কাজের পর যে ১৫টি অভ্যাস আপনাকে সুখী করবে

Share

একটা দীর্ঘসময় ধরে আমি প্রতিদিন কাজ থেকে ফিরেই টেলিভিশনের সামনে বসে যেতাম। এটা ছিলো খুবই নির্বোধ ধরণের একটা কাজ- সারাদিনের মিটিং, ঘাড়গোঁজা কাজ আর ইমেইলের শেকলের মধ্য থেকে ফিরে, আমি শুধু ভাবতাম যে আমি আমার প্রিয় সিরিয়ালের কয়েক পর্ব দেখতে চাই- যেগুলো এর আগে আমি আরো অসংখ্যবার দেখেছি।

কিন্তু গতবছর আমি উপলব্ধি করলাম যে- সবসময়ই আমি ক্লান্তি বা মাথাব্যথা নিয়ে দিন শেষ করছি। এছাড়া আমার ঘুমও ভালো হচ্ছিলো না। তাই আমি একটা পরীক্ষা করে দেখতে চাইলাম। অবসরে টেলিভিশন চালু করার বদলে আমি একটা বই তুলে নিলাম।

ফলাফলটা ছিলো অভাবনীয়। কাজের পরও আমার প্রচুর শক্তি থাকতো, এমনকি পরের দিনও। এবং আমি ২০১৭ সালে ২৩টা বই পড়ে ফেললাম, যেখানে আগের বছর সবমিলিয়ে ১০টি বই পড়েছিলাম। সবচেয়ে বড় কথা আমি আয়েশ করার এমন একটা পথ খুঁজে পেলাম যা আমার নিজেকে একজন অলস মানুষ ভাবার হাত থেকে মুক্তি দিলো।

তাই আমি যখন কোয়ার্টজ’র সাম্প্রতিক একটা প্রবন্ধে টেলিভিশন বা কম্পিউটারের পর্দায় কোনো কিছু দেখা কিভাবে আমাদের অসুখী করে তোলে- এটা দেখতে পেলাম, আমার বেশ একটা আনন্দ হয়েছিলো।

দীর্ঘসময় টেলিভিশন দেখা কিংবা মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকাটা যে আপনার জন্য ভালো না- এটা বেশ পুরনো কথা। কিন্তু সাম্প্রতিক আরো কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে, পর্দার সাথে সম্পর্কহীন যেকোনো কাজই আপনাকে পর্দা সংশ্লিষ্ট কাজ থেকে বেশি সুখী করে।

প্রবন্ধটাতে উল্লেখিত একটা গবেষণা উল্লেখ করা হলো:

দেখা গেছে যে- যেসব কিশোর তাদের বন্ধুদের সরাসরি দেখে, ব্যায়াম করে, খেলে, ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যায়, এমনকি হোমওয়ার্ক করে- তারাই বেশি সুখী। অন্যদিকে যেসব কিশোর ইন্টারনেটে, কম্পিউটারে গেমস খেলে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মেসেজিং, ভিডিও চ্যাট বা  টেলিভিশন দেখে; অপেক্ষাকৃত কম সুখী।

তাই যে ব্যাপারটা আমাকে ভাবালো- যেকোনো ধরণের পর্দাকে এড়িয়ে চলাটাই যদি বেশি সুখী করে, তাহলে সারাদিনের কাজের শেষে আপনি আর কি কি করতে পারেন?

আপনার যদি মনে না পড়ে, তার জন্য আমি ১৫টি কাজ যা আপনি দিন শেষে করতে পারেন তা উল্লেখ করছি:

) পড়া

এটা আমার বেলায় কাজ করেছিলো। বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য সাহিত্য ও ক্যারিয়ার বিষয়ক বই আছে, যেখান থেকে আপনি পড়া শুরু করতে পারেন।

) পডকাস্ট শোনা

এটা ঠিক যে এর জন্য প্রযুক্তি দরকার। কিন্তু একবার চালু করে দেবার পর আপনার কাজ হবে শুধু আরাম করে বসা, চোখ বন্ধ করা ও শোনা।

) কোনো বন্ধুকে কল করা

যার সাথে অনেকদিন দেখা হয়নি এমন কোনো বন্ধুকে কল করুন। আপনাদের কথাবার্তা কোনদিকে যাবে আপনি চিন্তাও করতে পারবেন না।

) সামনাসামনি দেখা করা

কাজ শেষ করে সাথে সাথেই বাড়ি না ফিরে কারো সাথে দেখা করুন, তারপর একসাথে হালকা বা রাতের খাবার খেতে পারেন। শুধু এই সময়ে ফোনটা যেন দূরে থাকে ও তারা যেন সর্বোচ্চ মনোযোগ পায়- সেটা খেয়াল রাখবেন।

) লেখা

একটা ব্লগ শুরু করুন, প্রবন্ধ লিখুন ও সেটা লিঙ্কডইন, জার্নালে প্রকাশ করুন। খুব আহামরি কোনো কিছু করা নিয়ে ভাববেন না। শুধু নিজের ভাবনাগুলো কাগজে ধরে ফেলুন। নিজের ঝরঝরে ভাব দেখে আপনি নিজেই অবাক হয়ে যাবেন।

) রান্না করুন

নতুন কোনো রেসিপি রান্না করার চেষ্টা করতে পারেন। আর যদি নিজের তৈরি খাবার অফিসে নিয়ে আসেন, সহকর্মীরা নিশ্চিতভাবেই আপনাকে ভালোবাসবে।

) ধ্যান করুন

এর জন্য আপনার সবটুকু অবসর সময়ের প্রয়োজন হবে না। ১০-৩০ মিনিট সময় আলাদা করে রাখুন- যেন ঘরে ফিরে কিংবা ঘুমোতে যাবার আগে মনটাকে শান্ত করতে পারেন।

) নিজের ঘর পরিষ্কার করুন

রান্নাঘরে এটো থালা-বাসন পড়ে আছে? একমাস হয়ে গেছে মেঝে মোছেননি? কাপড় ইস্ত্রি করতে হবে? ফ্রিজের খাবার নষ্ট হয়ে যাচ্ছে? কাজের পরের সময়টায় নিজের টুকটাক কাজ সেরে ফেলতে পারেন- অন্তত একটি। এটা শুধু ধ্যান করারই একটা ভালো উপায় না, এর ফলে আপনার ছুটির দিনগুলো হয়ে উঠবে আরো আনন্দদায়ক।

) ব্যায়াম

সকালে ওঠার অভ্যেস নেই? টেলিভিশনের বদলে ইয়োগা ক্লাস বা অনলাইনের ব্যায়ামের ভিডিও ক্লাস নিন। নিজেকে আপনার একজন বিজয়ী মনে হবে।

১০) হাঁটতে বের হন

ব্যায়াম যদি আপনার পছন্দের কিছু না হয়, আপনার এলাকার একটা শান্ত পথ দিয়ে কিছুটা হেঁটে আসুন। এসময় গান শুনতে পারেন কিংবা কোনো বন্ধুকে সাথে নিয়ে নিতে পারেন।

১১) একটা আর্ট প্রজেক্ট করুন

আপনার কি রঙ করার বই আছে? ওটাকে কাজে লাগান। পেইন্ট করা বা দড়ি বোনা শিখতে চান? এখনই চেষ্টা করার সবচেয়ে ভালো সময়।

১২) পোষা প্রাণীর সাথে খেলুন

এটা বেশ ভালো একটা ব্যাপার। যদি আপনার কোনো পোষা প্রাণী থাকে- তাকে কিছুটা ভালোবাসা দিন। আমি নিশ্চিত- তারা ব্যাপারটা বেশ ভালোভাবে কাজে লাগাবে।

১৩) নিজেকে সময় দিন

নিজেকে সুন্দর দেখতে চাইলে নখে নকশা কিংবা মুখে ফেসমাস্ক ব্যবহার করতে পারেন। কিংবা করতে পারেন আরো অনেক কিছুই। আপনি কঠিন পরিশ্রম করেন, তাই নিজেকে কিছুটা একান্ত সময়- কেন নয়?

১৪) ধাঁধা মেলান

নিজের মনকে একটা সত্যিকারের ধাঁধা মেলাতে দিন। কিংবা একা একা সলিটারি খেলুন। আপনার যদি রুমমেট থাকে, একসঙ্গে বোর্ড গেমও খেলতে পারেন।

১৫) একটা লিস্ট বানান

লিস্টটা যেকোনো কিছু নিয়েই হতে পারে। হয়ত আপনি সপ্তাহের মুদির হিসেবটা মিলিয়ে নিতে চাচ্ছেন। কিংবা কাজ করার জন্য নিজের পছন্দের কোম্পানিগুলোর একটা তালিকা করলেন। বা নিজের নতুন বছরের প্রত্যাশাগুলো মিলিয়ে নিলেন। সময় নিয়ে সেগুলো লিখে ফেলুন। তারপর এগুলো বাস্তবায়ন করার একটা পরিকল্পনা করে ফেলুন। এটা নিজেকে উজ্জীবিত করার একটা ভালো উপায়।

এই বিষয়গুলো যেন আপনার মনে থাকে সেজন্য আপনি এই লিস্টটি প্রিন্ট করে যেখানে আপনার চোখ সবসময় যায় সেখানে আটকে রাখতে পারেন। আপনি যেই হন না কেন, যে বিষয়েই আগ্রহী হন না কেন- এরমধ্যে যেকোনো একটা আপনাকে নিশ্চিতভাবেই সুখী হতে সাহায্য করবে।

themuse.com- এ পূর্ব প্রকাশিত।

আপনি উদ্যমী!
আপনার জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে চান?  

তাড়াতাড়ি সাবস্ক্রাইব করুন।

আমাদের সেরা কনটেন্ট আপনার ইমেইলে পৌছে যাবে প্রতি সপ্তাহে।  

Invalid email address
আপনি যেকোনো সময় আনসাবস্ক্রাইব করতে পারবেন।  

মন্তব্য করুন