আবার আমাদেরই কাছে ফিরে আসবে।
সেইসব সময়ের কথা মনে করে দেখুন- যখন আপনি যাওয়ার জন্য কোনো পথচারীকে রাস্তা ছেড়ে দিয়েছিলেন, কিংবা বাসে আরো উপযুক্ত কারো জন্য নিজের সিটটি ছেড়ে দিয়েছিলেন। যখন আপনি রাস্তায় নামেন, আপনি কি কখনো এমন কাউকে লক্ষ্য করেছেন- যে কিনা অপরিচিত রাস্তা চেনার ব্যাপারে আপনার দুই-এক মিনিটের সাহায্য পেতে পারে? আপনি কি কোনো বয়স্ক মানুষকে কোথাও থেকে বের হতে দেখে দরজা খুলে ধরেছিলেন? রেস্টুরেন্টের ওয়েটার যদি আপনার অর্ডার করা খাবারগুলো ঠিকঠাক পরিবেশন করতে না পারে কিংবা ক্যাশিয়ার টাকা গুনতে কিছুটা বেশি সময় নেয়, আপনার বলা কথাগুলোতে কি তখনো কিছুটা নরম সুর থাকে? নিজের অধীনস্থ বা সহকর্মীদের সাথে কি আপনি নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলেন, যেন তারা আরো ভালো কাজ করতে পারে? সেই সময়ের কথা ভেবে দেখুন- যখন আপনি তর্কটা বুঝতে পেরে পরিস্থিতিকে শান্ত হতে দিয়েছিলেন, কেননা আপনি জানতেন আপনি এটা অন্য আরেকজনের চেয়ে বেশি ভালো পারবেন। কিংবা আরো গভীরভাবে, কখনো কোনো পোকামাকড় বিরক্ত কবলে আপনি তাদের সরিয়ে দেন শুধু, মেরে ফেলেন না। কারণ তাদের মধ্যকার জীবনকে আপনি ভালোবাসেন।
উপরের সবগুলো ঘটনাতে একটা ব্যাপারে মিল আছে। আমরা প্রতিটা দৃশ্যেই অন্য আরেকটা জীবনকে আরেকটু সহজ করার জন্য সাহায্য করেছি। আপনি যদি নিজের জীবনের কোনো প্রচণ্ড দু:সময়ের কথা ভাবেন এবং ঠিক তখন যদি কেউ একজন আপনার যন্ত্রনা কিছুটা কমিয়ে আনতে এগিয়ে আসতো, এটা কল্পনা করে ভালোবোধ করেন- কাউকে সাহায্য করতে এরপর থেকে আপনি আর দ্বিতীয়বার ভাববেন না। এবং এর ফলে তাদের অন্তর থেকে শক্তির যে বিকিরণ হবে, তা আপনাকে আশীর্বাদ করবে, পথ দেখাবে ও আপনার জীবনের প্রতিটি দিন সুরক্ষা করবে। হ্যাঁ, এটা ঠিক যে-প্রতিদানের কথা ভেবে উপকার করা উচিৎ নয়। কিন্তু এটা প্রতিদানের চেয়েও মহৎ আর উত্তম কিছু। সুতরাং দেখতেই পাচ্ছেন-প্রতিদিনকার জীবনের জন্য অনেক রকম পথ থাকতে পারে, যদি আমরা ব্যাপারটা ভালোবাসার জায়গা থেকে দেখার সিদ্ধান্ত নিই।
আর আপনি যদি এমনটা চালিয়ে যেতে থাকেন, নিজেই নিজের ভেতরের শক্তির তারতম্য অনুভব করবেন। নিজের ও নিজের জীবনের সম্পর্কে ভালোবোধ করবেন। দেখবেন এমন কোনো পথ ঠিকই তৈরি হয়ে গেছে যেখানে আগে কিছুই ছিলো না। আপনি বিশ্বাস করতে শুরু করবেন যে, সবকিছুই আপনার অনুকূলে যাচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা- আপনি কোনো ভয়ে থাকবেন না। কারণ নিজের কর্মফল নিয়ে আপনি যথেষ্ট আত্নবিশ্বাসী।
লিখেছেন নাতাশা চেন।
www.goalcast.com সাইটে মূলত প্রকাশিত।
মন্তব্য করুন