আপনার সর্বোচ্চ প্রোডাক্টিভিটি নিশ্চিত করতে দৈনন্দিন রুটিন

Share

Image Source: medium.com

কাজের পূর্বে

১) আগের রাতেই পরের দিনের কাজগুলোর পরিকল্পনা তৈরি করে রাখুন

এটিকে পরিকল্পনার ধাপ হিসেবে নিন। এই সময়টাতে ফাঁকে ফাঁকে আপনি আপনার দিনটাকে সাজিয়ে নিতে চেষ্টা করতে পারেন, দিনটিকে কযেকটি ব্লকে ভাগ করুন এবং প্রতিটি ব্লকের জন্য একটি কাজ বরাদ্দ রাখুন। এটিকে সাধারণত টাইম ব্লকিং পদ্ধতি বলা হয়। এই পদ্ধতি অনুসারে কাজ করার ফলে আপনি যেন শেষমেশ বহুমাত্রিক কাজে জড়িয়ে না যান, তা নিশ্চিত করে এবং এর ফলে আপনার প্রোডাক্টিভিটির  উপর কোন নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না।

) এমন একটি সময়ে জেগে উঠুন, যেটি আপনার জন্য উপযুক্ত (এবং প্রতিদিন এই একই সময়সূচী মেনে চলুন)

প্রায়ই মনে করা হয় যে সবচেয়ে উৎপাদনশীল বা সৃজনশীল লোকেরা খুব ভোরে ঘুম থেকে ওঠেন এবং সন্ধ্যে পর্যন্ত কাজ করতে থাকেন। কিন্তু ৯-৫টার কর্মদিবস সবার সাথে নাও মিলতে পারে।

আমি বলছি না যে এই মানুষগুলো কম কাজ করে, কিন্তু যে ব্যক্তি ১০-৬ টা  পর্যন্ত কাজ করে, তিনি ৯-৫টা পর্যন্ত কাজ করা লোকেরই সমান কাজ করেন। এবং অতিরিক্ত এই একঘণ্টা বিছানায় কাটানোর মানে হলো তারা আরো বেশি সতেজ এবং কর্মোদ্দীপ্ত।

প্রায় সময়ই আপনি যখন ইচ্ছে ঘুম থেকে উঠতে পারেন না, সর্বোপরি, যদি আপনার কাজ ৯টা বাজে শুরু হয়, তবে আপনি ততক্ষণ পর্যন্ত বিছানায় থাকতে পারবেন না। কিন্তু যদি আপনার সময়সূচী কিছুটা নমনীয় হয়, তবে আপনি বেছে নিন—কোনটা আপনার জন্য সবচেয়ে বেশি উপযুক্ত।

) ভালো করে নাস্তা করুন

একবার ঘুম থেকে উঠে পড়ার পর, ভালো করে খাওয়া দাওয়া করা খুবই জরুরি।  আপনার এমন কিছু খাবার খাওয়া দরকার, যা আপনার কর্মশক্তিকে ত্বরান্বিত করবে এবং পুরোটা সময় আপনাকে উদ্যমপূর্ণ করে রাখবে।

কাজের সময়

Image Source: medium.com

) একটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও নিশ্ছিদ্র মনোযোগপূর্ণ কাজের জায়গা বেছে নিন

কয়েক বছর আগে, প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অধ্যয়নে দেখা যায় যে, যদি কর্মক্ষেত্রে আপনার দৃষ্টিসীমায় অনেক বেশি দৃষ্টি উদ্দীপক বস্তু থাকে, তবে আপনার মস্তিষ্ক প্রতিটি বস্তুর দিকে আলাদাভাবে মনোযোগ বা ফোকাস দেয়। অন্য কথায়, যদি আপনার ডেস্ক অনেক বেশি অগোছালো হয়ে থাকে, তবে কাজের দিকে নিরবচ্ছিন্ন মনোযোগ ধরে রাখা মুশকিল হয়ে পড়বে।

শুধুমাত্র আপনার ডেস্কটি পরিষ্কার করে ফেলার মাধ্যমেই আপনি আপনার মূল লক্ষ্যের প্রতি মনোযোগী হতে পারবেন এবং এরই সাথে আপনার প্রোডাক্টিভিটিও বজায় থাকবে।

) প্রথমেই ইমেইল চেক করবেন না

সকালগুলো সেসব উৎপাদনশীল কাজের জন্য উপযোগী, যেগুলোতে মনোযোগ, সৃজনশীলতা এবং বুদ্ধি খাটানোর বিষয় রয়েছে। ইনবক্স পরিষ্কার করার মাধ্যমে আপনার মনে অর্জনের একটি মিথ্যা অনুভূতি হবে এবং এতে করে কম সক্রিয় কাজগুলোতে আপনার মস্তিষ্ক অনেক বেশি জড়িয়ে পড়বে। এতে করে দেখা যাবে, আপনি হয়তো অনেকগুলো ইমেইল পড়ে ফেলেছেন, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই করেননি।

যদি না আপনার কাজটি ইমেইল চেক করা আর এর জবাব দেয়ার মধ্যেই ঘুরপাক খায়, তবে কখনোই কাজে গিয়ে ইমেইল চেক করাকে আপনার প্রথম কাজ হিসেবে রাখবেন না। এর পরিবর্তে, আপনার লক্ষ্যগুলোর দিকে মনোযোগী হন এবং তা-ই করুন, যা সত্যিই দরকার।

) সবচেয়ে কঠিন কাজটি দিয়েই শুরু করুন

আপনার কর্মদিবসটি সবচেয়ে কঠিন অথবা সবচেয়ে ক্লান্তিকর কাজটি দিয়েই শুরু করুন, এটি সম্পন্ন করবার মাধ্যমে আপনি অন্য কাজের জন্য উৎসাহিত বোধ করবেন।

এ থেকে সুবিধা পাওয়া খুবই সহজ হবে। এরপর যদি আপনি খুব কম কাজও করেন, তাও আপনার ভালো লাগবে যে সেদিন আপনি বেশ গুরুত্বপূর্ণ কিছু করেছেন। এছাড়াও, সবচেয়ে কঠিন কাজটি সবার আগে করার ফলে অন্য সবকিছুই আপনার কাছে সহজ মনে হবে।

) একটু ঘুমিয়ে নিন অথবা মেডিটেশন করুন

একটি রুটিন তৈরি করার সময়, বিশ্রামের মতো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ভুলে যাওয়া খুবই স্বাভাবিক। কোনো মানুষই প্রতিদিন বিরতিহীনভাবে সারাটা দিন ধরে কাজ করতে পারে না। যদি বিশ্রামকে আপনার রুটিনে অন্তর্ভুক্ত না করেন, তবে আপনার সব শক্তি ও উদ্যম একসাথে ফুরিয়ে যেতে পারে। এতে করে আপনার সমগ্র উৎপাদনশীলতা শেষ হয়ে যাবে। এই ক্ষতিটি এড়ানো যেতে পারে যদি আপনি বিশ্রাম গ্রহণ নিশ্চিত করতে পারেন।

এই কাজটি করার জন্য একটি উপায় হলো কাজ বন্ধ করার জন্য উপযুক্ত সময় নির্ধারণ করা, অন্যটি হলো খুব কম সময়ের জন্য ঘুমানো বা বিছানায় গড়িয়ে নেওয়া, মেডিটেশন বা ধ্যান করাও একটি ভালো উপায় হতে পারে। আপনার পছন্দের উপর বাকিটা নির্ভর করে।

) অকারণ অনুরোধে ‘না’ বলুন

এই তালিকায় এটিই সবচেয়ে কঠিন কাজ বলে মনে হতে পারে, কিন্তু এটি সবচেয়ে কার্যকর ধাপগুলোর একটি। আপনার নিয়মিত কাজের মধ্যে অতিরিক্ত বোঝা বাড়ানো তাক্ষণিকভাবেই আপনার রুটিন বিগড়ে দিতে পারে, এবং এতে করে প্রতিদিনকার প্রোডাক্টিভিটিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

তাই প্রত্যাখ্যান করা বা অতিরিক্ত কাজের ক্ষেত্রে না করা (যেগুলো অকারণ বা অদরকারি) প্রোডাকটিভ হবার ক্ষেত্রে চাবিকাঠি হতে পারে। যা-ই হোক, একটি কাজ ভালোভাবে করা অনেকগুলো কাজ খারাপভাবে করার চাইতে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

কখনো কখনো আপনাকে হয়তো ‘হ্যাঁ’ বলতে বাধ্য করা হবে এবং আপনি নতুন কাজ করতে রাজিও হবেন, কিন্তু সবসময় এমনটা হলে চলবে না। কখনো কখনো ‘না’ বলতেও শিখুন।

) সময়মতো কাজ শেষ করুন

নির্দিষ্ট কাজে মনোযোগ ধরে রেখে, আপনি কখনো অতিরিক্ত ক্লান্ত বা উত্তেজিত বোধ করবেন না, যেহেতু আপনার সবটা নিয়ন্ত্রণ আপনার হাতেই। এবং যেহেতু আপনার সব কাজ পরিকল্পনামাফিক চলছে, অপ্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত না নিয়ে আপনি অনেকগুলো শক্তি সঞ্চয় করে রেখেছেন।

যেহেতু এখন আপনার সবচেয়ে কঠিন কাজগুলো করে ফেলার কথা, এতে করে দিনের বাকিটা অংশ সহজ হয়ে যাবে।

www.lifehack.org সাইটে প্রকাশিত আর্টিকেলের ছায়া অবলম্বনে লেখা।  

আপনি উদ্যমী!
আপনার জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে চান?  

তাড়াতাড়ি সাবস্ক্রাইব করুন।

আমাদের সেরা কনটেন্ট আপনার ইমেইলে পৌছে যাবে প্রতি সপ্তাহে।  

Invalid email address
আপনি যেকোনো সময় আনসাবস্ক্রাইব করতে পারবেন।  

মন্তব্য করুন